বিশ্ব শরণার্থী দিবস ২০২১: রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অদম্য প্রত্যয়

আরটিভি নিউজ

রোববার, ২০ জুন ২০২১ , ০৮:২৪ পিএম


ছবি সংগৃহীত
ছবি সংগৃহীত

বলপ্রয়োগে বাস্তুচ্যুতির হার সারা বিশ্বে বছরের পর বছর ধরে বেড়েই চলছে। কোভিড-১৯ মহামারীতেও ২০২০ সাল শেষে সারা বিশ্বে যুদ্ধ, সহিংসতা, নিপীড়ন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন থেকে পালিয়ে বেড়ানো গৃহহীন মানুষের সংখ্যা প্রায় ৮ কোটি ২৪ লক্ষে এসে দাঁড়িয়েছে। এটি একটি রেকর্ড সংখ্যা। এর মধ্যে বেশির ভাগ মানুষ নিজ দেশের ভেতরে আভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হলেও সারা বিশ্বজুড়ে প্রায় দুই কোটির বেশি মানুষ শরণার্থী হয়েছে; এবং সংঘাত ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে নিজ দেশ ছেড়ে পার্শ্ববর্তী দেশে আশ্রয় নিয়েছে। এই দুই কোটি মানুষের প্রায় ৫ শতাংশ মানুষ আজ বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের উদারতার কারণে আশ্রয় পেয়েছে।

বিজ্ঞাপন

রোববার (২০ জুন) এই বিশ্ব শরণার্থী দিবসে আমরা মুগ্ধ হই শরণার্থীদের অদম্য প্রত্যয় দেখে, বিশেষ করে এই চলমান বৈশ্বিক মহামারীতেও। শরণার্থীরা সাধারণ পরিস্থিতিতেই অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়। তবে গত এক বছর তাদের জন্য ছিল আরও অনেক কষ্টকর এবং বিভিন্ন নতুন প্রতিবন্ধকতায় পূর্ণ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কোভিড-১৯ এর টিকার মত মৌলিক কিছু সেবার অপ্রাপ্তি।

এই বছরের বিশ্ব শরণার্থী দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘সুস্থ হই একসাথে, শিখি আর আলো ছড়াই’। এই দিনটি উদযাপন করতে ইউএনএইচসিআর-এর বাংলাদেশে নিযুক্ত শুভেচ্ছাদূত জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী ও অভিনেতা  তাহসান খান কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেন এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কাছ থেকে তাদের জীবন সম্পর্কে জানতে পারেন।

বিজ্ঞাপন

কোভিড-১৯ মহামারীর শুরু থেকেই কক্সবাজার জেলায় গড়ে তোলা বিভিন্ন করোনা চিকিৎসা কেন্দ্রে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা ও স্থানীয় বাংলাদেশী জনগণ সমানভাবে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হচ্ছে। আজকের শরণার্থী দিবসে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ইউএনএইচসিআর-এর সহায়তায় নির্মিত প্রথম আইসিইউ (ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট বা নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র)-এর এক বছর পূর্ণ হয়েছে। গত এক বছরে এই আইসিইউ-তে মোট ছয়শ ষাটেরও বেশি বাংলাদেশী ও রোহিঙ্গা শরণার্থী রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। এই আইসিইউ’র রোগীদের ডায়াগনস্টিক সেবা দেয়ার জন্য ২৪-ঘণ্টাব্যাপী একটি ল্যাবরেটরি উদ্বোধন করেন তাহসান খান।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তাহসান বলেন, ‘এই আইসিইউটি কক্সবাজারের প্রথম। শুধু এক বছরেই এটি অনেকের জীবন বাঁচিয়েছে। আজকের এই ল্যাবরেটরী সেবা যোগ করার মাধ্যমে আরও অনেক শরণার্থী এবং স্থানীয় জনগণের জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসা নিশ্চিত করা যাবে। এটি সারা বিশ্বের জন্যই একটি দারুন উদাহরণ’।

বাংলাদেশ সারা বিশ্বকে দেখিয়েছে এক ইতিবাচক দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রায় ৪ বছর ধরে শুধু আশ্রয়ই দেয় নি, এর সাথে জাতীয় কোভিড-১৯ কার্যক্রম ও টিকাদান কর্মসূচিতেও শরণার্থীদের যুক্ত করা হয়েছে। যেহেতু এখনও পর্যন্ত কোন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে কোভিড-১৯-এর টিকা দেয়া সম্ভব হয়নি, তাই আমরা আহবান জানাই যেন কোভ্যাক্স-এর টিকা বাংলাদেশে আসার সাথে সাথেই রোহিঙ্গা শরণার্থী ও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকা স্থানীয় বাংলাদেশীদের এই টিকাদান কার্যক্রমের অন্তর্ভূক্ত করা হয়।

বিজ্ঞাপন

কোভিড-১৯ মহামারী সারা পৃথিবীতে শিক্ষা ও পাঠদানকে তীব্রভাবে ব্যাহত করেছে, আর বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। স্কুল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং লার্নিং সেন্টার গুলো ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকেই বন্ধ রয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রায় ৫২ শতাংশের বয়স হচ্ছে ১৮’র নিচে, আর এর প্রভাবও দীর্ঘমেয়াদী। আমাদের একসাথে কাজ করে যেতে হবে যেন রোহিঙ্গা শরণার্থী শিশুদের শেখা চালু থাকে এবং ধীরে ধীরে যেন লার্নিং সেন্টারগুলো খোলা যায়। এভাবেই আমরা নিশ্চিত করতে পারবো যেন রোহিঙ্গা শিশুদের প্রজন্মটি শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত না হয়।

রোহিঙ্গা শরণার্থী ও আমরা সবাই চাই আলো ছড়াতে আর নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে। রোহিঙ্গা শরণার্থীরাও এরচেয়ে কোনোভাবেই ব্যতিক্রম নয়। সকল বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা খেলাধুলা, শিল্প, সংগীত ও বিভিন্ন সৃষ্টিশীলতার মাধ্যমে তাদের প্রতিভার প্রমাণ রাখছে, আর এভাবে তারা তাদের সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখছে। খেলাধুলা আর শিল্প শুধুমাত্র প্রতিভার বিকাশই ঘটায় না, এর মাধ্যমে আমরা সুস্থ এবং এর মাধ্যমে দুটি জনগোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে একটি সংযোগ স্থাপন করা যায়। পরিদর্শনকালে শুভেচ্ছাদূত তাহসান রোহিঙ্গা মিউজিশিয়ান এবং ফিল্মমেকারদের সাথে দেখা করেন, তাদের সাথে কথা বলেন এবং তারা একসাথে একটি গান।

তাহসান বলেন, ‘‘তরুণ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তৈরি ’ওমর’স ফিল্ম স্কুল এর তরুণ ফিল্মমেকাররা এবং এর পাশাপাশি মেধাবী রোহিঙ্গা মিউজিশিয়ানরা অসাধারণ কাজ করছে। তারা গান, মিউজিক, ফটোগ্রাফি এবং ফিল্মের মাধ্যমে নিজস্ব সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য তুলে ধরছে। কোভিড-১৯ ও স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন বিষয়ে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে তারা অক্লান্তভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের উৎসাহ ও উদ্দীপনা অসাধারণ”।

রোহিঙ্গা শরণার্থীরা যতদিন পর্যন্ত মিয়ানমারে স্বেচ্ছায়, নিরাপদে ও টেকসইভাবে ফিরে যেতে না পারছে, ততদিন আমরা তাদের পাশে থাকবো, যেন তারা বাংলাদেশে মর্যাদার সাথে থাকতে পারে। তাদের শিক্ষা, দক্ষতা বৃদ্ধি ও জীবিকা নির্বাহের সুযোগ সৃষ্টির জন্য আমরা কাজ করে যাবো, যেন তারা এখানে একটি অর্থবহ জীবন যাপন করতে পারে। প্রত্যাবাসনের অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হলে এর মাধ্যমে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা মিয়ানমারের সমাজে ফিরে গিয়ে সেখানে একীভূত হয়ে অবদান রাখতে পারবে, আর এটাই রোহিঙ্গাদের আকাঙ্ক্ষা। 

এসজে

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission