পাকিস্তানি সমর্থকদের পক্ষে কথা বলায় সংসদে তোপের মুখে হারুন

আরটিভি নিউজ

শনিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২১ , ০৪:৪৭ পিএম


পাকিস্তানি সমর্থকদের পক্ষে কথা বলায় সংসদে তোপের মুখে হারুন
ফাইল ছবি

পাকিস্তান ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফর এবং মাঠে পতাকা ওড়ানো নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মুখে পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে জাতীয় সংসদে বক্তব্য দেন বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ। তিনি বলেন, কোনো দেশের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব দেখানো ঠিক নয়।

বিজ্ঞাপন

শনিবার জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে এ বিষয়ে বক্তব্য দেন হারুন। পাকিস্তানের পক্ষে কথা বলে তোপের মুখে পড়েন হারুন। তার বক্তব্য দেওয়ার সময় সরকারি দলের সদস্যরা তুমুল হইচই করে প্রতিবাদ জানান। পরে তাঁর এ বক্তব্যের জবাবে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সাংসদ হারুন যেভাবে পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে বক্তব্য রেখেছেন, তাতে তাদের চরিত্র বেরিয়ে এসেছে।

হারুন পয়েন্ট অব অর্ডারে বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট টুর্নামেন্ট হচ্ছে। পাকিস্তান ও বাংলাদেশ। পাকিস্তান ক্রিকেট টিম বাংলাদেশের সঙ্গে খেলছে। বাংলাদেশ যা–ই খেলুক না কেন, পাকিস্তানের সমর্থকেরা তাদের পতাকা ওড়াচ্ছে।এটাকে কেন্দ্র করে একটা বিব্রতকর অবস্থা তৈরি হয়েছে। মনে রাখতে হবে, তারা কিন্তু আমাদের দেশে মেহমান, অতিথি। আমাদের দেশের ক্রিকেট, আমাদের দেশের ফুটবল, আমাদের দেশের মেয়েরা পৃথিবীতে খেলছে। সেখানে পতাকা ওড়ে না বাংলাদেশের?’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, “সেদিন একজন সদস্য দেখলাম বিভিন্নভাবে বিদ্বেষমূলক কথাবার্তা বলেছেন।” এ সময় সরকারি দলের সদস্যরা হইচই করে হারুনের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান। হারুন বলেন, “পাকিস্তান টিম তো আসার দরকার ছিল না। পাকিস্তানি টিমকে কেন খেলতে দিয়েছেন? খেলতে দিতেন না। দরকারই ছিল না। আপনি তো তাদের অনুমতি দিয়েছেন। তারা এখানে এসেছে। এটি ঠিক নয়। একটি দেশের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ ঠিক নয়। এটি আমাদের জন্য সম্মানের নয়, গৌরবের নয়।”

১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া ভাষণ থেকে উদ্বৃত করে হারুন আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ভারত বার্মার মতো অতীত থেকে মুখ ফিরিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গেও নতুন সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। অতীতের তিক্ততা দূর করতে কোনো প্রচেষ্টা থেকে নিবৃত্ত হইনি। ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীকে ক্ষমা প্রদর্শন করে উপমহাদেশে শান্তি সহযোগিতার নতুন ইতিহাস রচনা করেছি। আমরা আমাদের আন্তরিকতার প্রমাণ দিয়েছি।”

হারুন বলেন, দেশে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার ক্ষেত্রে স্বাধীনতার পরপরই ঐতিহাসিক ভূমিকা নিয়েছিলেন, এটি তার ঐতিহাসিক দলিল।

বিজ্ঞাপন

এ সময় সরকারি দলের সদস্যরা ব্যাপক হট্টগোল করলে হারুন স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, “বঙ্গবন্ধুর ভাষণ নিয়ে কথা বললাম, এখানেও যদি বাধা দেন, তাহলে আর কী বলব মাননীয় স্পিকার। আমি এমন কিছু বলিনি, আমি ওনার ভাষণ পড়ে শুনিয়েছি।”

পরে হারুন যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বিএনপির সাবেক সাংসদ আবদুল মোমিন তালুকদারের প্রসঙ্গ টানেন। পবিত্র কুরআনের আয়াত উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, সাক্ষী–আলামত ছাড়া কাউকে হত্য করা গোনাহর কাজ। অষ্টম ও একাদশ সংসদের সদস্য আবদুল মোমিন তালুকদার, তার বয়স তখন (১৯৭১ সালে) ১৮ বছর ছিল। উনি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ২০১১ সালে জাতিসংঘের কনভেনশনে গিয়েছেন। এ সময় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, “মাননীয় সদস্য, আপনি এখানে কোনো বিচারের বিষয়ে কথা বলতে পারেন না। বিচার হয়েছে, আপনি বসুন।’ পরে তার মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়।

পরে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে হারুনের বক্তব্যের জবাব দেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, সাংসদ হারুনুর রশিদ পাকিস্তানের পক্ষ অবলম্বন করে যেভাবে সংসদে কথা বললেন, এতে তার প্রকৃত চরিত্র বেরিয়ে এসেছে। তারা যে রাজাকার, আলবদর, আলশামসের পক্ষে কথা বলছেন ও রাজনীতি করছেন, তারা যে দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করেন না, সেটা প্রমাণিত। জাতির পিতাকে হত্যার পর জিয়াউর রহমান হত্যাকারীদের শুধু লালন–পালনই করেননি, পাকিস্তানি ধারা বাংলাদেশে প্রবর্তন করার জন্য সংবিধানকে ক্ষতবিক্ষত করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের চরিত্রকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছেন। একই ধারায় তারা এখনও রাজনীতি করে যাচ্ছেন। এর প্রমাণ আজ হারুনুর রশিদ সংসদে উপস্থাপন করলেন।

এসএস/এসকে

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission