ঢাকামঙ্গলবার, ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ২৫ চৈত্র ১৪৩১

সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা আমেরিকার

আরটিভি অনলাইন রিপোর্ট

বৃহস্পতিবার, ২০ জুলাই ২০১৭ , ০৬:৩২ পিএম


loading/img

জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদী তৎপরতায় অশান্ত হয়ে ওঠা বিশ্বে ২০১৬ সালের আগের বছরগুলোর তুলনায় কম হামলা দেখলেও বাংলাদেশে তা বেড়েছে। এমনটা বলা হয়েছে ওয়াশিংটনে স্টেট ডিপার্টমেন্ট প্রকাশিত ‘কান্ট্রি রিপোর্ট অন টেরোরিজম ২০১৬’ এ।  তবে এ সন্ত্রাস মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারের তৎপরতার প্রশংসাও করেছে আমেরিকা।

বিজ্ঞাপন

বুধবার দেশটির পররাষ্ট্র দফতর থেকে প্রকাশিত  প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবছর ওই রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গেলো বছরে বিশ্বজুড়ে মোট সন্ত্রাসবাদী হামলা আগের বছরের তুলনায় ৯ শতাংশ কমেছে। আর এসব হামলায় নিহতের সংখ্যাও কমেছে ১৩ শতাংশ।

বিজ্ঞাপন

একই সময়ে বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড আগের বছরের তুলনায় ‘উল্লেখযোগ্য হারে’ বেড়েছে বলা হয় প্রতিবেদনে। তবে গুলশান-শোলাকিয়া হামলার পর জঙ্গিবাদ নির্মূলে সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

২০১৫ সালের শুরু থেকে ২০১৬ সালের মধ্যভাগ পর্যন্ত একের পর এক কুপিয়ে ও গুলি করে মুক্তমনা লেখক, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, বিদেশি, ধর্মীয় সংখ্যালঘু গোষ্ঠীসহ বিভিন্নজনকে ‘টার্গেট কিলিংয়ের’ বেশিরভাগ ঘটনায় মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট-আইএস এবং আল কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখা একিউআইসের নামে দায় স্বীকারের খবর আসে।

গেলো বছর ১ জুলাইয়ে গুলশানের কূটনৈতিক পাড়ার হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলায় ১৭ বিদেশি ও দু’পুলিশ সদস্যসহ ২২ জনকে হত্যার আলোচিত ঘটনায়ও আইএসের নামে দায় স্বীকারের খবর আসে। তবে এসব হামলার পেছনে বাংলাদেশ সরকার ‘হোম গ্রোন’ জঙ্গি ও বিরোধী কয়েকটি রাজনৈতিক দলকে দায়ী করছে বলে স্টেট ডিপার্টমেন্টের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়।

বিজ্ঞাপন

বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসবাদী হামলা ২০১৬ সালে কমে আসার পেছনের ব্যাখ্যায় প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, এ সময়ে আফগানিস্তান, সিরিয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান এবং ইয়েমেনে তুলনামূলক কম হামলা ও প্রাণহানির ঘটনায় বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদী হামলার সংখ্যা কমে আসে।

তবে একই সময়ে ইরাক, সোমালিয়া ও তুরস্কসহ বেশ কয়েকটি দেশে সন্ত্রাসী হামলা ও নিহতের ঘটনা বেড়েছে বলে এতে উল্লেখ করা হয়। অন্যদিকে গেলো বছরে বাংলাদেশ দেখেছে স্মরণকালের ভয়াবহতম গুলশানের জঙ্গি হামলা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬-তে হলি আর্টিজান বেকারির ওই হামলাসহ আইএস বাংলাদেশে মোট ১৮টি হামলার দায় স্বীকার করেছে। অন্য হামলাগুলো সাধারণত সংখ্যালঘু গোষ্ঠী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপর বিচ্ছিন্নভাবে করা চাপাতি হামলা।

একই বছরের ৬ এপ্রিল পুরান ঢাকায় সিলেট গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাজিমু্দ্দিন সামাদ এবং ২৫ এপ্রিল রাজধানীর কলাবাগানে ইউএসএআইডি এর কর্মসূচি কর্মকর্তা সমকামী অধিকার কর্মী জুলহাজ মান্নান এবং তার বন্ধু নাট্যকর্মী মাহবুব রাব্বী তনয়কে কুপিয়ে হত্যার দায় স্বীকার করে একিউআইএস।

এছাড়া শোলাকিয়ায় ঈদ জামাতের কাছে বড় আকারের হামলার সঙ্গে সঙ্গে বেশ কিছু হামলার ঘটনায় কোনো গোষ্ঠীর কাছ থেকে দায় স্বীকারের বার্তার খবর পাওয়া যায়নি।

স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬ সালে বিশ্বজুড়ে বেশিরভাগ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় অন্য যেকোনো জঙ্গি গোষ্ঠীর চেয়ে এগিয়ে রয়েছে আইএস। এতে বলা হয়, গেলো বছর বিশ্বের ১০৪টি দেশে সন্ত্রাসী হামলা হলেও জঙ্গি গোষ্ঠীটি গেলো কয়েক বছরে যেসব স্থানে হামলা চালিয়েছিল- সেসব ভৌগলিক এলাকার প্রতিই বেশি মনোযোগী ছিল।

বিশ্বজুড়ে মোট হামলার ৫৫ শতাংশ হয়েছে ইরাক, আফগানিস্তান, ভারত, পাকিস্তান ও ফিলিপাইনে । আর সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের ৭৫ শতাংশ মারা গেছে ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়া, নাইজেরিয়া ও পাকিস্তানে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার সন্ত্রাসবাদের প্রতি ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ঘোষণা করেছে, সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীদের অনেককে গ্রেপ্তার করেছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় সহযোগিতা চালিয়ে যাচ্ছে।

জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো বাংলাদেশে তাদের উগ্রবাদী আদর্শ প্রচার ও বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে থাকা অনুসারীদের সঙ্গে যোগাযোগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে। আইএস ও একিউআইএসের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিভিন্ন প্রকাশনা, ভিডিও ও ওয়েবসাইটের দিকে নজর রেখেছে বাংলাদেশ।

এছাড়া বাংলাদেশ স্টেট ডিপার্টমেন্টের সন্ত্রাসবিরোধী সহায়তা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ নিয়েছে বলা হয় প্রতিবেদনে।

এতে আরো বলা হয়, বিদেশি জঙ্গিদের জন্য সুনির্দিষ্ট আইনের অভাব থাকলেও বাংলাদেশ বিদ্যমান আইনের আওতায় অন্যান্য অভিযোগে সন্দেহভাজন বিদেশি জঙ্গি বা তাদের সহায়তাকারীদের গ্রেপ্তার করেছে।

বিভিন্ন জঙ্গি আস্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের বিষয়টি তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘কিছু অভিযান আইনশৃঙ্খলা বাহিনী- সুনির্দিষ্টভাবে র‌্যাবের সাজানো বলে পর্যবেক্ষকদের বিশ্বাস। আর জঙ্গিবাদে অর্থায়ন বন্ধে সন্দেহজনক লেনদেন আটকানোসহ ব্যাংকিং ও অন্যান্য খাতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা বাস্তবায়নের তাগিদ দেয়া হয় প্রতিবেদনে।

এপি/সি

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |