রং তুলির আঁচড়ে একাত্তরের নৃশংসতা

সাজিদ আরাফাত

রোববার, ২৬ মার্চ ২০১৭ , ০৫:২২ পিএম


রং তুলির আঁচড়ে একাত্তরের নৃশংসতা

লম্বা রাস্তাজুড়ে বিশাল ক্যানভাস। ২৫ মার্চ সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গেই রাজধানীর জাতীয় সংসদ ভবন এলাকার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে রংতুলির পরশে ফুটিয়ে তোলা হয় একাত্তরের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নৃশংসতা। ইউনিভার্সিটি অব ডেভলপমেন্ট অলটারনেটিভ (ইউডা)-এর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নবীন-প্রবীণ চিত্রশিল্পীরাও হত্যাযজ্ঞের ঘৃণিত ইতিহাসের প্রতিবাদস্বরুপ এ পথচিত্র অঙ্কন করেন।

বিজ্ঞাপন

নানা রঙের তুলিতে ফুটে ওঠে রক্ত ঝরানো দিনের প্রতিচ্ছবি। এ পথচিত্র অঙ্কন চলে ২৬ মার্চ সূর্যোদয় পর্যন্ত। পথচিত্র অঙ্কনের পাশাপাশি আলোর মিছিল, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন, গণসঙ্গীত ও কবিতা পাঠের আসর চলে রাত ১২টা পর্যন্ত। ঠিক ১২টা ১ মিনিটে দাঁড়িয়ে সমস্বরে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয়। 

এ বছর দিনটি জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করা প্রসঙ্গে ইউডার সচিব মুনির আহমদ জানান, ‘দীর্ঘদিন যাবৎ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনসহ আমরা ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের দাবি জানিয়ে আসছি। অবশেষে, স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর এ বছর ১১ মার্চ আমাদের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে এবং বিষয়টি জাতির মধ্যে স্বস্তির ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ। আমরা আশা করছি, এ দিনটি যেন আন্তর্জাতিকভাবেও স্বীকৃতি পায় সে ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সরকার যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।’

বিজ্ঞাপন

এ অনুষ্ঠান সম্পর্কে প্রচ্ছদ শিল্পী ও ইউডা চারুকলার সাবেক শিক্ষার্থী চারু পিন্টু জানান, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রাক মুহুর্তে রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানের বর্বর বাহিনীরর হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা আমরা এঁকে চলেছি। দেশের খ্যাতিনামা শিল্পী থেকে আজকের নতুন শিল্পী সাধারণ শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে আমরা প্রতিবছর শহীদদের প্রতি আমরা স্মরণ করি। আমরা চাই প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম এ ধারাবাহিকতা থাকুক। এ বর্বর হত্যাযজ্ঞের কথা আরো ৫০০ বছর পরের মানুষও যেন সঠিকটা জানতে পারে। রাষ্ট্রবিরোধী দেশবিরোধী, স্বাধীনতাবিরোধীদের এবং তাদের প্রজন্মকেও চিনে রাখতে পারে সে ব্যাবস্থা করা হোক।’

রংতুলি হাতে রাস্তায় আঁকাআঁকিতে ব্যস্ত ইউডার সাবেক শিক্ষার্থী সেলিয়া সুলতানা বলেন, ‘একাত্তরের কালরাতে ঘাতক পাকিস্তানিদের নৃশংসতা ফুটিয়ে তুলতে আমাদের এ প্রয়াস। বেশ ক'বছর ধরেই রাস্তায় এ আল্পনা আঁকার মধ্যদিয়ে একাত্তরের ঘৃণিত ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যেও অব্যাহত থাকবে।’

ইউনিভার্সিটি  অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ’র (ইউডা) আয়োজনে এ চিত্রকর্ম আয়োজন হয় প্রতিবছর ২৫ মার্চ রাতে। জাতীয় সংসদ ভবনের সামনের অ্যাভিনিউয়ে পথচিত্র অঙ্কন আয়োজন করে ইউডা। ইউডা ছাড়াও স্কুল শাখা (সোডা) এবং কলেজ শাখাও (কোডা) অংশ নিয়ে থাকে। এ অনুষ্ঠানের মূল  উদ্দেশ্য, ২৫ মার্চের স্মৃতিকে ধারণ করে পাকিস্তানি ও রাজাকারদের প্রতি ঘৃণা জানানো।

বিজ্ঞাপন

ইউডার এ আয়োজনের সঙ্গে প্রতিবছরই বাড়ছে শিল্পীসহ সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা। ভবিষ্যতে অসাম্প্রদায়িক ঐক্যের পথে দেশের মানুষকে আরো সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে জানান আয়োজক কমিটির সদস্যরা।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর নৃশংস ও বিভীষিকাময় যে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়, তার স্মরণে এবং গণহত্যার প্রতিবাদে ২০০৩ সাল থেকে এ পথ চিত্রাঙ্কনের আয়োজন শুরু হয়।

ওয়াই/এসজে

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission