রক্ষক যখন ভক্ষক 

ইঞ্জিনিয়ার মো খোরশেদ আলম

বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪ , ০৭:২৪ পিএম


রক্ষক যখন ভক্ষক 
লেখক : ইঞ্জিনিয়ার মো খোরশেদ আলম

বাংলাদেশের পুজিবাজারে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ হওয়া উচিত ছিলো সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থার স্থান, সেখানে খোদ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কমিশন অবৈধ বাণিজ্যের সাথে জড়িত খায়রুল বাশার এবং তার সহযোগী গংদের দিয়ে চলেছে সুরক্ষা। 

বিজ্ঞাপন

গত ১১ নভেম্বর সোমবার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে একটি দল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের উর্ধ্বতন কমকর্তাদের সাথে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য যায়। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এজিএম সাত্তিক আহমেদ বিনিয়োগকারীদের সাথে কথা বলেন, যার ভিডিও আমাদের কাছে আছে।

বিনিয়োগকারীরা স্পষ্টভাবে ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালককে জানিয়ে আসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান নিয়ন্ত্রক কমকর্তা খায়রুল বাশার আবু তাহের মোহাম্মদ, বজলুর রহমান (এজিএম), মোহাম্মদ ইকরাম (মনিটরিং ম্যানেজার), মো. জাকির (সিনিয়র এক্সকিউটিভ) এবং মো. আফজালুর রহমান (ইনভেস্টিগেশন এন্ড এনফোর্সমেন্ট, এসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার) এই পুরো টিমটি পুঁজিবাজারের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করছে।  তারা বর্তমান সরকারকে বিব্রত করার জন্য কাজ করছে, বর্তমান সিকুউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান খন্দকার মাকসুদের কমিশনের  বিরুদ্ধে কাজ করছে।

বিজ্ঞাপন

তারা বিগত সরকারের সালমান এফ রহমান - শিবলী রুবাইয়াত (সাবেক চেয়ারম্যান বাংলাদেশ সিকুউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন) এর পক্ষ হয়ে কাজ করছে। এই চক্রটি ২৫০ টি ব্রোকার হাউজের কাছে আতংকের নাম, এরা সাপ্তাহিক চাঁদা উত্তোলন করে প্রতিটি ব্রোকার হাউজ থেকে। যদি কোন ব্রোকার হাউজ চাঁদা দিতে ব্যর্থ হয় তাহলে তারা তার বিরুদ্ধে আইনের তকমা দিয়ে হেনস্থা করে।

বিগত সরকারের শেষ সময়ের চাঞ্চল্যকর তদন্তের নামে হয়রানির শিকার আভিভা ইকুউটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড। সালমান এফ রহমান ৪০ কোটি টাকার মারজিন লোন নেয় তার কোম্পানির স্পনসর শেয়ার দিয়ে। এই টাকা এখন পর্যন্ত অনাদায়ী পাওনা হিসেবে পড়ে আছে। সালমান এফ রহমানের কাছে পাওনা টাকা ফেরতের জন্য তাগাদা দিলে উনি উনার খায়রুল বাশার গং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পেটুয়াবাহিনী লেলিয়ে হয়রানির নামে তদন্ত চালিয়ে যায়। সেই টাকা সালমান এফ রহমানের কাছে থেকে কোনভাবেই উদ্ধার করা সম্ভব হয় নাই এবং উনি সেই ক্রয়কৃত শেয়ার বিক্রির ক্ষেত্রেও বাধা দেয়।

এ অবস্থায় আভিভা ইকুইটি ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে বারংবার চাপ দেওয়া হলে সালমান-শিবলী ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তাদের পেটোয়া বাহিনী খায়রুল বাশার আবু তাহের এবং তার পালিত প্রভুভক্ত টিমকে লেলিয়ে দেয়। তারা নিয়মবহির্ভূতভাবে চিরুনি অভিযানের নামে তদন্ত চালায়। শেষমেষ কোন অভিযোগ না পেয়ে জহিরুল হক জুয়েল (সাবেক কমকর্তা আভিভা ইকুইটি ম্যানেজমেন্ট লি:) এর মাধ্যমে ব্যক্তিগত মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে এখনো কড়া ভাষায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে চিঠি পাঠাচ্ছে। যা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের আইন বহির্ভুত। এই জহিরুল হক জুয়েল হলেন খায়রুল বাশার এবং বজলুর রহমানের খুবই বিশ্বস্ত সহচর এবং পুরানো বন্ধু। ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকেই এই ব্রোকার হাউজের সম্মানহানির মাধ্যমে খায়রুল বাশার গং প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করছে। 

বিজ্ঞাপন

অভিযোগ আছে, এই খায়রুল বাশার গং বাজারের মাফিয়া এবং গেম্বালারদের সাথে চুক্তিবদ্ধ। বাজারের যেসব বস্তাপচা বন্ধ কোম্পানি আছে সেগুলো ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে উচ্চ মূল্যে পাবলিককে শেয়ার গছিয়ে দিচ্ছে এবং বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে।

উল্লেখ্য, এমারল্ড অয়েল কোম্পানি  বা লাভেলো কোম্পানির শেয়ার যখন উচ্চমুল্যে ছাড়া হয়, তখন এই খায়রুল বাশার গং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে কোন আইনগত পদক্ষেপ নেয় নাই। তখন তারা নিরবতা পালন করে। কারণ এই গেম্বালারদের কাছ থেকে তারা মোটা অংকের টাকা পায়। আর যখন তাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ ছাড়া কোন ভালো কোম্পানির শেয়ার বাজারে নিজস্ব গতিতে বেচাকেনা হয় তখন তারা ইনকুয়েরি দিয়ে চিঠি পাঠায় কোম্পানিকে, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের, ব্রোকার হাউজগুলোতে। এর মাধ্যমে তারা তাদের ভাগের টাকা আদায়ের চেষ্টা করে, নয়ত আইনের গ্যাড়াকলে ফেলে শেয়ার কেনাবেচা বন্ধ করে দেয়।

আফসোস, বিগত সরকারের এই জঞ্জাল এখনো কিভাবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ভিতর চাকরি করে!  সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, এই চিহ্নিত দুষ্ট চক্রের সকল অবৈধভাবে উপার্জিত সম্পদের পরিমাণ জানতে চেয়ে দুদকের মাধ্যমে তদন্ত করার।

গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী সরকার পতনের পর এই খায়রুল বাশার আমেরিকা পালানোর চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু সফল হয়নি। অভিযোগ আছে, বর্তমানে তিনি সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থার একজন ডিডি বা অফিসারের প্রভাব খাটিয়ে তার চাকরি বাঁচিয়ে রাখার আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা খায়রুল বাশারের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানালেও খোদ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ তার এবং তার সহযোগীদের পক্ষে সাফাই গাইছে। এ অবস্থায় প্রশ্ন ওঠতেই পারে, আমরা কি আসলেই বিজয় আনতে পেরেছি? চোখের সামনে দেখছি, কিছু চাটার দল কোনো না কোনোভাবে দেশটাকে চেটে খাচ্ছে।

লেখক: পুঁজিবাজার বিশ্লেষক এবং বিনিয়োগকারী

আরটিভি/  ডিসিএনই

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission