নিজের পায়ে কি নিজেই কুড়াল মারলেন তামিম ইকবাল?

মো. সাঈদুর রহমান

সোমবার, ২২ এপ্রিল ২০২৪ , ০৬:৪৭ পিএম


তামিম ইকবাল
ছবি- সংগৃহীত

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাকি রয়েছে আর মাত্র দেড় মাস। চার-ছক্কার এই টুর্নামেন্ট কেন্দ্র করে দলে গঠনের জন্য ব্যস্ত সময় পার করছে অংশ গ্রহণকারী দলগুলোর নির্বাচকরা। তবে দল নির্বাচনকে ছাপিয়ে টাইগার ক্রিকেটে এখনও আলোচনা কেন্দ্র বিন্দুতে রয়েছে তামিম ইকবাল। এই বাঁহাতি ব্যাটারের দলে ফেরা না ফেরার নাটক যেনো কোনোভাবেই শেষ হচ্ছে না।

গত বছর আফগানিস্তান সিরিজের মাঝপথে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায় নিয়েছিলেন তামিম। তবে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে অবসর ভেঙে ক্রিকেটে ফেরেন দেশসেরা এই ওপেনার। এরপর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে একটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পান তিনি।

বিজ্ঞাপন

এরপর ব্যাটিং অর্ডার পরিবর্তন নিয়ে টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়েন তামিম; যা নিয়ে ব্যাপক সামালোচনার শিকার হতে হয় বিসিবিকে। এর মধ্যেই চাপা পড়ে যায় তামিমের হঠাৎ করে অবসর নেওয়ার রহস্য। বিষয়টি এখনও পরিষ্কার করেনি কোনো পক্ষই।

তবে একটু চিন্তা করলে বোঝা যায়, নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মেরেছেন তামিম ইকবাল। যদি খেয়াল করি, ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং ২০২২ এশিয়া কাপকে কেন্দ্র করে টি-টোয়েন্টি দলের তামিমকে ফেরানোর জন্য অনেক বার আলোচনায় বসেছিলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। সে সময় তিনি বার বার একটা কথা বলে গেছেন পাপনকে। যে টি-টোয়েন্টি নিয়ে এই মুহূর্তে তিনি ভাবছেন না। তার ভাবনায় শুধু ভারতের ওয়ানডে বিশ্বকাপ। তবে সেই সময় ওপেনার শঙ্কটে ভুগছিল দল।

মূলত, ২০২১ সালে তৎকালীন হেড কোচ রাসেল ডমিঙ্গো তামিম ইকবালের টি-টোয়েন্টির স্ট্রাইকরেট নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। যার পরই বেঁকে বসেন এই বাঁহাতি ওপেনার। বার বার আলোচনা করেও তামিমকে টি-টোয়েন্টি দলে ফেরাতে পারেননি পাপন। তাই তামিমের এমন বেছে খেলার পরিকল্পনা ভালো না লাগারই কথা বিসিবির।

সেই বছর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অধীনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং এশিয়া কাপে পুরোপুরি ব্যর্থ হয় টাইগাররা। এতে অধিনায়কত্বের সঙ্গে সঙ্গে টি-টোয়েন্টি দল থেকে নিজের জায়গা হারান রিয়াদ। এরপর সাকিবের কাঁধে ওঠে টি-টোয়েন্টি দলের দায়িত্ব।

বিজ্ঞাপন

এরপর বিশ্বকাপের বছরে টাইগারদের হেড কোচ হিসেবে দায়িত্ব পান চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। ২০২২ সালে ব্যাট হাতে রান পেলেও ২০২৩ সালে ১১ ইনিংসে মাত্র একটিতে ফিফটি তুলতে পারেন তামিম। 

তবে আফগানিস্তানের সিরিজের প্রথম ম্যাচে পুরোপুরি ফিট না হয়ে ফেলার বিষয়টি গণমাধ্যমের সামনে প্রকাশ করায় তামিমকে নিয়ে বিসিবি সভাপতির কাছে অভিযোগ করেন কোচ হাথুরুসিংহে। যেখান থেকেই নাটকের সূচনা হয়।

সিরিজের মাঝ পথে অবসরের ঘোষণা দিয়ে বসেন তামিম। যার উত্তাপ মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে পুরে দেশে। পরিস্থিতি সামলাতে পর দিন তামিমকে সঙ্গে নিয়ে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। এরপরই অবসর ভেঙ্গে ক্রিকেটে ফেরেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। আপাতত দৃষ্টিতে বিষয়টির সমাধান হয়েছে মনে হলেও আসলেই কি সমাধান হয়েছিল?

তামিমের হঠাৎ অবসর নেওয়ার কারণ জানতে পুরো বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কাছে জবাবদিহি করতে হয় বিসিবি বসকে। বিষয়টি পাপনের কাছে ভালো না লাগারই কথা। এদিকে দেড় মাস ছুটিতে থাকায় এশিয়া কাপ মিস করেন তামিম। এ সময় দলের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব ওঠে সাকিবের কাঁধে। এশিয়া কাপ থেকে বাদ পড়েন মাহমুদউল্লাহ।

তবে পুরো দায় ওঠে অধিনায়ক সাকিবের কাঁধে। এখানে তামিমের একটি মন্তব্য বড় ভূমিকা পালন করেন। ইনজুরি কারণে ছুটিতে থাকলেও বিসিবির চিকিৎসকদের সঙ্গে দেখা করতে মিরপুরে আসেন তামিম। এসময় বিসিবির এক কর্মচারীকে তামিম বলে বসেন, ‘রিয়াদ ভাইকে দল থেকে বাদ দিয়েদিলেন’। এই ঘটনা চোখ এড়ায়নি গণমাধ্যম কর্মীদের।

যার উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে মুহূর্তেই। নেটিজেন মধ্যে ধরণা তৈরি হয় সাকিবের ইচ্ছায় এশিয়া কাপ থেকে বাদ পড়েন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তবে আলোচনার ভিড়ে চাপা পড়ে যায় তামিমের অধীনেই আয়ারল্যান্ড সিরিজে ওয়ানডে দল থেকে বাদ পড়েন রিয়াদ।

এদিকে এশিয়া কাপে দল খারাপ করলেও ওপেনিং দুর্দান্ত ব্যাট করেন মেহেদী হাসান মিরাজ, বিশেষ করে আফগানিস্তান ম্যাচে। সবশেষ আফগানিস্তান ম্যাচগুলোতে ফারুকীর বলে দ্রুত উইকেট বিলিয়ে দিয়েছেন তামিম। তাই বিশ্বকাপেও আফগানিস্তান ম্যাচে মিরাজকে দিয়ে ওপেন করানো কথা ভাবছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। অন্যদিকে ওপেনিংয়ে ছাড়া খেলবেন না তামিম এটা ভালো করেই জানতে বিসিবি।

ফলে এই সুযোগটা ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছে তারা। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে তামিমকে নিচের দিকে ব্যাট করার প্রস্তাব দেওয়ার হয় ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে। তবে বিষয়টি ভালোভাবে নেননি তামিম। যার ফলেই বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়েন তামিম। অন্যদিকে সেই সময় বন্ধু সাকিবের সঙ্গে দ্বন্দ্বের বিষয়টিও আগে থেকেই ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ফলে বিশ্বকাপ দল থেকে তামিমের বাদ পড়ার পিছনে ভিলেন বানানো হয় সাকিব আল হাসানকে। 

এতে পুরো ক্রিকেট ভক্তরা সাকিবের বিপক্ষে প্রতিবাদ শুরু করে। কিন্তু সব কিছু ভিড়ে একটা প্রশ্ন চাপা পড়ে যায়, সাকিবের কি তামিমকে বাদ দেওয়ার ক্ষমতা আছে? যেখানে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে তামিমকে ক্রিকেটে ফিরিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নিজে। 

সুতরাং বোঝা যায় তামিমের দুর্বলতা এবং সাকিবের দ্বন্দ্বকে ভালোভাবেই কাজে লাগানে হয় তাকে দল থেকে বাদ দেওয়ার ক্ষেত্রে। আর সেটার সুযোগ করে দিয়েছেন তামিম ইকবাল নিজেই।

কারণ, অনেকেই মনে করেন সেদিন তামিমকে প্রস্তাবটা দিতে পারতেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান অথবা কোচ নিজেই। কিন্তু সাকিবের সঙ্গে তামিমের দ্বন্দ্বের কথা সবার জানা এবং আফগানিস্তান সিরিজের মাঝ পথে হুট করে অবসর নেওয়ায় হাথুরুসিংহের সঙ্গেও সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিলো না তামিমের। এমন অবস্থায় সাকিব কিন্তু কোচের কাছে থেকে প্রস্তাব আশার করাটা কতটা যৌক্তিক এটাও বড় প্রশ্ন।

তবে তামিম বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে নিতেও পারতেন। কারণ ইনজুরির কারণে দলের বাইরে ছিলেন অনেক দিন। ফলে আফগানিস্তান ম্যাচ বাদ দিয়ে বাকি ম্যাচগুলোতে ভালো করা পরিকল্পনা করতেই পারতেন দেশসেরা এই ওপেনার। এতে বিসিবির ভুল পরিকল্পনার জবাব এবং নিজের সেরাটা দেওয়ার সক্ষমতাও দেখাতে পারতেন কি না তিনি? যেমনটা করেছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

বিশ্বকাপে দুর্দান্ত পারফরম করে বিসিবির অবহেলার যোগ্য জবাব দিয়েছিলেন দেশসেরা এই ফিনিশার ব্যাটার। পেশাদার ক্রিকেট এমনটাই হওয়া উচিক নয় কি? ফলে বিসিবির পাতানো ফাঁদে পা দিলে এখনও লাল সবুজের জার্সিতে নিয়মিত দেখা যেতো তামিমকে।

তবে সম্প্রতি তামিমকে দলে ফেরাতে নানা ধরনের গুঞ্জন তৈরি হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কতটা বাস্তবে রূপ নেই সেটাই দেখার বিষয়।
 

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission | powered by TechnoNext Software Limited.