২০২১ সালে আবুধাবি টি-টেন লিগ খেলতে গিয়ে নীতি লঙ্ঘন করে একটি আইফোন উপহার নিয়েছিলেন ক্রিকেটার নাসির হোসেন। কিন্তু সে তথ্য গোপন করায় ২০২৩ সালে আইসিসি থেকে দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা পেয়েছিলেন তিনি। সেই কালো অধ্যায় শেষে আবারও ক্রিকেটে ফিরেছেন এই অলরাউন্ডার। কিন্তু বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ে না নাসিরের। যখনই যা করেন, সঙ্গী হয়ে যায় ‘বিতর্ক’। তা মাঠে হোক বা মাঠের বাইরে।
অনেক দিন খেলার বাইরে থাকা নাসির এখন কেমন আছেন? মিরপুরে ম্যাচ শেষে আজ সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমার একটা সন্তান আছে। পরিবার আছে। সুখে আছি। ভালো আছি।’
প্রায় দুই বছর ক্রিকেটের বাইরে থাকলেও নাসির আছেন নাসিরের মতোই। সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময়ও তার কথায় আর আচরণে রসিকতা ছিল। এদিন নাসির বলেন, ‘যাদের নাম হয়, তাদের বদনামও হয়। এটাই স্বাভাবিক। এখন তো আমরা অনলাইন মিডিয়ায় নিজেদের টিআরপি বাড়ানোর জন্য যা-তা করে নিউজ করি। আমার মনে হয়, এ রকম না-করাই ভালো। কারণ, আপনাদের একটা নিউজ আর কিছু লাইকের জন্য একটা পরিবারে সমস্যা হতে পারে। এটা আপনারাও ভালো জানেন। এ রকমটি যদি আপনাদের পরিবারের সঙ্গে হয়, তখন বুঝতে পারবেন।’
শুধু তাই নয় নাসিরের ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও খবরের শিরোনাম হয়েছে। এ নিয়ে কিছুটা অভিমানও শোনা গেল নাসিরের কণ্ঠে—‘আমি যেমন ছিলাম, ভালোই ছিলাম। খেলাধুলা নিয়ে কোনো অভিযোগ ছিল না। ইনডিসিপ্লিনড ছিলাম না। খেলাধুলায় ফাঁকি মেরেছি তাও নয়। আর আমার জীবন আমি কীভাবে কাটাব, সেটা আমার ব্যাপার। আমার জীবন তো আর আপনারা বলে দেবেন না। আপনারা শুধু দেখবেন আমি মাঠে কেমন করি। আমি যদি মাঠের ক্রিকেটে কোনো কিছু খারাপ করে থাকি, তখন আপনারা বলতে পারেন।’
প্রিয় তারকাদের সবকিছুই অনুসরণ করেন তার ভক্ত বা শুভাকাঙ্ক্ষীরা! এ নিয়ে নাসিরের সোজাসাপ্টা জবাব— ‘এগুলো হচ্ছে ভুয়া কথা, তারকা-মারকা বলে কিছু নেই। না খেয়ে থাকলে আপনারা কেউ এসে বলবেন না, ভাই খান। আমি যেমন আছি, ভালো আছি। আমি আপনাদের মতোই মানুষ। আমারও জীবন আছে, পরিবার আছে।’
যোগ করলেন, গত দেড় বছরের ‘নির্বাসনে’ কতটা মিস করেছেন বাইশ গজকে—‘যেই জিনিসটা মিস করছিলাম, ক্রিকেট খেলা। খুব ভালো লাগছে অনেক দিন পর ক্রিকেট খেলে। দেড় বছর বাইরে ছিলাম। বিন্দাস ছিলাম। আর কী বলব (হাসি)। পরিবারের সঙ্গে ছিলাম। ভালো ছিলাম আলহামদুলিল্লাহ।’
আবাহনীসহ বেশ কয়েকটি দল থেকে প্রস্তাব পান নাসির। কিন্তু রূপগঞ্জ টাইগার্সকে বেছে নিয়েছেন এই অলরাউন্ডার। কী কারণে রূপগঞ্জকে বেছে নিলেন তারও উত্তর দিলেন নাসির।
রুপগঞ্জের হয়ে খেলা এই অলরাউন্ডার বলেন, ‘প্রস্তাব ছিল অনেক দলের। তবে আমার কাছে যেটা ম্যাটার করে, প্রায়োরিটি আর কীভাবে আমার সঙ্গে আচরণ করছেন। যেহেতু সুপার লিগ খেলার কথা ছিল আমি কোনো দলের অপশন হয়ে থাকতে চাই না, যে এই খেলোয়াড় গেলে আমি খেলব বা এই খেলোয়াড় থাকলে আমি খেলব না। এ ধরনের অপশন হয়ে কখনও থাকতে চাই না। হ্যাঁ, প্রস্তাব ছিল। তারা শুধু প্রস্তাবই দিয়েছে, আর কোনো কিছু দেয়নি।’
বাংলাদেশের হয়ে লাল-সবুজের জার্সি গায়ে ১৯ টেস্ট, ৬৫ ওয়ানডে ও ৩১ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন নাসির। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে শেষবার তাকে জাতীয় দলের জার্সিতে দেখা যায়। অনেক দিন খেলার বাইরে থাকলেও জাতীয় দলে ফেরার আশা এখনও ছাড়েননি তিনি। জাতীয় দলে ফেরার বিষয় নিয়ে নাসির বলেন, ‘যারা ক্রিকেট খেলে, জাতীয় দলে খেলার জন্যই খেলে। আমিও স্বপ্ন দেখি। এটা বিশ্বাস করি, এখনও সুযোগ আছে। যদি পারফর্ম করতে পারি, অবশ্যই জাতীয় দলে খেলতে পারব। আপনি পারফর্ম করলে সেটার মূল্যায়ন যদি ক্রিকেট বোর্ড করে, তাহলে আপনি পারফর্ম করতে পারবেন।’
২০২৩ সালের বিপিএলে ঢাকা ডমিনেটর্সের হয়ে দুর্দান্ত পারফর্ম করেন নাসির। সেই বিপিএলে ১২ ম্যাচ খেলে ৪৫.৭৫ গড়ে ও ১২০ স্ট্রাইক রেটে ৩৬৬ রান করে ছিলেন টুর্নামেন্টের ষষ্ঠ সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। বল হাতে ১৪.০৬ গড়ে ও ৬.৮১ ইকোনমিতে ১৬ উইকেট নিয়ে ছিলেন সর্বোচ্চ উইকেটশিকারিদের তালিকায় দুইয়ে।
আরটিভি/এসকে-টি