অনলাইন শপিংমলে লোভনীয় অফারের ফাঁদে পরে ইতোমধ্যে কয়েক লাখ গ্রাহক প্রতারণার শিকার হয়েছেন। অনলাইন প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে পণ্য ডেলিভারি দিচ্ছে না। আর গ্রাহকদের বিপুল অঙ্কের টাকা আত্মসাত করতে বিভিন্ন ধরনের নাটকীয় কাহিনীর জন্ম দিচ্ছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো। তেমনি একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জ। প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের হাজার কোটি টাকা আত্মসাত করতে এক অভিনব কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে।
গত এক বছরে ই-অরেঞ্জ প্রতিষ্ঠান সিটি ও ব্র্যাক ব্যাংক দুটি অ্যাকাউন্টে প্রায় ১ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা জমা হয়। দুই অ্যাকাউন্টে মাত্র ৩ কোটি ১২ লাখ ১৪ হাজার ৩৬৫ টাকা জমা আছে। ই-অরেঞ্জের গ্রাহকের ক্ষোভ অনুমান করতে পেরে নিজেদের দায় এড়ানোর কৌশল হিসেবে গত ১১ আগস্ট তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় মামলা করেন প্রতিষ্ঠানটির চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) আমানউল্লাহ চৌধুরী।
-
আরও পড়ুন... ই-অরেঞ্জের টাকা গেল কোথায়?
জানা গেছে, ই-অরেঞ্জ গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে পণ্য ডেলিভারি না দেয়ায় চাপের মুখে পড়েন প্রতিষ্ঠানটির মালিক সোনিয়া মেহজাবিন, তার স্বামী মাসুকুর রহমান, চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) আমানউল্লাহ চৌধুরীসহ অনেকেই। গ্রাহকদের এতো টাকা পরিশোধ সম্ভব নয় বিষয়টি বুঝতে পেরে ১১ আগস্ট তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় ই-অরেঞ্জের সাবেক সিওও নাজমুল আলম রাসেল ও তার পরিবারের সদস্যসহ চারটি ভেন্ডর প্রতিষ্ঠানের মালিকদের আসামি করে মামলা করেন আমানউল্লাহ চৌধুরী। তবে শেষমেষ রক্ষা পায়নি আমাউল্লাহ চৌধুরী।
গ্রাহকের ১,১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত ১৭ আগস্ট গুলশান থানায় ই-অরেঞ্জের সোনিয়া মেহজাবিন ও তার স্বামী মাসুকুর রহমান, চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) আমানউল্লাহ চৌধুরীসহ প্রতিষ্ঠানের পাঁচ মালিক-পরিচালকের বিরুদ্ধে মামলা করেন তাহেরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। ওই দিনই সোনিয়া মেহজাবিন ও মাসুকুর রহমান আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। বিচারক তাদের জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠান। এর পরদিন গুলশান এলাকা থেকে আমানউল্লাহকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের একটি দল। এই তিনজনই এখন রিমান্ডে আছেন।
গত ১১ আগস্ট চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) আমানউল্লাহ চৌধুরী মামলায় অভিযোগ করেন, আসামিরা পারস্পরিক যোগসাজশ করে ই-অরেঞ্জের ৬৬৩ কোটি ৪৯ লাখ ৩৩১ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গ্রাহকের ক্ষোভ অনুমান করেই নিজেদের দায় এড়ানোর কৌশল হিসেবে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় মামলা করেন আমানউল্লাহ চৌধুরী।
-
আরও পড়ুন... ই-অরেঞ্জের বিজ্ঞাপনে এখনো মাশরাফী! (ভিডিও)
ওই মামলা তদন্ত করতে গিয়ে ই-অরেঞ্জের দুটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের স্টেটমেন্ট যাচাই করেছে তেজগাঁও গোয়েন্দা বিভাগ। এ ছাড়া সাবেক সিওও নাজমুল ইসলাম রাসেল ও মোটরসাইকেল বিক্রির চারটি ভেন্ডর প্রতিষ্ঠানের মালিকদেরও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ডিবির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, মামলাটি তদন্ত করতে গিয়ে দেখলাম, যে অঙ্কের টাকা আত্মসাতের কথা বলা হয়েছে তা আসলে ঠিক নয়। কারণ ই-অরেঞ্জের অর্ডারের বিপরীতে গ্রাহকদের যে মোটরসাইকেল বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে ভেন্ডরদের কাছ থেকে সেসব প্রমাণ আমরা পাচ্ছি। শিগগিরই আমরা এ মামলার ফাইনাল রিপোর্ট দিয়ে দেব।
-
আরও পড়ুন... ই-অরেঞ্জ: মামলার তদন্তে ৪৫০ কোটি টাকার হদিস নেই
ই-অরেঞ্জের দুটি ব্যাংক স্টেটমেন্টের বরাত দিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, আমানউল্লাহর করা মামলায় ৬৬৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়েছে। এর মধ্যে চারটি ভেন্ডরকে ৩৬ হাজার ২৮১টি মোটরসাইকেলের দাম বাবদ ৬৫৮ কোটি ৯১ লাখ ৯ হাজার ৩২ টাকা পরিশোধ করে ই-অরেঞ্জ। ভেন্ডররা এসব মোটরসাইকেল গ্রাহকদের বুঝিয়ে দিয়েছে। আর বাকি চার কোটি টাকার মধ্যে সাবেক সিওও নাজমুল আলম রাসেলের স্ত্রী ফারিয়া সুবহার একটি কম্পিউটার এক্সেসরিজ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেই প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে সাপ্লাইয়ার হিসেবে ই-অরেঞ্জের চুক্তি ছিল। ওই প্রতিষ্ঠানে ই-অরেঞ্জের অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকা ট্রান্সফার হয়েছে। এর মধ্যে রাসেল ও তার স্ত্রী এক কোটি ৪২ লাখ টাকার মতো প্রোডাক্ট সাপ্লাইয়ের বিল-ভাউচার আমাদের দেখাতে পেরেছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গ্রাহকের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরাতেই ১১ আগস্ট ই-অরেঞ্জ মামলাটি করেছিল। এতে ৬৬৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়, যাতে গ্রাহকরা মনে করেন, ভেন্ডররা টাকা নিয়ে পণ্য ডেলিভারি দিচ্ছে না।
এফএ