ঢাকাশুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

দর্শক সারি থেকে

মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয় ...

জাফর উল্লাহ সোহেল

বৃহস্পতিবার, ০১ জুন ২০১৭ , ০২:৪০ পিএম


loading/img

এর আগে এ কলামেই বেশ ক’বার লিখেছিলাম, বাংলাদেশের দর্শকদের অল্পতেই কাত আবার অল্পতেই মাত হওয়ার কথা। আবহাওয়ার ভাষায় যাকে বলে চরমভাবাপন্ন। অর্থাৎ গরম হলে একেবারে পুড়িয়ে ছাড়বে, আর ঠাণ্ডা হলে একেবারে জমিয়ে দেবে। সাধারণত মেরু অঞ্চলে এ ধরণের আবহাওয়া থাকে। মাঝে মাঝে আমার এ বিষয়ে বেশ কৌতুহল জাগে- বাঙালি কী করে মননে এতটা প্রতিক্রিয়াশীল হয়, আবহাওয়ার ভাষায় চরমভাবাপন্ন? এখানকার আবহাওয়া তো নাতিশীতোষ্ণ!

বিজ্ঞাপন

ভারতের কাছে একটা ম্যাচ হেরেছে বাংলাদেশ। খুব খারাপভাবেই হেরেছে। কিন্তু এ ম্যাচ কি ক্রিকেট পরিসংখ্যানে কোথাও জায়গা পাবে? এর কি ওয়ানডে স্ট্যাটাস ছিল? ছিল না। এটা নিতান্তই একটা প্রস্তুতি ম্যাচ ছিল, যেখানে হার-জিত কখনোই মূখ্য থাকে না। থাকে ব্যাটিং-বোলিং অনুশীলনের বিষয়। পাকিস্তানের সঙ্গে দুটো বিভাগে হলেও ভারতের সঙ্গে ব্যাটিংটা ঠিক অনুশীলন বলতে যা বোঝায় তা হয়নি। কিন্তু বোলিং অনুশীলন ঠিকই হয়েছে।

কয়েকদিন আগে খালেদ মাহমুদ সুজন একটা ইন্টারভিউ-এ বলছিলেন, ওভালের মাঠে পৌনে ৪শ’ রানও নিরাপদ নয়! সে জায়গায় ভারতের মতো ব্যাটিং লাইনআপকে আমাদের বোলাররা ৩২০-এ আটকে দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

মাশরাফি দলে ছিলেন না। এমন ম্যাচে প্রত্যাশিত ছিল ব্যাটসম্যানরা একটু ভালো ব্যাটিং করবে। সেটা হয়নি। ক্রিকেটে এরকম হতেই পারে। একটা দিন ওলটপালট অনেক কিছু হতে পারে। বড় বড় সব দলেরই এমনকি ৫০-এর ঘরে অলআউট হওয়ার রেকর্ড আছে। এ একটা ম্যাচ ১শ’র নীচে অলআউট হয়েছে বলে বাংলাদেশ ১ যুগ আগে ফেরত যায়নি। এ একটা ম্যাচের পারফরম্যান্সই বাংলাদেশের শক্তি পরিমাপের জন্য যথেষ্ট নয়।

এ কথাগলো বলার উদ্দেশ্য হলো, দু’দিন ধরে বিভিন্ন মাধ্যমে, এমনকি মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার কেউ কেউ, যেভাবে দলের এবং ক্রিকেটারদের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করছেন, তাতে মনে হচ্ছে বাংলাদেশ দলটা বুঝি রীতিমতো ধ্বংস হয়ে গেছে। এদের কাছ থেকে বুঝি আর কোনকিছু পাওয়া সম্ভব নয়। ক্রিকেটাররা বুঝি সব বাঁজা হয়ে গেছে; এদের দ্বারা বুঝি আর জয়-টয় কিছু হবে না। আরে ভাই, ক’দিন আগে নিউজিল্যান্ডকে হারানোর পরই তো বললেন ‘বাংলাদেশ এবার কাঁপিয়ে দেবে, দেখিস’! এখন ১ ম্যাচ দেখেই তাদের শক্তি সম্পর্কে একেবারে জিরোতে নেমে গেলেন?

দিন দিন ক্রিকেটে উন্নতির সঙ্গে আমাদের সমর্থকদের ক্রিকেট বোঝা এবং এ বিষয়ে পরিণত বোধেরও যে উন্নতি দরকার সেটা আমরা প্রায়ই ভুলে যাই। ক্রিকেট যারা বোঝেন, তারা কোনো দলকে যত বেশিই ভালোবাসুক, তাদের খারাপ দিনে একটু মন খারাপ হবে, কিন্তু গালাগালি করতে পারে না। ভারতের সঙ্গে হারের পর কেউ কেউ লেগেছেন সাকিবের পেছনে। তাকে আর দলে দরকার আছে কি না এমন প্রশ্নও তুলেছেন। আচ্ছা, ক’দিন হলো, দাঁতে দাঁত চেপে এ সাকিব-ই কি আপনাদের শ্রীলংকার বিপক্ষে ঐতিহাসিক শততম ম্যাচে জয় এনে দেয়নি? সারাবিশ্বে বছরের বেশিরভাগ সময়ে সেরা অলরাউন্ডারের মুকুট পরে থেকে আপনাকে আমাকে গৌরবান্বিত কে করেছে? আর চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মতো বড় টুর্নামেন্টে সাকিবের অভিজ্ঞতার বিকল্প কে আছে?

বিজ্ঞাপন
Advertisement

সমর্থক হিসেবে আমরা আনেক বেশি আবেগী। ঠিক আছে। কিন্তু ভাই, আমাদের এসব আবেগের কথাবার্তা কোনো না কোনোভাবে কিন্তু ক্রিকেটারদের কানে যায়, তাদের নিকটজন আর পরিচিতজনের মাধ্যমে। একবার চিন্তা করুন তো-এসব নেতিবাচক কথাবার্তা, গালিগালাজ শুনলে তাদের ভেতরে কী প্রতিক্রিয়া হয়। তাদের মনসংযোগে কি বিঘ্ন ঘটে না? একটা গণমাধ্যম এরই মধ্যে সাকিবের দলে প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ফেলেছে। তা কতটা যুক্তিযুক্ত হয়েছে? বড় মঞ্চে সাফল্য পেতে অভিজ্ঞ খেলায়াড়ের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায়? এ যে আমরা নাসিরকে কেন দলে নেয়া হলো না-এ প্রশ্ন তুলছি, কেন? তার অভিজ্ঞতা আছে বলেই তো।

সুতরাং ভারতের সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচে কী হয়েছে সেদিকে তাকানোর কোনো দরকার আছে বলে আমি মনে করি না। বাংলাদেশ এখনো সেই দলটাই আছে, যারা সম্প্রতি আয়ারল্যান্ডে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েছে, যারা কিছুদিন আগেই শ্রীলংকা ও ইংল্যান্ডের সঙ্গে ওয়ানডে সিরিজ ড্র করেছে, যারা তারও আগে টানা ৬টা ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে এবং যারা এখন ওয়ানডে র‌্যাংকিংয়ে তিন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নকে পেছনে ফেলে ৬ নম্বরে অবস্থান করছে। এ দলটা আর যা-হোক, ২৪০ রানে দ্বিতীয়বার হারার দল না। মূল টুর্নামেন্ট শুরুর আগে যেটুকু মেঘ দেখা দিয়েছে তাতে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই; মেঘের আড়ালে সূর্য হাসে- তা কে না জানে!

আশা করি, এ ম্যাচে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সাম্প্রতিক সময়ের চিরচেনা বাংলাদেশকেই দেখা যাবে। মেঘের আড়ালের সেই হাসিমাখা সূর্যের আলোতে তারা ঝলমল করবে। তাদের চোয়ালবদ্ধ প্রতীজ্ঞা পারফরম্যান্সে অনুদিত হবে।

অবশ্য সবকিছু ঠিকঠাক হলেও যে জয় মিলে যাবে তা নয়। ইংল্যান্ড তার নিজের মাটিতে খেলবে। চেনা মাঠ আর চেনা দর্শকের সামনে খেলবে। বাড়তি সুবিধা আর প্রেরণা তারাই পাবে। তবে ইংলিশদের মাথার ওপর কিন্তু চাপও থাকবে সমান সমান। নিজেদের মাটিতে টুর্নামেন্ট জেতার চাপ।

সে তুলনায় বাংলাদেশের চাপ কিছুটা কম। নিকট অতীতে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলতেও পারেনি। বিশেষ করে নিয়মিত ভালো খেলতে শুরু করার পর এ প্রথম চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলছি আমরা। যতটুকু এখান থেকে পাব, সেটাই যথেষ্ট। না পেলেও মহাভারত অশুদ্ধ হবে না।

সুতরাং চাপটা আসলেই বাংলাদেশের কম। আর বড় টুর্নামেন্টে চাপমুক্ত খেলতে পারলে প্রায়ই সুযোগ এসে ধরা দেয়। সেই সুযোগটা নিতে পারলে এ ম্যাচে সম্ভাবনা আছে মাশরাফিদেরও। আসুন, আপাতত সেই সম্ভাবনার দিকেই তাকিয়ে থাকি। জয়তু টাইগারস।

লেখক- সাংবাদিক

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement

Loading...


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |