আসছে বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ ১৪২৪। পুরোনো বছরের গ্লানি মুছে নতুন দিন, নতুন প্রত্যাশায় নতুন বছরকে বরণ করতে বাঙালি জাতির আবেগের যেন কমতি নেই।
বাঙালি ঐতিহ্যের চিরন্তন সংস্কৃতিকে ধারণ করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘এসো হে বৈশাখ এসো, এসো,’ গানের সুরে বাংলা নববর্ষ ১৪২৪ কে স্বাগত জানাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে বর্ষবরণের ব্যাপক প্রস্তুতি।
বিপুল উৎসাহ, উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে দিনটিকে বরণ করতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে।
প্রতিবছরই বাংলা মাসের এই প্রথম দিনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সাজে ভিন্ন সাজে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী আর জনসাধারণে মুখরিত হয়ে ওঠে ক্যাম্পাসের প্রতিটি স্থান। মতিহারের সবুজ চত্বরে যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে আসে।
পহেলা বৈশাখ উদযাপনের মূল আকর্ষণ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ। প্রত্যেক বছরের ন্যায় চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে অনুষদ প্রাঙ্গণে তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়েছে।
বৈশাখকে কেন্দ্র করে চারুকলা অনুষদে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। এ উপলক্ষে অনুষদটি তিন দিনের বিশেষ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। কর্মসূচিতে পহেলা বৈশাখের শুরুতে সকাল সাড়ে ৮টায় উদ্বোধনী সঙ্গীতানুষ্ঠান। এরপর সকাল ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সামনে থেকে রাজশাহী অঞ্চলের সবচেয়ে বড় মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হবে। এছাড়াও থাকছে যন্ত্রসঙ্গীত, আবৃত্তি, নাটক, যাত্রাপালা ও নৃত্যনুষ্ঠান।
সরেজমিনে চারুকলা অনুষদে দেখা যায়, বৈশাখ বরণের প্রস্তুতিতে শিক্ষার্থীরা দারুণ ব্যস্ত সময় পার করছেন। বিভিন্ন ধরনের ছবি আঁকছেন তারা। কেউ বা মুকুট তৈরিতে ব্যস্ত। কেউ বা ব্যস্ত ডামি তৈরিতে। এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রায় ‘গিরগিটি’কে থিম হিসাবে ধরা হয়েছে। এছাড়াও প্ল্যাকার্ড, পাখা ও বিভিন্ন ধরণের মুখোশ তৈরি করছেন শিক্ষার্থীরা।
পহেলা বৈশাখের প্রস্তুতি সম্পর্কে মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আহমেদ বুলবুল বলেন, ‘নতুন বর্ষকে বরণ করে নিতে চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের বাড়তি অনুভূতি কাজ করে। বৈশাখে বাঙালির সংস্কৃতিকে শতভাগ ফুটিয়ে তুলতে আমরা অনেক কিছুই করে থাকি। বরাবরের মতো আমাদের সংস্কৃতির সবকিছুই থাকবে এবারের আয়োজনে।’
কারুশিল্প বিভাগের শিক্ষক ও পহেলা বৈশাখ উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক আমিরুল মোমেনীন চৌধুরী বলেন, ‘নতুন বছরকে বরণের সকল প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রস্তুতি শেষ করার জন্য আমাদের শিক্ষার্থীরা দিনরাত নিরলস পরিশ্রম করছে। এবারও সুষ্ঠুভাবে দিনটি উদযাপন করা যাবে বলে আশা করছি।’
এছাড়াও গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, বাংলা, নাট্যকলা ও সঙ্গীত, আইন, মার্কেটিং, নৃ-বিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা, লোক প্রশাসনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সকল বিভাগের পক্ষ থেকে বর্ষবরণের বিভিন্ন প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
পহেলা বৈশাখে সার্বিক নিরাপত্তা বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোক্টর অধ্যাপক মজিবুল হক আজাদ খান বলেন, ‘প্রতিবারের মতো এবারও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে জাঁকজমকপূর্ণভাবে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করা হবে। নিরাপত্তার বিষয়ে রাষ্ট্র আরোপিত সকল বিধি-নিষেধ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও প্রযোজ্য হবে। সবাই যাতে পহেলা বৈশাখ নির্বিঘ্নে উদযাপন করতে পারে সে জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর অবস্থানে থাকতে বলা হয়েছে।’
এসএস