রাজধানীতে অর্ধেকে নেমেছে তরমুজের দাম
রাজধানীতে হঠাৎ তরমুজের দরপতন হয়েছে। একদিনে ব্যবধানে তা অর্ধেকে নেমে এসেছে। প্রতিপিস তরমুজ আগে যেখানে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হতো তা এখন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়।
শনিবার (৩০ মার্চ) সকালে রাজধানীর মগবাজার ওয়ারলেস সড়কের পাশে তরমুজ বিক্রির এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। আগের তুলনায় দাম কমে যাওয়ায় লোকজনকে হুমড়ি খেয়ে তরমুজ কিনতে দেখা গেছে। ক্রেতারা বলছেন, গত সপ্তাহের তুলনায় তরমুজের দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে।
এছাড়া চলতি রমজানে তরমুজের দাম বেশি হওয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তরমুজ বয়কটের ডাক দেয় সাধারণ মানুষ। ফলে অর্ধেক দামে তরমুজ বিক্রি করলেও ক্রেতা পাচ্ছে না বিক্রেতারা।
আল আমিন খান থাকেন মগবাজার মধুবাগ। পেশায় ব্যবসায়ী। তিনি আরটিভিকে বলেন, গত সপ্তাহে তরমুজের যে দাম ছিল, চলতি সপ্তাহে তার অর্ধেকে নেমে এসেছে। রমজানের শুরুতে তরমুজ কিনতে না পারলেও এখন কেনা যাচ্ছে।
তরমুজ ব্যবসায়ী রমজান আলী বলেন, হঠাৎ বৃষ্টির কারণে জমিতে অনেক তরমুজ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। লোকসানের ভয়ে কৃষকরা তাই পরিপক্ক হওয়ার আগেই তরমুজ বাজারে তুলছেন। তাই আগের তুলনায় দাম অনেকটা কম। আবার দাম কমে যা্ওয়ায় উৎপাদন খরচ না উঠায় অনেক কৃষক তরমুজ তুলছেন না। তাই এখন জমিতেই পঁচে যাচ্ছে তরমুজ।
আরেক ব্যবসায়ী সোবহান বলেন, আমরা ৬০০ পিস তরমুজ এনেছি। আগে যা প্রতিপিস ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি করতাম। এখন তা ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি করছি। অর্ধেকের মত বিক্রি হয়েছে। আজকের মধ্যে আশা করছি বাকিগুলোও বিক্রি হয়ে যাবে।
এদিকে পটুয়াখালীর বাজারে তরমুজ থাকলেও নেই ক্রেতা। পাইকাররাও দিচ্ছেন না দাম। তাই বিক্রি হচ্ছে না তরমুজ। পচনশীল হওয়ায় নামে মাত্র দামে পাইকারদের কাছে তরমুজ বিক্রি করছেন স্থানীয় কৃষকরা।
এবার জেলায় প্রচুর তরমুজ উৎপাদন হয়েছে। তবে দাম খুব কম। তরমুজ বিক্রি করে উৎপাদন খরচ তুলতে পারছেন না কৃষকরা। ফলে লোকসানের মুখে পড়ছেন তারা।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, তরমুজ পাইকারি বিক্রি করে উৎপাদন খরচ তো দূরের কথা, পরিবহন খরচই উঠছে না। ফলে কৃষকদের মাথায় হাত। তরমুজ চাষিরা দিশেহারা হয়ে পড়ছেন।
পটুয়াখালী চরবিশ্বাসের কৃষকরা জানান, যারা খেত কিনে রেখেছিলেন বৈরি আবহাওয়ার কারণে তারা গত দুদিন অপরিপক্ক তরমুজসহ সব তরমুজ কেটে বাজারে তুলেছেন। ফলে বাজারে তরমুজ সরবরাহ থাকলেও ক্রেতা নেই। আবার কাঁচা থাকার কারণে সাধারণ ক্রেতারাও তরমুজ কিনছেন না। পাশাপাশি খেতে এখনও ৪০ থেকে ৫০ ভাগ তরমুজ রয়েছে।
কৃষকরা আরও জানান, কয়েক দিন আগেও এক ট্রাক তরমুজ বিক্রি হয়েছে ৭-৮ লাখ টাকায়। এখন তা ২-৩ লাখ টাকার বেশি বিক্রি করা যাচ্ছে না। অন্যদিকে খেতের তরমুজ ৪-৫ দিনের মধ্যে পেকে যাবে। তখন তরমুজ সরবরাহ আরো বাড়বে। তখনো দাম কম থাকলে কৃষকেরা পকেটের টাকা গচ্চা দিয়ে পরিবহন খরচ করে তরমুজ নিয়ে হয়তো বাজারে যাবেন না। তখন খেতেই পঁচে যাবে সব তরমুজ।
কৃষকেরা বলছেন, কয়েক দিন আগে সবচেয়ে ভালো মানের ৮-১২ কেজি ওজনের ১০০টি তরমুজ পাইকারি বিক্রি ছিল ৪ হাজার টাকা। যা এখন কমে হয়েছে ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা। যা দিয়ে উৎপাদন খরচও উঠবে না। এরপর তা পরিবহন খরচ করে বাজারে নেওয়াতো আর সম্ভব না।
পটুয়াখালীতে এবার আগাম তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে এবং নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে উৎপাদিত এ ফসলের দাম না পেয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় কৃষকরা।
মন্তব্য করুন