বাংলাদেশের ৩০-৩৫ শতাংশ বায়ুদূষণের জন্য দায়ী প্রতিবেশী দেশগুলো: রিজওয়ানা হাসান

আরটিভি নিউজ

বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫ , ১০:৩১ এএম


বাংলাদেশের ৩০-৩৫ শতাংশ বায়ুদূষণের জন্য দায়ী প্রতিবেশী দেশগুলো: রিজওয়ানা হাসান
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের ৩০-৩৫ শতাংশ বায়ুদূষণের জন্য প্রতিবেশী দেশগুলোকে দায়ী করেছেন পরিবেশ, বন, জলবায়ু পরিবর্তন ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এজন্য আন্তঃসীমান্ত বায়ুদূষণ মোকাবিলায় কার্যকর আঞ্চলিক পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। 

বিজ্ঞাপন

রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, বাংলাদেশের বায়ুদূষণের ৩০-৩৫ শতাংশ আসে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে। তাই এ সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক আলোচনার গণ্ডি পেরিয়ে বাস্তব পদক্ষেপ ও আঞ্চলিক সহযোগিতা জরুরি।

বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) ভোরে কলম্বিয়ার কার্টাগেনায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দ্বিতীয় বৈশ্বিক সম্মেলনে বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া সাইড ইভেন্টে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

এ সময় পরিবেশ উপদেষ্টা বাংলাদেশের বায়ুদূষণ সমস্যা, বিশেষ করে ঢাকার ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের বহুমাত্রিক বায়ুদূষণ সমস্যা মোকাবিলায় বায়ুমান নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অন্তর্বর্তীকালীন লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই আইনি বিধিমালায় দূষণকারী খাতগুলোর জন্য নির্দিষ্ট মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে এবং অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের কাঠামো তৈরি করা হয়েছে।

রিজওয়ানা হাসান বলেন, ২০২৪ সালে চূড়ান্ত হওয়া জাতীয় বায়ুমান ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার বাস্তবায়ন রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পিছিয়ে ছিল। তবে, এখন তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। পরিকল্পনার লক্ষ্য হলো মানুষের দূষণজনিত ঝুঁকি কমানো ও পরিষ্কার বায়ুর দিন বৃদ্ধির মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা।

বিজ্ঞাপন

বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বাংলাদেশ ক্লিন এয়ার প্রকল্প চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে এবং সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে শিগগিরই তার বাস্তবায়ন শুরু হবে উল্লেখ করে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, এই প্রকল্প নিয়ন্ত্রক কাঠামো শক্তিশালী করা, আইন প্রয়োগ জোরদার করা, শিল্প কারখানায় দূষণ পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ এবং গণপরিবহন খাত আধুনিকায়নের ওপর গুরুত্ব দেবে।

ঢাকার আশপাশের এলাকাগুলোকে ইটভাটামুক্ত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, যেখানে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ থাকবে। এ ছাড়া ২০২৫ সালের মে থেকে পুরোনো বাস ধাপে ধাপে তুলে দেয়া হবে, যা পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে বাস্তবায়ন করবে।

উপদেষ্টা বলেন, অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ অভিযানের ফলে ইতোমধ্যে বায়ুমানের কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে এই অগ্রগতি ধরে রাখতে কঠোর নজরদারি ও খাতসমূহের আধুনিকায়ন জরুরি।

রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় বিপুল সংখ্যক মানুষ বায়ুদূষণের কারণে মারা যায় এবং ঢাকার মতো দূষিত শহরগুলোতে মানুষের গড় আয়ু ৫-৭ বছর কমে যাচ্ছে। এই সংকট আমাদের সবার জন্য, আমাদের শিশু, বাবা-মা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হুমকি। নিষ্ক্রিয়তার মূল্য অনেক বেশি—আমাদের এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। আমি আশাবাদী; কারণ আমি বিশ্বাস করি, এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। প্রযুক্তি ও বিকল্প ব্যবস্থা আমাদের হাতে রয়েছে, শুধু প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবায়ন দরকার। বায়ুদূষণ শুধুই পরিবেশগত ইস্যু নয়, এটি মানবিক সংকট।

সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধি, পরিবেশ ও জ্বালানি খাতের নীতিনির্ধারক, আন্তর্জাতিক ও উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি, গবেষক, স্থানীয় প্রশাসন, পরিবহন ও শিল্পখাতের বিশেষজ্ঞ এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। তারা দক্ষিণ এশিয়ায় বায়ুদূষণ রোধে যৌথভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন।

আরটিভি/এসএইচএম/এস

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission