আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের দিনকে সামনে রেখে ১০ দফা মানবাধিকার সনদ প্রকাশ করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এই ১০ দফায় প্রতিদ্বন্দ্বী সব রাজনৈতিক দলকে মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনটি। এ সময় আন্তর্জাতিক চুক্তির প্রতি বাংলাদেশের অঙ্গীকারের পাশাপাশি সংবিধানে উল্লিখিত মানবাধিকার-সংক্রান্ত বিষয়গুলো রক্ষায় বাধ্যবাধকতার কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছে অ্যামনেস্টি।
অ্যামনেস্টির মানবাধিকার সনদে বলা হয়, ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী সব রাজনৈতিক দলের মূল পরিকল্পনায় যেন মানবাধিকার সুরক্ষা ও উন্নয়নের বিষয়টি থাকে, তা নিশ্চিত করতে সব দলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে তারা। পাশাপাশি এই সনদে বাংলাদেশে বিদ্যমান পরিস্থিতির সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরে কিছু সুপারিশ করেছে সংগঠনটি।
এর মধ্যে মতপ্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে সাইবার নিরাপত্তা আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের মামলায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি। এই দফায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও মানদণ্ড অনুযায়ী সাইবার নিরাপত্তা আইন সংশোধন এবং আইনের ২১, ২৫ ও ২৮ ধারা বাতিল করার পাশাপাশি অভিযুক্ত সবাইকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠনটি। একইসঙ্গে মানহানিকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করে জেল-জরিমানার মতো বিধান রদ করার আহ্বানও জানিয়েছে তারা।
অ্যামনেস্টি আরও বলেছে, সাংবাদিকদের হয়রানি ও ভয় দেখাতে আইনের অপব্যবহার বন্ধ করুন। নাগরিকদের বিক্ষোভ মোকাবিলার ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় ও অতিরিক্ত শক্তির ব্যবহার থামাতে হবে। শান্তিপূর্ণ সমাবেশের সুরক্ষাসহ তা পালনে সহায়তার বাধ্যবাধকতা পূরণ করুন।
এছাড়া প্রতিবাদের সুরক্ষা এবং গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে দায়মুক্তির অবসান চেয়ে সংস্থাটি বলেছে, সব ধরনের গ্রেপ্তার যাতে যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও মানদণ্ড অনুযায়ী করা হয়, তা নিশ্চিত করুন। এর মধ্যে রয়েছে গ্রেপ্তারের কারণ ও আটক রাখার স্থান জানানো, গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে অবিলম্বে বিচারকের সামনে হাজির করা ও আইনি পরামর্শ পাওয়া নিশ্চিত করা এবং মুক্ত ও ন্যায়বিচারের অধিকার নিশ্চিত করা।
আরেকটি দফায় রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধান চেয়ে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অধিকার রক্ষা করুন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে ওঠা নির্যাতনের অভিযোগ তদন্ত করুন। দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনুন। রোহিঙ্গা শিশুদের যথাসময়ে উপযুক্ত, মানসম্মত ও আনুষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করুন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যু ও নির্যাতনের ঘটনায় পুঙ্খানুপুঙ্খ, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত পরিচালনার দাবিও জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনটি। পাশাপাশি মৃত্যুদণ্ড না দিয়ে অপরাধীদের জবাবদিহিতা নিশ্চিতের সুপারিশও করেছে তারা।
করপোরেট দায়বদ্ধতা ও শ্রম অধিকার সমুন্নত রাখার আহ্বান জানিয়ে আরেকটি দফায় সংগঠনটি বলেছে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাধার মুখে পড়েন বাংলাদেশে শ্রমিকরা। গত অক্টোবরে ন্যূনতম মজুরির আন্দোলনে তিন শ্রমিকের মৃত্যুসহ নানা ঘটনা উল্লেখ করে সনদে কিছু সুপারিশও করেছে অ্যামনেস্টি।
সনদের এই দফায় তারা আহ্বান করেছে, শ্রমিকদের বিক্ষোভে সহিংস দমনপীড়ন বন্ধ করুন। শ্রমিক নেতাসহ অন্য বিক্ষোভকারীদের মৃত্যুর ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত করুন। অপরাধীদের জবাবদিহির আওতায় আনুন। শ্রমিকরা যাতে সংগঠন করার স্বাধীনতার অধিকার চর্চা করতে পারেন, পোশাক কারখানার শ্রমিকরা যাতে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী পর্যাপ্ত মজুরি পান, তা নিশ্চিত করুন।
এছাড়া, নারী এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের অধিকার রক্ষার ব্যাপারেও তাগিদ দেওয়া হয়েছে বৃহস্পতিবার অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মানবাধিকার সনদটিতে। সেইসঙ্গে জলবায়ুসংকট মোকাবিলায় অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশও করা হয়েছে সেখানে।