দেশের গুরুত্বপূর্ণ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে তীব্র স্রোতের কারণে ফেরি পারাপার চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। দৌলতদিয়া ঘাট প্রান্তে ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ সারিতে আটকে আছে সহস্রাধিক যানবাহন। এখানে ৩-৪ দিনেও ফেরির নাগাল মিলছে না বলে ভুক্তভোগী চালকদের অভিযোগ।
ঘাট সূত্রে জানা গেছে, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ায় বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) পদ্মা নদীর পানি ১০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এতে নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে দেশের গুরুত্বপূর্ণ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। প্রতিটি ফেরির নদী পার হতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ সময় লাগছে।
এছাড়াও বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল কার্যত বন্ধ রয়েছে। যে কারণে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় কয়েকদিন ধরে তৈরি হচ্ছে পণ্যবাহী যানবাহনের লম্বা সারি। প্রতিটি পণ্যবাহী যানবাহনকে ফেরির নাগাল পেতে অপেক্ষা করতে হচ্ছে ৩ থেকে ৪ দিন পর্যন্ত।
শুক্রবার (২০ আগস্ট) বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, দৌলতদিয়া ঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের অন্তত ৩ কিলোমিটার জুড়ে অপচনশীল পণ্যবাহী ট্রাকের দীর্ঘসারি। এর মধ্যে রয়েছে প্রায় শতাধিক যাত্রীবাহী যানবাহন। একইভাবে ঘাট থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দুরে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের গোয়ালন্দ মোড় হতে আহলাদিপুর বাজার পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার এলাকায় পণ্যবাহী ট্রাক সিরিয়ালে আটকে রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে এ প্রান্তে সহস্রাধিক গাড়ি আটকে রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। তবে জনদুর্ভোগ কমাতে যাত্রীবাহী যানবাহন ও কাঁচামাল বোঝাই ট্রাকগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপার করছে কর্তৃপক্ষ।
ঘাট সূত্রে জানা যায়, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ১৮টি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হলেও পদ্মা-যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে তীব্র স্রোতের সৃষ্টি হচ্ছে। যে কারণে নৌরুটের ফেরিগুলোর স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হয়ে ফেরির ট্রিপ সংখ্যা কমে গেছে।
ফরিদপুর থেকে ছেড়ে আসা বিআরটিসির ট্রাক চালক রাসেল মিয়া ও আ. সালাম আরটিভি নিউজকে বলেন, তারা নদী শাসনের কাজে ব্যবহৃত জিও ব্যাগ বোঝাই করে নরসিংদী যাচ্ছেন। গত সোমবার তারা গোয়ালন্দ মোড়ে এসে সিরিয়ালে আটকা পড়েন।
যশোর থেকে ছেড়ে আসা পণ্যবাহী ট্রাক চালক রফিকুল ইসলাম আরটিভি নিউজকে বলেন, তিন দিন ধরে এখানে অপেক্ষা করছি।
এদিকে গোয়ালন্দ মোড় এলাকায় খোলা সড়কে রাত কাটাতে চালক ও সহকারীরা নানা ধরনের দুর্ভোগের সম্মুখীন হচ্ছেন বলে জানান। খাবার, পানি ও টয়লেটের জন্য তাদের বেশি সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাদের।
রাজবাড়ীর ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর (টিআই) জহুরুল হক বলেন, দৌলতদিয়া ফেরিঘাটকে যানজট মুক্ত রাখতে গোয়ালন্দ মোড় এলাকায় পচনশীল পণ্যবাহী গাড়িগুলোকে আটকে রাখা হচ্ছে। আজ শুক্রবার ছুটির দিনেও সেখানে অন্তত ৫-৬ কিলোমিটার পর্যন্ত যানবাহনের দীর্ঘ সারি রয়েছে। ঘাটে গাড়ির চাপ কমে আসলেই সেখান থেকে গাড়িগুলো সিরিয়াল অনুসারে ঘাটের দিকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) জামাল হোসেন আরটিভি নিউজকে বলেন, বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ। পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে তীব্র স্রোতের সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়ায় নদী পারের জন্য ট্রাকগুলোকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। তবে দুর্ভোগ কমাতে যাত্রীবাহী যানবাহন ও কাঁচামালের ট্রাকগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপার করা হচ্ছে।
এসআর/