চুয়াডাঙ্গা সদরে এক নারীর আল্ট্রাসাউন্ডে গর্ভে যমজ সন্তান আছে বলে রিপোর্ট দেওয়া হলেও প্রসব হয় একটি সন্তানের।
রোববার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলার ঠাকুরপুর গ্রামের মসজিদপাড়ার রজনী খাতুন সদর হাসপাতালে সন্তান জন্ম দেন। তবে সদর হাসপাতালে আল্ট্রাসাউন্ড করা চিকিৎসকদের দাবি, সেখানকার রিপোর্টে একটি সন্তানই দেখা যায়। তবে অন্তঃসত্ত্বার স্বজনদের দাবির কারণে তিনি রিপোর্ট পরিবর্তন করেন।
জানা গেছে, গর্ভাবস্থায় দুই হাসপাতালে তিনবার আল্ট্রাসাউন্ড হয় ওই নারীর। সবগুলো রিপোর্টেই যমজ সন্তান গর্ভে আছে বলে উল্লেখ করা হয়। তবে ওই নারীর অস্ত্রোপচার করা চিকিৎসক জানান, গর্ভে একটি সন্তানই ছিল।
রজনীর স্বামী রাসেল মিয়া বলেন, আমার স্ত্রী ২৮ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা থাকা অবস্থায় গত ৯ ফেব্রুয়ারি জীবননগর উপজেলা শহরের মা নার্সিং হোম অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যাই। সেখানে তার আল্ট্রাসাউন্ড করেন নাজমুল হাসান। আমার স্ত্রীর গর্ভে দুটি যমজ বাচ্চা আছে বলে জানান চিকিৎসক।
তিনি বলেন, ৩৪ সপ্তাহ ৪ দিন পর গত ৩১ মার্চ তাকে আবার ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যাই। তখনও একই রিপোর্ট দেন এফ আফরোজ। শনিবার (১৫ এপ্রিল) প্রসববেদনা শুরু হলে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করি। সেখানে আজ সোমবার সকালে আল্ট্রাসাউন্ড করেন নুরজাহান খাতুন রুমি। এখানেও একই রিপোর্ট দেওয়া হয়। পরে দুপুর ১২টার দিকে সিজার করেন সদর হাসপাতালের গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. আকলিমা খাতুন। তিনি জানান, গর্ভে একটাই ছেলেসন্তান পাওয়া গেছে।
তিনি আরও বলেন, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ২ বার আল্ট্রাসাউন্ড করে একই রিপোর্ট দিয়েছে। অস্ত্রোপচারের আগেও একই রিপোর্ট দিয়েছে সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাহলে অস্ত্রোপচারের পর কীভাবে একটি সন্তান পাওয়া গেছে বললেন চিকিৎসক? আর একটা সন্তান গেল কোথায়? এ বিষয়ে আমরা পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করব।
সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. নুর জাহান রুমি জানান, রজনী খাতুনের আল্ট্রাসনোগ্রাম করে একটি বাচ্চাই পাওয়া গেছে। কিন্তু রোগীর লোকজন দুটো বাচ্চা আছে দাবি করলে পরে আমি দুটো লিখে দিয়েছি।
সদর হাসপাতালের গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. আকলিমা খাতুন বলেন, সিজারিয়ান অপারেশন করে একটি বাচ্চাই পাওয়া গেছে।
মা নার্সিং হোম অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক জাকির আহমেদ শাহীন জানান, ভুল হয়ে গেছে। ভুলের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। আমার এখানে যারা আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট দিয়েছেন তারা প্যারামেডিক্যাল ডাক্তার।
সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. আতাউর রহমান মুন্সী জানান, ডা. নুর জাহান নতুন যোগদান করেছে। ছোট মানুষ ভুল করে ফেলেছে। সে বিষয়টি আমাকে জানিয়েছে।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. সাজ্জাৎ হাসান জানান, কোন এমবিবিএস চিকিৎসক ছাড়া অন্য কেউ আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে পারেন না। আর সদর হাসপাতালের রিপোর্ট কেন ভুল হলো, সে বিষয়ে হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ব্যবস্থা নেবেন। তিনি ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হলে। তদন্ত কমিটি গঠন করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।