ঢাকাশনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫, ২৯ চৈত্র ১৪৩১

হাসপাতাল থেকে যমজ সন্তান চুরির অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী

শনিবার, ২০ মে ২০২৩ , ০৯:৫১ পিএম


হাসপাতাল থেকে যমজ সন্তান চুরির অভিযোগ

রাজশাহীতে প্রসবের পর এক নারীর যমজ সন্তান চুরির অভিযোগ উঠেছে একটি বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি, এই নারীর পেটে কোনো বাচ্চাই ছিল না। যদিও পেটে বাচ্চা থাকার ব্যাপারে চিকিৎসা করিয়েছেন সৈয়দা তামান্না আখতার নামের এই নারী।

বিজ্ঞাপন

সৈয়দা তামান্না আখতার রাজশাহী নগরীর তালাইমারী এলাকার বাসিন্দা। তার স্বামীর মো. পিয়াস একজন প্রবাসী। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার (১৮ মে) প্রসব বেদনা উঠলে তামান্নাকে রাজশাহী নগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকার বেসরকারি রয়্যাল হাসপাতালে আনা হয়। দুপুর ৩টার দিকে তাকে হাসপাতালের ওটিতে নেওয়া হয়। সন্ধ্যায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, তামান্নার পেটে কোনো বাচ্চা নেই। তখন বাচ্চা চুরির অভিযোগ তুলে হাসপাতালটিতে হট্টগোল শুরু করেন তামান্নার স্বজনরা।

বিজ্ঞাপন

তামান্না গর্ভধারণের পর থেকেই ডা. নিশাত আনাম বর্ণার কাছে চিকিৎসা নিতেন। চিকিৎসক তাকে জানিয়েছিলেন, তামান্নার পেটে যমজ সন্তান রয়েছে। তামান্নার প্রসবের ব্যথা উঠলে তিনি ভর্তি হয়েছিলেন ডা. নিশাতের অধীনেই। ডা. নিশাত তাকে অপারেশন থিয়েটারেও (ওটি) নিয়েছিলেন সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের জন্য। ইনজেকশন দিয়ে অচেতনও করা হয়েছিল। কিন্তু ডা. নিশাত এখন বলছেন, এই নারীর পেটে কোনো বাচ্চাই ছিল না।

পেটে বাচ্চা নেই শুনে রোগীর স্বজনেরা হট্টগোল শুরু করলে হাসপাতালে পুলিশ আসে। এ সময় হাসপাতালের ওটিতে এক বোতল মদ পাওয়া যায়। তবে পুলিশ এ নিয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

তামান্নাকে অচেতন করার ইনজেকশন দিয়েছিলেন রয়্যাল হাসপাতালের অ্যানেসথেসিয়ার চিকিৎসক আলী চৌধুরী রিমন। তিনি বলেন, রোগীর ভাইয়ের কাছে শুনেছেন তার পেটে দুটি বাচ্চা ছিল। তারও মনে হয়েছে পেটে বাচ্চা আছে। তাই তিনি অচেতন করার ইনজেকশন দেন।

বিজ্ঞাপন

সৈয়দ তামান্না আখতার বলেন, আমি ৯ মাস ১২ দিনের অন্তঃসত্ত্বা ছিলাম। এর আগেও আমি ডাক্তার দেখিয়েছি। আমার দুটি বাচ্চা ছিল। আল্ট্রাসনোগ্রামে দেখা গেছে, একটি ছেলে, একটি মেয়ে। অচেতন করার ইনজেকশন দেওয়ার পর আমাকে ওটিতে নেওয়া হয়। তখন আমি বুঝতে পারলাম আমার পুরো শরীর ঝাঁকি দিচ্ছে। মনে হলো বাচ্চা টেনে বের করা হচ্ছে। এরপর আমার আর কিছু মনে নেই। যখন জ্ঞান ফিরলো তখন আমি জানতে পারলাম আমার পেটে নাকি কোনো বাচ্চাই ছিল না। এটা কিছুতেই হতে পারে না।

তামান্নার শাশুড়ি তাহেরা বিশ্বাস বলেন, তামান্নাকে ওটিতে নিয়ে যাওয়ার পর তারা বাচ্চার জন্য নতুন কাপড়ও নিয়ে যান। এর কিছুক্ষণ পরেই তারা কাপড় ফিরিয়ে দিয়ে যান। আমাদের বলে রোগীর প্রেশার উঠেছে, ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে। এখন ঘুমাচ্ছে। প্রেসার কমলে অপারেশন করা হবে। তার কিছুক্ষণ পরই আমার মেয়ে ওটিতে গিয়ে দেখে তামান্নার পেট নেমে গেছে। আগের মতো উঁচু নেই। বাচ্চা না থাকলে পেট কমলো কীভাবে?

হাসপাতালটির গাইনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিশাত আনাম বর্ণা বলেন, তামান্না প্রেগন্যান্সির সব সিম্পটম নিয়ে এখানে এসেছিলেন। তাকে পরীক্ষা করার আগেই তার প্রসব বেদনা ওঠে। এ জন্য দ্রুত ওটিতে নেওয়া হয়। কিন্তু তার পেটে কোনো বাচ্চা পাওয়া যায়নি। এই রোগী যে গর্ভবতী ছিল, সে সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্রও পরিবারের লোকজন আগে আমাদেরকে দেখায়নি।

এদিকে, শনিবার (২১ মে) দুপুর পর্যন্ত তামান্না আখতার রয়্যাল হাসপাতালেই ভর্তি ছিলেন। বিষয়টি নিয়ে রয়্যাল হাসপাতালে দায়িত্বরত কেউ কথা বলতে রাজি হননি। হাসপাতালটির মালিকপক্ষের একজন ডা. ইকবাল বারী। তার ব্যক্তিগত মোবাইলে ফোন করা হলে একজন নারী ফোনটি রিসিভ করেন। তিনি জানান, ডা. ইকবাল বারী রয়্যাল হাসপাতাল নিয়ে কোনো কথা বলবেন না। হাসপাতালে দায়িত্বরতদের সঙ্গেই কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।

নগরীর রাজপাড়া থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) কাজল নন্দী বলেন, এ বিষয়ে একটি মৌখিক অভিযোগ পাওয়া গেছে। আমরা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনাস্থল পরিদর্শনও করেছি। এখন তদন্ত চলছে। এই রোগী ডা. নিশাতের কাছে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রেগন্যান্সির চিকিৎসা নিয়েছেন। তারপর আর চিকিৎসা নেননি। পরে আরেকটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। এই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কিছুদিন আগে আল্ট্রাসনোগ্রাম করিয়েছেন। আমরা ওই রিপোর্টটা সংগ্রহ করার চেষ্টা করছি। প্রাথমিক তদন্ত শেষে এ বিষয়ে সঠিক কথা বলা যাবে।

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |