ঢাকা

নদের দুই পাড়ে বিদ্যালয়ের ২ অংশ

কুড়িগ্রাম (উত্তর) প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

মঙ্গলবার, ৩১ মে ২০২২ , ০১:১৯ পিএম


loading/img
ছবি: আরটিভি নিউজ

কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলায় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ব্রহ্মপুত্র নদের এপারে এক অংশ এবং ওপারে এক অংশ। নদের পশ্চিমপাড়ে প্রধান শিক্ষক তার নিজের পছন্দের জায়গায় ঘর নির্মাণ করে একাই শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাচ্ছেন। অন্যদিকে ওই বিদ্যালয়ের সব সহকারী শিক্ষক মিলে পূর্বপাড়ে চালাচ্ছেন পাঠদান কার্যক্রম।

বিজ্ঞাপন

গত ৮ এপ্রিল থেকে এ অবস্থা চললেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি উপজেলা শিক্ষা অফিস। তবে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার দাবি, উপজেলা শিক্ষা কমিটির সিদ্ধান্ত ছাড়া এ বিষয়ে তার কিছুই করার নেই। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি চাইলে বিদ্যালয়টি বন্ধ করে দিতে পারেন বলেও দাবি করেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।

 জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনের ঝুঁকিতে থাকায় উপজেলার কোদালকাটি ইউনিয়নের শংকর মাধবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-১ নদের পূর্বপাড়ে স্থানান্তর করতে গত ১৩ মার্চ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম। ওই আবেদনে স্থানীয় সংসদ সদস্য, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের লিখিত সুপারিশও নেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু হঠাৎ করেই প্রধান শিক্ষক তার মত পাল্টিয়ে নিজস্বার্থে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই গত ৮ এপ্রিল রাতের বেলায় বিদ্যালয়ের ঘর ভেঙে নিজ এলাকা উপজেলার মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের তারাবর মৌজার ভেলামারীতে নেন। অন্যদিকে ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা বিদ্যালয়ের কাছাকাছি ব্রহ্মপুত্রের পূর্বপাড়ের কোদালকাটি ইউনিয়নের শংকর মাধবপুরের বিলপাড়ায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম চালাচ্ছেন।

ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন এই দুই এলাকার দূরত্ব প্রায় ৪ কিলোমিটার। এই বিদ্যালয়টি নিয়ে টানাটানিতে হতাশায় পড়েছেন শংকর মাধবপুর এলাকার শতাধিক শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক ও এলাকাবাসী। তারা পূর্বপাড়েই বিদ্যালয়টি রাখার জোর দাবি জানান।

উপজেলা শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে কোদালকাটি ইউনিয়নের শংকর মাধবপুরের বিলপাড়া এলাকা ব্রহ্মপুত্রের পূর্বপাড়। জনবসতিপূর্ণ এলাকার একটি ঘরে তিনজন সহকারী শিক্ষক অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীকে পাঠদান করাচ্ছেন। এ জায়গা থেকে নদী পথে ইঞ্জিনচালিত নৌকাযোগে চার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে যেতে হয় মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের ভেলামারী এলাকায় ব্রহ্মপুত্রের পশ্চিমপাড়। সেখানে প্রথমে কোনো শিক্ষককে দেখা না গেলেও কিছুক্ষণ পর হাজির হন প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম। এ সময় ঘরের ভেতর ১১ জন শিক্ষার্থীকে খেলাধুলা করতে দেখা গেছে। দুর্গম এ চরের আশপাশে ৬-৭টি বসতবাড়ি পাওয়া যায়।

বিজ্ঞাপন

শংকর মাধবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-১-এর সহকারী শিক্ষক কল্পনা খাতুন বলেন, বিদ্যালয়ের সরকারি ঘরসহ এর মালামাল আত্মসাৎ, কাজ না করেই ভুয়া বিল ভাউচার দেখিয়ে সরকারি টাকা আত্মসাতসহ নানান অপকর্মে লিপ্ত ওই প্রধান শিক্ষক। তার এসব অপকর্ম ঢাকতে ওই প্রধান শিক্ষক স্ত্রীকে বানিয়েছেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি। তাদের স্বামী-স্ত্রীর স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম-দুর্নীতিতে অতিষ্ঠ হয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না সহকারী শিক্ষকগণ।

বিজ্ঞাপন

সহকারী শিক্ষক আমিনুল ইসলাম বলেন, ২০১৯ বিদ্যালয়টি নদী ভাঙনের শিকার হয়। ওই সময় কোনো প্রকার নিলাম বা কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই বিদ্যালয়ের একটি টিনশেড ঘর, লোহার অ্যাঙ্গেলসহ তিন লক্ষাধিক টাকার মালামাল আত্মসাৎ করেন প্রধান শিক্ষক। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার পরামর্শ মোতাবেক ক্যাচমেন্ট এলাকার পূর্ব বিলপাড়া এলাকায় পাঠদান কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান সরকার বলেন, কমিটির মিটিং ডেকে স্কুল ভাঙার কথা ছিল। কিন্তু মিটিং করে নাই। রাতারাতি প্রধান শিক্ষক স্কুল ভেঙে নিয়ে গেছে। এ ছাড়াও বিএ পাসের দোহাই দিয়ে প্রধান শিক্ষক তার স্ত্রীকে সভাপতি করেন। যদিও ওই এলাকায় আরও কয়েকজন অভিভাবক বিএ পাস ছিল। কিন্তু তাদের সভাপতি বানানো হয়নি।

অভিভাবক আলাউদ্দিন বলেন, পূর্বপাড়ে তিন গ্রামের শতাধিক ছাত্রছাত্রী রয়েছে। প্রধান শিক্ষকের স্বেচ্ছাচারিতায় খোলা আকাশের নিচে কোমলমতি শিশুদের পাঠদান করতে হচ্ছে। এসব ছাত্রছাত্রীদের কথা চিন্তা করে পূর্বপাড়েই বিদ্যালয়টি রাখা জরুরি বলে মনে করেন তিনি।

ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, এ স্কুলের সব সহকারী শিক্ষকের বাড়ি উপজেলা শহরে। তারা এ দুর্গম এলাকায় আসতে চায় না। এ কারণে তারা দ্বিমত করছেন।

অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে তিনি বলেন, এ বছর মাত্র দেড় লাখ টাকা সরকারি বরাদ্দ পেলেও বিদ্যালয়ের কাজে ৪ লাখ টাকা ব্যয় করেছেন তিনি।

দুই জায়গায় পাঠদান চলার কথা স্বীকার করে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন বলেন, উপজেলা শিক্ষা কমিটি ছাড়া এখানে আমার করার কিছুই নাই। শিক্ষা কমিটি আমাকে এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে নিষেধ করেছেন।

তিনি আরও বলেন, স্কুল চলবে কি চলবে না এটা স্কুল ম্যানেজিং কমিটি সিদ্ধান্ত নিবেন। স্কুল ম্যানেজিং কমিটি চাইলে স্কুল বন্ধ করেও দিতে পারেন।
  
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং উপজেলা শিক্ষা কমিটির সদস্য সচিব অমিত চক্রবর্ত্তী বলেন, বিদ্যালয়টি যে অবস্থানে ছিল সেখানে ভাঙনের ঝুঁকি ছিল বলে প্রধান শিক্ষক আবেদন করেন। পরে স্কুলের রাতারাতি টিনশেড খুলে পাশের একটি জায়গায় নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করে বাকি শিক্ষকরা। বিষয়টি থানার ওসিকে জানানো হয়েছে। উপজেলা শিক্ষা কমিটির একটি জরুরি মিটিংও করা হয়েছে। বিষয়টির তদন্তাধীন রয়েছে। এতে প্রধান শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী কমিটির সভাপতি তারাসহ যারাই জড়িত থাক তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, নদীর পশ্চিমপাড়ে নিয়ে যাওয়ার শিক্ষার্থীদের অনীহা রয়েছে। স্কুলটি কোথায় করলে ভালো হবে আগামী মিটিংয়ে সে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement

Loading...


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |