দেড় মাস আগে জন্ম নেওয়া শিশুসন্তানকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল মনিরুজ্জামান মনিরের। কিন্তু চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত হন তিনি। তার মৃত্যুতে শুধু পুরো পরিবার নয়, এলাকার নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
ছুটি নিয়ে এ মাসেই বাড়িতে আসার কথা ছিল তার। কিন্তু গতকাল রোববার রাতে কফিনের ভেতর সাদা কাপড় ও ব্যান্ডেজে মোড়ানো মনিরের মরদেহ কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের নাইয়ারা গ্রামের বাড়িতে এসেছে। সোমবার সকালে পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। তিনি চট্টগ্রামের কুমিরা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে সহকারী নার্সিং অফিসার পদে কর্মরত ছিলেন। কয়েক বছরের চাকরি জীবনে একাধিকবার পেয়েছিলন সাহসী ফায়ারকর্মী পদক।
মনিরুজ্জামানের বয়োবৃদ্ধ মা ছেলের শোকে বার বার মূর্চ্ছা যাচ্ছেন। মায়ের আর্তনাদ, আমার ছেলেকে এনে দাও।’ মা শরীফা বেগম বলেন, গত শনিবার রাত ৮টার দিকে মনিরুজ্জামানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে তার শেষ কথা হয়। ওই সময় মনির বলেছিলেন, ‘আগামী ১৫ দিন পর তার প্রবাসী ভাই লুৎফুর রহমান আসলে বাড়ি আসব। নবজাতক সন্তানের আকিকা দেব। আপনাকে (মা) উন্নত চিকিৎসার জন্য ভালো হাসপাতালে ডাক্তার দেখাব।
মনিরুজ্জামানের স্বজনরা বলেন, বিয়ের দুই বছর পর প্রথম সন্তান প্রসবের সময় সন্তানটি মারা য়ায়। গত দেড় মাস পূর্বে জান্নাতুল মাওয়া নামে এক কন্যাসন্তানের পিতা হন। কিন্ত সন্তানের মুখ আর তার দেখা হয়নি। মৃত্যুতে পরিবারে পুরো পরিবারে এখন বিষাদের ছায়া নেমে এসেছে। মনিরুজ্জামান ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিসে সহকারী নার্সিং অফিসার হিসেবে যোগদান করেন।
এর আগে তিনি ফায়ার সার্ভিসের ঢাকার ফুলবাড়িয়া হেড অফিসে কমর্রত ছিলেন। দুই মাস পূর্বে চট্টগ্রামের কুমিরা ফায়ার সার্ভিসে বদলি হয়ে আসেন। স্বামীর মৃত্যুতে শিশু সন্তানকে নিয়ে অনেকটা বাকরুদ্ধ তার স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মুক্তা। তিনি বলেন, ঘটনার দিন সন্ধ্যায়ও তার স্বামী মোবাইলে জানিয়েছিল ছুটি পেয়ে তাদের গ্রামের বাড়িতে এসে শিশুসন্তানের আকিকার ব্যবস্থা করবেন। ওই দিন এটাই ছিল স্বামীর সঙ্গে তার শেষ কথা।
মনিরুজ্জামানের খালাতো ভাই এ এস এম মানিক বলেন, আমার খালু বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হক অনেক কষ্ট করে সন্তানদের লেখাপড়া করান। তাদের ভিটে-মাটি বলতে কিছু নেই। নিহত খালাতো ভাই মনিরুজ্জামান টাকা-পয়সা সঞ্চয় করে বাড়ি করাসহ পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু তার মৃত্যুতে সব শেষ হয়ে গেল।
মানিক বলেন, আমার খালাতো ভাই দেশের মানুষের প্রাণ বাঁচাতে গিয়ে মারা গেছেন। তাই তার অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর জন্য মনিরের স্ত্রীকে চাকরি দেওয়াসহ পরিবারকে সহায়তার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানাই।