অব‌হেলায় রোগীর মৃত্যু, স্বপ্রণো‌দিত হয়ে ক্লিনিকের বিরুদ্ধে আদালতের মামলা

মে‌হেরপুর প্রতি‌নি‌ধি, আরটিভি নিউজ

সোমবার, ৩০ জানুয়ারি ২০২৩ , ১০:২৭ পিএম


অব‌হেলায় রোগীর মৃত্যু, স্বপ্রণো‌দিত হয়ে ক্লিনিকের বিরুদ্ধে আদালতের মামলা
ফাইল ছবি

মেহেরপুর দারুস সালাম ক্লিনিকে অপারেশনে প্রসূ‌তির মৃত্যুতে চিকিৎসকের অবহেলার অভি‌যো‌গ এনে স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলা করেছেন আদালত।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (৩০ জানুয়ারি) মেহেরপুর আমলি আদালতের প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট এস এম শরিয়ত উল্লাহ স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলাটি করেন। 

মেহেরপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেলকে মামলাটি তদন্ত ও অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দিয়েছেন আদালত।  

বিজ্ঞাপন

আদালত পর্যবেক্ষ‌ণে ব‌লেছেন, প্রায়ই মেহেরপুরের বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসায় অবহেলা এবং বিধিবহির্ভূতভাবে ক্লিনিক পরিচালনার অভিযোগ আসে। এর সঙ্গে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য ও জীবনের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন জড়িত। মানুষ চিকিৎসক ও ক্লিনিকের ওপর আস্থা এবং বিশ্বাস স্থাপন করে নিজের ওপর হস্তক্ষেপের অধিকার প্রদান করে। হাসপাতাল, ক্লিনিক বা চিকিৎসকের অবহেলা একজন রোগীর সঙ্গে প্রতারণা এবং বিশ্বাস ভঙ্গের শামিল। যা দণ্ডবিধির ৪০৬ ও ৪২০ ধারা অনুসারে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। একই সঙ্গে রোগীর জীবন বিপন্ন হলে অন্যান্য ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার ঢোলমারি গ্রামের মিলন হোসেনের স্ত্রী সুমাইয়া খাতুনের সিজার করা হয় মেহেরপুর শহরের কলেজ মোড়ে অবস্থিত দারুস সালাম ক্লিনিকে। ক্লিনিক মালিক ডাক্তার আব্দুস সালাম নিজেই অপারেশন করেন। অপারেশন টেবিলেই সুমাইয়ার মৃত্যু হয়। প্রকৃতপক্ষে অপারেশনের সময় নিয়মানুযায়ী অন্যান্য চিকিৎসকদের উপস্থিতির বিষয়টি ডাক্তার আব্দুস সালাম মিডিয়াতে বললেও কেউ উপস্থিত ছিলেন না। তিনি একাই সব চিকিৎসকের দায়িত্ব নিয়ে অপারেশন করেছিলেন। রোগী মৃত্যুর ঘটনায় ডাক্তার আব্দুস সালামকে দায়ী করেন স্বজনরা। এ ঘটনা মিডিয়াতে প্রকাশ হয় এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও আলোচনা ছড়িয়ে পড়ে। 

এদিকে বিভিন্ন মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা ও সমা‌লোচনার বিষয়টি আদালতের নজরে আসে। এতে আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলা করেন। 

বিজ্ঞাপন

আদালত সূত্রে আরও জানা যায়, ডাক্তার আব্দুস সালাম একাই অপারেশন করেছেন। এটা সঠিক হয়ে থাকলে তা একটি গুরুতর আইনের লঙ্ঘন এবং ইচ্ছাকৃত অবহেলা যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ঘটনায় এখনও কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি মর্মে আদালতের নজরে এসেছে। জনস্বার্থ ও ন্যায়বিচারের উদ্দেশ্যে পুরো ঘটনাটির প্রশাসনিক তদন্তের পাশাপাশি একটি বিস্তারিত অনুসন্ধান হওয়া সমীচীন বলে মনে করেন আদালত। তাই দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর ১৮৯৮-এর ধারা ১৯০(১) (গ) অনুসারে বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদ বিবেচনায় নিয়ে মেহেরপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেলকে (স্বয়ং) তদন্ত অনুসন্ধান পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে মেহেরপুর সিভিল সার্জনকে এ তদন্তে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। 

বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইন ২০১০ অনুসারে মানদণ্ড অনুসরণ না করলে সেটিও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এমতাবস্থায় মেহেরপুর সদর থানার সব হাসপাতাল ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তালিকা আগামী ৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আদালতে দাখিলের জন্য সিভিল সার্জনকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এ তালিকার মধ্যে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান আইন ও বিধি দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে না তা চিহ্নিত করে দিতেও সিভিল সার্জনকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। 

জানা যায়, মেহেরপুর জেলার কয়েকটি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আগে থেকেই। রোগী মৃত্যুর ঘটনা জানাজানি হলে অনেক ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক মালিক এবং এর সঙ্গে জড়িতরা রোগীর স্বজনদেরকে ম্যানেজ করে পার পেয়ে গেছেন। ফলে কোনো অপরাধের বিচার আলোর মুখ দেখেনি। অপরদিকে গরিব মানুষের পক্ষে এ সব শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে শক্ত অবস্থান নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকাও সম্ভব নয়। ফলে অনেক দিন থেকেই চলে আসছে রোগী নিয়ে অবহেলার বিষয়গুলো। তাই আদালতের এ উদ্যোগে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। ন‌্যায়বিচারের জন্য আদালতের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানি‌য়েছেন অনেকেই। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাধ‌্যমে এ সব অপকর্ম বন্ধ হবে ব‌লে আশা স্থানীয়দের।

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission