বেশ কিছুদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুমুল আলোচনায় ছিল সুলতান’স ডাইন। কাচ্চিতে খাসির মাংসের বদলে অন্য প্রাণীর মাংস দেওয়ার অভিযোগ উঠলে এ নিয়ে আলোচনার ঝড় বয়ে যায় নেট দুনিয়ায়। ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। এ তর্কে অংশ নিয়েছেন সব শ্রেণি-পেশার মানুষ।
গত সোমবার সুলতান’স ডাইনের বিরুদ্ধে খাসির পরিবর্তে অন্য কোনো প্রাণীর মাংস ব্যবহারের অভিযোগ নিয়ে শুনানি করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। খাসির পরিবর্তে অন্য প্রাণীর মাংসের ব্যবহার সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান সুলতান’স ডাইনকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়।
তারপরেই সুলতান’স ডাইন জানিয়েছে, অভিযোগ থেকে মুক্তি পাওয়ায় তারা এখন স্বস্তিতে আছেন।
সুলতান’স ডাইনের ব্যবসায়িক অংশীদার সাজিদ জামান জানান, অনুমান এবং গুজবের ওপর ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়। তার দাবি, খাবারের মান নিয়ে কোনোদিনই আপস করেন না তারা। আগামীতেও তা করবেন না।
তবে অভিযোগ থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে অব্যাহতি দেওয়া হলেও, অনেকেই এখনও নানা প্রশ্ন তুলছেন।
তাদের প্রশ্ন, কোনো প্রকার ল্যাব টেস্ট ছাড়া কীভাবে সুলতান’স ডাইনকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
অনেকে ক্ষোভ জানিয়ে বলছেন, ল্যাব টেস্ট না করে কী করে মুখের কথায় এ রকম একটি অভিযোগ সম্পর্কে এত নিশ্চিত হয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর।
এ রেস্তোরাঁর নিয়মিত ভোক্তা সায়মা বলেন, এত ভেজালের মধ্যে সুলতান’স ডাইন খুব সহিহ ব্যবসা করছে, এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। তবে এসব কাণ্ড প্রতিষ্ঠানের জন্য মঙ্গলজনক নায়।
সাবিহা নামের আরেকজন বলেন, বিষয়টা আমি ওইভাবে বলতে পারব না। কেননা এটা পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যাপার। তবে আগে অনেকবার খেয়েছি সুলতান’স-এর কাচ্চি কোনো তো সমস্যা হয়নি। কালও খেয়েছি। এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন আমার কাছে মনে হয়।
সুলতানের কাচ্চি ভক্ত রাফি নামের একজন বলছেন, সুলতান’স ডাইনের ব্যবসায়িক সফলতায় একটি মহল এমনটি ঘটিয়ে থাকতে পারেন। প্রতিষ্ঠানটির প্রতি মানুষের বিশ্বাস এবং ভরসা আছে।
এর আগে বুধবার (৮ মার্চ) দুপুরের পর থেকে ফেসবুকে সুলতান’স ডাইনের কাচ্চি বিরিয়ানির মাংস নিয়ে হইচই পড়ে যায়। আর অভিযোগটি তুলেছেন কনক রহমান খান নামের এক ভোক্তা।
কনক রহমান খান স্ট্যাটাসে লেখেন, গত বৃহস্পতিবার তিনি সুলতান’স ডাইন থেকে ৭ প্যাকেট কাচ্চি এনেছিলেন। খাবারের সময় মাংসের হাড় দেখে সন্দেহ হয় তার। মাটন (খাসির মাংস) বলা হলেও তিনি অভিযোগ করে লেখেন, মাটনের হাড় এমন চিকন হয় না।
এরপর দীর্ঘ স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, এই ঘটনার পর সুলতান’স ডাইনের গুলশান ২ এর নম্বরে কল দিয়ে জিজ্ঞেস করেন এটা কিসের মাংস ছিল? পরে তারা ২ জন লোকসহ আবার খাবার পাঠায়। ওনাদের এজিএম আশরাফও আসেন নতুন খাবারের সঙ্গে।
আগের প্যাকের খাবারের হাড়ের সঙ্গে এবারের মাংসের তুলনা করতে বললে এজিএম আশরাফ মানতেই নারাজ হয়ে বলেন, জেনেশুনে এমন মাংস দেয় না।
গোস্তের দোকানের ওপর অভিযোগ চাপিয়ে কর্মকর্তারা বলেন, তাদেরকে যে ভেন্ডর মাংস দেয়, তারা আসলে কোনো কিছু করতে পারে।
এরপর এজিএমকে প্রশ্ন করা হয়- তাহলে ভেন্ডরের কাছ থেকে মাংস নেওয়ার সময় কি আপনাদের মতো এত বড় ব্রান্ডের কোনো কোয়ালিটি কন্ট্রোল অফিসার থাকে না?
আপনি কি ২টা মাংস একই দেখতে পাচ্ছেন প্রশ্ন করলে ওনারা উল্টা প্রশ্ন করে বলেন, তাহলে আপনারা কি দিয়ে মিটাতে চান? ইনডিরেক্টলি টাকা অফার করে এবং বলে আপনারা ঝামেলা করলে আমরাও জানি কি করতে হয়।
এরপর ৯৯৯ এ কল দেন ভোক্তা কনক রহমান। ৯৯৯ থেকে বলে বিএসটিআইয়ের নম্বরে অভিযোগ করতে।
এ বিষয়ে গুলশান-২ সুলতান’স ডাইন শাখার মার্কেটিং কমিউনিকেশন অফিসার ববি রানি দাস গণমাধ্যমকে জানান, এই অভিযোগ ভিত্তিহীন। সুলতান’স ডাইন অনেক বড় প্রতিষ্ঠান। এক ক্রেতা বিড়ালের মাংসের বিরিয়ানির যে অভিযোগ করেছেন, তা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। পুরো অভিযোগটাই ভিত্তিহীন।
ওই ক্রেতার পরিচয় আমরা জানি না বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তবে উনি খাবার নেওয়ার দুই ঘণ্টা পর অভিযোগ করেন বলে জানান তিনি। ওই গ্রাহক অভিযোগ করে বলেন, এগুলো কিসের মাংস দিয়েছেন, বিড়ালের মাংসের বিরিয়ানি। আমরা বলেছি, এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।