• ঢাকা শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১
logo

ভূমধ্যসাগরে গোপালগঞ্জের তিন যুবকের স্বপ্ন ডুবি, শোকের মাতম

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

  ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৩:১৮
গোপালগঞ্জ, তিন যুবক
ছবি : সংগৃহীত

বিদেশে পাড়ি জমাতে গিয়ে ভূমধ্যসাগরে ট্রলার ডুবে মারা যাওয়া ৮ জনের মধ্যে তিনজনের গোপালগঞ্জে মুকসুদপুর উপজেলার গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। সংসারের হাল ধরতে গিয়ে দালালদের মাধ্যমে অবৈধ পথে বিদেশ যেতে গিয়ে করুণ পরিণতি ভোগ করতে হলো তাদের। এখন পরিবারের আশা সন্তানদের মরদেহ যেন বাড়িতে আসে, এক নজর যেন দেখতে পারেন শেষ দেখা।

গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার গয়লাকান্দি গ্রামের পক্ষঘাতগ্রস্ত বাবা পান্নু শেখ অপেক্ষায় রয়েছেন ছেলে ইমরুল কায়েস আপনকে ফিরে পাওয়ার আশায়। তবে তিনি এখনো জানেন না ছেলে বেঁচে আছে না মারা গেছে। কেউ বলেছে হাসপাতালে আছে। কেউ বলেছে জেলে। আমি শুধু আমার ছেলেকে ফিরে পেতে চাই। ছেলেকে ফিরে পেলে আমার কোন অভিযোগ নেই। ছেলেকে না পেলে তারপর ব্যবস্থা নেব। তার একটাই চাওয়া তিনি যেন তার ছেলেকে ফিরে পান। একমাত্র ছেলের জন্য হা-হুতাস করছেন তিনি।

কথাগুলো বললেন ইটালি যাওয়ার পথে তিউনেশিয়া উপকূলে ট্রলার ডুবিতে নিখোঁজ ইমরুল কায়েস আপনের বাবা পান্নু শেখ।

মা কেয়া কামরুন নাহার ছেলের মৃত্যুর খবর পেলেও জানাননি পক্ষাঘাতগ্রস্ত অসুস্থ স্বামীকে। মা কেয়া কামরুন নাহার ছেলের শোকে পাথর হয়ে পড়েছেন। তাই কারো সঙ্গে তেমন কোন কথা বলছেন না।

শুধু ইমরুল কায়েস আপন নয় এমন করুন পরিনতির শিকার হয়েছেন একই উপজেলার বড়দিয়া গ্রামের দাদন শেখের ছেলে রিফাত শেখ ও ফতেপট্টি গ্রামের রাসেল শেখ।

মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার গয়লাকান্দি গ্রামে ইমরুল কায়েস আপনের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে শোকের ছায়া।

জানা গেছে, বাবা পান্নু শেখ ২০০৪ সালে সৌদি চলে যান। ১৫ বছর পর ২০১৯ সালে বাংলাদেশে ফিরে এসে একটি কোম্পানিতে ড্রাইভারের চাকরি করতেন। এক বছর আগে তিনি পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়ে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেললে বন্ধ হয়ে যায় আয় রোজগার। তাই সংসারের হাল ধরতে এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ইমরুল কায়েস আপন ইটালি যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে। পরে আত্মীয় রহিমকে ১১ লাখ টাকায় গত ১০ জানুয়ারি ইটালির উদ্দেশ্যে পাঠান ছেলে আপনকে। পরে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি লিবিয়া থেকে ট্রলারযোগে ইটালির উদ্দেশ্যে রওনা দেন আপন। পরে ভূমধ্যসাগরে ট্রলার ডুবে ছেলের মৃত্যুর খরর বাড়িতে আসলে নেমে আসে শোকের ছায়া।

পান্নু শেখ সৌদি থাকার সময় ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে স্ত্রী কেয়া কামরুন নাহার পাবনা বাবার বাড়িতে থাকতেন। ইমরুল কায়েস আপন পাবনাতেই পড়াশোনা করেছে। সেখান থেকে এসএসসিও এইচএসসি উভয় পরীক্ষায় জি‌পিএ ৫ পে‌য়ে পাশ করার পর ভর্তি হন রাজশাহী এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে তিনি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন।

শুধু আপন নয় একই চিত্র রিফাত শেখ ও রাসেল শেখের বাড়িতেও। তিন যুবকের মুত্যুতে শুধু পরিবার নয় গ্রামে জুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। নিহতদের বাড়িতে ভীড় করেছেন গ্রামবাসী। এমন ঘটনা যেন আর না ঘটে সেজন্য দালালদের দৌরাত্ম কমাতে আইনী পদক্ষেপ নেয়ার দাবি স্থানীয়দের।

নিহত ইমরুল কায়েস আপনের বাবা পান্নু শেখ বলেন, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুরসহ আশপাশের অনেকেই ইতালি যায়। তাদের সঙ্গে ছেলেকে পাঠিয়েছেন। তাকে পাঠিয়ে এখন মনে হচ্ছে ভুল করেছি। গত ৮ জানুয়ারি এক্সিম ব্যাংকের টেকেরহাট শাখার মাধ্যমে দালাল রহিমের কাছে এগারো লাখ টাকা পাঠাই। রহিম লিবিয়া থাকে। তার বাড়ি মুকসুদপুর উপজেলার রাগদী ইউনিয়নের গজনা গ্রাম। জীবনের সঞ্চিত সব সম্বল দিয়ে ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়ে এখন নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। এখন কি করবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।

মন্তব্য করুন

Bangal
rtv Drama
Radhuni
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ভূমধ্যসাগরে ৮ বাংলাদেশির মৃত্যু
ঠিকাদারকে প্রকাশ্যে চড় মারলেন এসিল্যান্ড
গোপালগঞ্জে খাবার খেয়ে দুই শতাধিক শিশু-কিশোর হাসপাতালে ভর্তি
কাভার্ডভ্যানের চাপায় প্রাণ গেল পুলিশ কর্মকর্তার