অর্থাভাবে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন সংগীতশিল্পী খোকন
বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত কণ্ঠশিল্পী মনিরুল ইসলাম খোকন অর্থাভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। হৃদ্রোগে আক্রান্ত হলেও অর্থাভাবে করতে পারছেন না চিকিৎসা। তার হৃদ্যন্ত্রের স্বাভাবিক স্পন্দন ফিরিয়ে আনতে পেসমেকার স্থাপন করার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। টাকার অভাবে পেসমেকার স্থাপন করার সক্ষমতা নেই এ সংগীতশিল্পীর।
বর্তমানে কণ্ঠশিল্পী মনিরুল ইসলাম খাকন মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার জয়মন্টপ ইউনিয়নের খান বানিয়ারা নিজ গ্রামের বাড়িতে শয্যাশায়ী। সেখানেই বিনা চিকিৎসায় দুর্বিষহ দিন পার করছেন তিনি।
জানা যায়, মনিরুল ইসলাম একাধারে সুরকার, গীতিকার ও সংগীতশিল্পী। তিনি শাস্ত্রীয় সংগীতের ওপর ঢাকায় বুলবুল ললিতকলা একাডেমি থেকে সংগীতে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। সহস্রাধিক গান রচনা করেছেন। ১২০টি গানে সুর ও কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশ বেতার ও বিটিভিতে গান পরিবেশন করেছেন এ সংগীতশিল্পী।
এ ছাড়া তার লেখা অনেক গান গেয়েছেন দেশের স্বনামধন্য কণ্ঠশিল্পীরা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তার নিজের লেখা গানে নিজেই সুর ও কণ্ঠ দিয়েছেন। সংগীতে অবদানের জন্য পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার।
সম্প্রতি সরেজমিনে খান বানিয়ারা গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সংগীতশিল্পী মনিরুল ইসলাম শয্যাশায়ী। ধুলো জমেছে হারমোনিয়াম, বেহালা ও গিটারে। একান্ত আলাপে কণ্ঠশিল্পী মনিরুল ইসলাম খোকন বলেন, ‘১৯৭৯ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হই আমি। এরপর চিকিৎসা করাতে গিয়ে তার অনেক অর্থ খরচ হয়েছে। গান শিখিয়ে, বেতার ও বিটিভিতে গান গেয়ে একসময় নিয়মিত সম্মানি পেতাম। ২০১৯ সালে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরই অর্থসংকটে পড়ি। কয়েক মাস আগে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে আমাকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। সেখানকার চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, আমার হৃদ্যন্ত্রের স্বাভাবিক স্পন্দন ফিরিয়ে আনতে পেসমেকার স্থাপন করা প্রয়োজন।’
অনেকটা অভিমান আর আক্ষেপের সুরে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বেতারের এ শিল্পী বলেন, ‘এক সময় কত বড় বড় সুরকার, গীতিকার ও শিল্পীর সঙ্গে আমার ওঠাবসা ছিল। এখন আমি শয্যাশায়ী, এখন কেউ আর খোঁজ নেন না। আমি আবার গানে ফিরতে চাই।’
এ সময় নিজেদের অর্থাভাবের কথা স্বীকার করে লজ্জায় কাউকে বলতে পারেন না বলে জানান মনিরুল ইসলাম খোকনের স্ত্রী সুফিয়া আক্তার।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘চিকিৎসকরা জানিয়েছেন- আমার স্বামীর বুকে একটি পেসমেকার স্থাপন করা গেলে তিনি বেঁচে যাবেন। এতে ৮–১০ লাখ টাকা প্রয়োজন। কিন্তু টাকার অভাবে একজন শিল্পী বিনা চিকিৎসায় ধুঁকছেন, কেউ দেখার নেই। আমি অসহায়। কতটা অসহায় বলে বোঝাতে পারবো না। আমার স্বামীর চিকিৎসার জন্য আমি বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতা প্রত্যাশা করি। সেই সঙ্গে স্বামীকে বাঁচাতে বিত্তবানদের কাছে সহায়তা চাইতে বাধ্য হচ্ছি। যদি কোনো হৃদয়বান মানুষ আমাদের এই বিপদে এগিয়ে আসেন, কৃতজ্ঞ থাকবো।’
মন্তব্য করুন