আপনারা হাসিনার পাতা ফাঁদে পা দেবেন না: টুকু
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, আল্লাহ বলেছেন কেউ বেশি বাড়াবাড়ি করো না। কিন্তু হাসিনা এমনভাবে কথা বলতেন যে তিনি নিজেই আল্লাহ হয়ে গেছেন। আল্লাহ দেখিয়েছেন; হাসিনার ভাত খাওয়ার সময় হয় নাই। আজ সবই আছে তিনি নাই, তিনি কোথায়? মাঝে মাঝে টেলিফোনে এলোমেলো কথা বলে, খেলা শুরু করছে; হাসিনা খেলা শুরু করছে।
বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) বিকেলে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে কামারখন্দ উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের আয়োজনে জামতৈল ধোপাকান্দি সরকারি বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমি হিন্দুদের বলি; আপনারা হাসিনার পাতা ফাঁদে পা দেবেন না। টুকুর একবিন্দু রক্ত থাকতে সিরাজগঞ্জের হিন্দুদের কোনো ক্ষতি হতে দেবে না। কিন্তু আজকাল কিছু আওয়ামী হিন্দু হয়েছে। তাদের মাধ্যমে ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমি হাসিনাকে বলি, এসব করে লাভ হবে না। আপনার মনের আশা পূরণ হবে না।
টুকু বলেন, আমাকে খুনি হাসিনা সিরাজগঞ্জ ও বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে একবারে সরিয়ে দিতে চেয়েছিল। সে চেয়েছিল আমাকে জেলে পুরে দেবে। যখন আমি জেল থেকে বের হবো তখন আর আমার নির্বাচন করার ক্ষমতা থাকবে না। কিন্তু আমি বলেছিলাম- আমি হাসিনার জেলে যাব না, ইন্টারনেটের মাধ্যমে আন্দোলনের কাজ করে যাব। আজ আমি আপনাদের সামনে বক্তব্য দিতে পারছি। এ সময় আমি গভীরভাবে স্মরণ করি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শহীদদের প্রতি। সুস্থতা কামনা করি আহতদের।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, এখনো কিন্তু যুদ্ধ শেষ হয় নাই, আরও যুদ্ধ করতে হবে। আর আমি জানি আপনারা সেই যুক্ত করতে প্রস্তুত। সুতরাং শত্রুকে কখনো ছোট ভাববেন না, শত্রু শত্রুই। সাপ দেখলে যেমন বাড়ি দিয়ে মারতে হয় শত্রুই ক্ষেত্রেও তাই।
টুকু বলেন, শহীদ জিয়া গণতন্ত্রে বিশ্বাস করতেন, তাই সবাইকে রাজনীতি করার অধিকার দিয়েছিলেন। তাই আজ আওয়ামী লীগও সুযোগ পেয়েছিল। আওয়ামী লীগ ৭১, ৭৫-এ যা করেছিল তারা গত ১৬ বছরে তার চেয়েও খারাপ করেছে। পরে তো ছেলে-মেয়ে সব নিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। কিন্তু এখনো এমন কিছু আওয়ামী লীগ রয়ে গেছে। আমি শুনতে পাই এখানেও নাকি এমন আছে এবং আমার দলের কিছু নেতার আশ্রয়ে আছে। যদি এমন হয় তাহলে তারা বিএনপি করতে পারবে না।
টুকু বলেন, তারা (আ.লীগ) কোটি কোটি টাকা লুটপাট করে নিয়ে গেছে। শেখ হাসিনা বলে আবু সাইদের গুলি লেগেছে তাহলে রক্ত কই? টুকু প্রশ্ন করেন, যদি আজ জয়ের (হাসিনা পুত্র) এমন গুলি লাগতো তাহলে তুমি এই কথা বলতে পারতে; সাইদের মাকে জিজ্ঞেস করো তার কলিজায় কেমন লাগছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, আমরা জনগণের ভোট ছাড়া কেউ নির্বাচিত হয়নি। শহীদ জিয়া আজ নেই কিন্তু তিনি গণতন্ত্র রেখে গেছেন। এখন খালেদা জিয়ার চেয়ে বড় গণতান্ত্রিক আর কেউ নাই। আরেকজন হলেন তারেক রহমান। একসময় জিয়াউর রহমান এই শ্মশান বাংলাদেশকে সুজলা-সুফলা বাংলাদেশে পরিণত করেছিলেন। আজ তারেক রহমান ৩১ দফা দিয়েছেন, হাসিনার আবারও শ্মশানে পরিণত করে যাওয়া দেশকে সুন্দর করার জন্যই তারেক রহমানের এই ৩১ দফা।
টুকু বলেন, আমি আজ কামারখন্দে এসে মিটিং করছি, এটা তো আমার জন্য স্বপ্ন ছিল। এই কামারখন্দে সাবেক এমপি ও জেলা বিএনপির সভাপতির ওপর হায়েনার মতো কি হামলাটাই না করা হয়েছিল। অনেকেই আমার পথ আটকে দিত। আজ শহীদদের রক্তে রঞ্জিত পিচ্ছিল রাস্তায় তারা ভেসে গেছে।
টুকু আরও বলেন, আমার বাবা যেমন সিরাজগঞ্জের মানুষের গোলাম ছিল, তেমনই আমিও আপনাদের গোলাম। আমি আপনাদের ভালবাসা নিয়েই এই পৃথিবী ছেড়ে যেতে চাই। আপনারা দোয়া করবেন যেন আমার মনোবাসনা পূর্ণ হয়।
কামারখন্দ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. রেজাতে রাব্বী উত্থানের পরিচালনায় ও কামারখন্দ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. বদিউজ্জামান ফেরদৌসের সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম।
জনসভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, জেলা বিএনপির সভাপতি ও সিরাজগঞ্জ-২ (সদর-কামারখন্দ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রুমানা মাহমুদ। বিশেষ বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. সাইদুর রহমান বাচ্চু ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল কায়েস।
জনসভায় জেলা, উপজেলাসহ বিভিন্ন ইউনিটের বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন স্তরের হাজার হাজার নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
আরটিভি/এএএ
মন্তব্য করুন