ঢাকাশনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫, ২৯ চৈত্র ১৪৩১

লবণ পানিতে পিচ্ছিল মহাসড়ক যেন মরণফাঁদ

সাইফুর রহিম শাহীন

শুক্রবার, ০৪ এপ্রিল ২০২৫ , ০৭:৪৯ পিএম


loading/img
ছবি: আরটিভি

কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক যেন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। পর্যটন রাজধানীর সঙ্গে সংযুক্ত ব্যস্ততম এ মহাসড়কটিতে ভয়াবহ ও মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় একের পর এক প্রাণ হারাচ্ছে ও পঙ্গুত্ববরণ করছে পর্যটকসহ সাধারণ মানুষ। ঈদযাত্রায় বিগত চারদিনে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ৮টি দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

চুনতির জাঙ্গালিয়া ট্রাজেডির রেশ না কাটতেই ৩ এপ্রিল রাতে কক্সবাজারের ব্যস্ততম ডলফিন মোড়ে ব্রেক ফেল করা তিশা পরিবহনের বাসচাপায় পর্যটকসহ ৫ জন আহত হয়েছেন। দুর্ঘটনায় দুমড়ে-মুচড়ে গেছে সিএনজি ও অটোরিকশা। এদিন সকালে মালুমঘাট রিংভং, চকরিয়া ও নাপিতখালীতে পৃথক দুর্ঘটনায় পর্যটকবাহী বাস উল্টে অন্তত ৪০ জন কমবেশি আহত হয়েছেন। চকরিয়ার পার্শ্ববর্তী পর্যটন স্পট লামার মিরিঞ্জার কাছে বাস উল্টে শিশুসহ ২৫ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। দেশের গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম সড়কে একের পর এক সড়ক দুর্ঘটনায় দেশের সচেতন মহলকে একেবারে ভাবিয়ে তুলছে।

Screenshot_6

বিজ্ঞাপন

এর আগে ঈদযাত্রায় গত তিন দিনে চট্টগ্রাম মহাসড়কের লোহাগাড়া জাঙ্গালিয়া ঢালা নামক স্থানে দুর্ঘটনায় নারী-শিশুসহ ১৬ জন নিহত হয়েছে। পৃথক ঘটনায় অন্তত আহত হয়েছেন আরও ৩০ জন। টানা দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হওয়ার ঘটনায় কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নতি করণের দাবি জোরালো হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) দুপুরে মরণফাঁদ থেকে বাঁচতে জনদাবি নিয়ে সর্বস্তরের মানুষ মানববন্ধন, বিক্ষোভসহ সভা-সমাবেশ করেছে।

অন্যদিকে কক্সবাজার সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী রুকন উদ্দিন খালেদ চৌধুরী বলেন, জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা-জাইকার অর্থায়নে ১৪৮ কিলোমিটার চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে। আগামী সেপ্টেম্বরে এ কাজ শেষ হলে প্রকল্প প্রস্তুত করে দরপত্র আহ্বান করা হবে। আগামী ২৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে চার লেন সড়ক উন্নতির কাজ শুরু হতে পারে।

IMG-20250404-WA0024

বিজ্ঞাপন

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার দেশের ব্যস্ততম মহাসড়কের একটি। এর বেশির ভাগ অংশের প্রশস্ততা মাত্র ১৮ থেকে ৩৪ ফুট। ফলে দূরপাল্লার গাড়ি স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারে না। ১৪৮ কিলোমিটার পথ বাসে যেতে সময় লাগে ৫ থেকে সাড়ে ৫ ঘণ্টা। অতিরিক্ত বাঁক, উপসড়ক থেকে যত্রতত্র ছোট বড় গাড়ি মহাসড়কে উঠে আসার কারণে সড়কটি হয়ে উঠেছে ভয়াবহ দুর্ঘটনা প্রবণ। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পলিথিন বিহীন ট্রাক ভর্তি লবণ পরিবহন। যেটি সীমান্ত উপজেলা টেকনাফ, উখিয়া ও কক্সবাজার সদর উপজেলায় উৎপাদিত লবণ। যার কারণে রাতের কুয়াশার সঙ্গে লবণ পানি একাকার হয়ে সড়কটি মারাত্মক পিচ্ছিল করে তুলছে। এতে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে ১৫৮ কিলোমিটার দীর্ঘ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক।

স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গত ২০ বছরেও এ সড়ক প্রশস্ত করা হয়নি। সরু এই সড়কে আছে বেশ কয়েকটি বিপজ্জনক বাঁক। সড়কটি চার লেন কিংবা ছয় লেন করা হলে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতো না। অথচ সরকার এ সড়কের উন্নয়নে এগিয়ে আসছে না।

Screenshot_7

এ দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কটির ঝুঁকিপূর্ণ অংশগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। বিশেষ করে মহাসড়কের হাশমতের দোকান, ঠাকুরদীঘি, উপজেলার পদুয়া, লোহাগাড়া শহর, আধুনগর, হাজি রাস্তা, চুনতি, জাঙ্গালিয়া এলাকা, চকরিয়া অংশের ইসলাম নগর ইমাম বুখারী মাদরাসা এলাকা, বানিয়ারছড়া ওরি আমগাছ তলা, হারবাং লালব্রিজ এলাকা আজিজ নগর, চকরিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ এলাকা, লক্ষ্যারচর জিদ্দা বাজার টার্নিং পয়েন্ট, মালুমঘাটের রিংভং ছগিরশাহকাটা ঢালা, ডুলাহাজারার পাগলিরবিল, খুটাখালী জাতীয় উদ্যান, নাপিত খালী, রামু রাবার বাগান, ঝিলংজার পূর্ব খরুলিয়া, মুক্তারকুল ও কক্সবাজার শহরের প্রবেশদ্বার খ্যাত ডলফিন মোড়।

Screenshot_8

লোহাগাড়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের টিম লিডার রাখাল চন্দ্র রুদ্র বলেন, ঈদের ছুটিতে তিনদিনে মহাসড়কের এ অংশে তিনটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনার জন্য আমরা বেশকিছু কারণ চিহ্নিত করেছি। লবণপানি সড়কে পড়ে পিচ্ছিল হওয়া, বিপজ্জনক বাঁক, অন্য জেলার চালকদের এ সড়কে গাড়ি চালনোর অভিজ্ঞতা না থাকা অন্যতম কারণ।

এ ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনা রোধে করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে মালুমঘাট হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ওসি মেহেদী হাসান বলেন, চালককে খুব সাবধানে আর সতর্কতার সঙ্গে গাড়ি চালাতে হবে। এ সড়কে চালক স্পিডে গাড়ি চালালে মামলা দিতে নির্দেশনা আছে। বৃহস্পতিবার নির্দেশ অমান্য করে গাড়ি চালানোয় ৭টি মামলা দিয়েছি। তাছাড়া লবণ পরিবহনের সময় নির্গত পানি গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি পিচ্ছিল করে তুলছে। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে।

আরটিভি/এমকে/এআর

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |