ঢাকারোববার, ২২ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২

গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের কমিটি, যা বলছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন 

গবি সংবাদদাতা, আরটিভি নিউজ

শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫ , ১০:০৭ এএম


loading/img
গণ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি মো. নির্জন ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুর রহমান বিজয়। ছবি: সংগৃহীত

প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই রাজনীতি নিষিদ্ধ সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছাত্র অবস্থায় কোনো দলীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না হওয়ার অঙ্গীকার করলে, তবেই সেখানে ভর্তির সুযোগ পান শিক্ষার্থীরা। এসব অঙ্গীকার ভঙ্গ করে এবং নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ সদস্যকে নিয়ে ছাত্রদলের গণ বিশ্ববিদ্যালয় (গবি) শাখার আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (১১ জুন) বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি মো. আবু হোরায়রা ও সাধারণ সম্পাদক এম. রাজিবুল ইসলাম তালুকদার বিন্দু স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তিতে এ কমিটির ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর থেকেই সমালোচনার ঝড় উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের মাঝে।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিষ্ঠার পর প্রায় ২৭ বছর হতে চললেও এখন অব্দি কোনো রাজনৈতিক দলের কোনো ধরণের কমিটি গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা যায়নি। এর আগে বেশ কয়েকবার নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ কমিটি দেওয়ার চেষ্টা চালিয়েও সফল হয়নি। তবে এবার প্রথম হঠাৎ করেই প্রকাশ্যে এল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের কমিটি।

বিজ্ঞাপন

ছাত্রদলের গণ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নবগঠিত ১২ সদস্যের কমিটির সভাপতি হয়েছেন আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. নির্জন ও সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. আসাদুর রহমান বিজয়কে।

কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি হয়েছেন মো. মামুন হোসেন খান। সহসভাপতি হয়েছেন আব্দুল্লাহ আল রাফি ও মো. রাকিবুল হাসান। এই কমিটিতে মো. আব্দুল্লাহ আল রাইভারকে সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে চারজনকে। তারা হলেন- মো. আকরাম হোসেন, মাশরুর মাহমুদ, মেহেদী হাসান ও রওনক জাহান রওনক। এতে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে সবুজ আহমদকে ও দপ্তর সম্পাদক করা হয়েছে উল্লাস কুমার দত্ত আকাশকে।

কমিটির বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা আছে যে, আগামী এক বছরের জন্য গণ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল-এর আংশিক কমিটি অনুমোদন করা হলো। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের দপ্তরে জমা দেয়ার নির্দেশ প্রদান করা হলো।

বিজ্ঞাপন

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ভর্তির সময় ছাত্র অঙ্গীকারনামার প্রথমটি হচ্ছে ছাত্র অবস্থায় আমি কোনো দলীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হবো না। সকল শিক্ষার্থী অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির সময়। অঙ্গীকারের ব্যত্যয় ঘটলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসপেক্টাস কিংবা পরিচিতিতে গণ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সর্বশেষ গত ১৯ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়টির পক্ষ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেও জানানো হয়, ক্যাম্পাসে অধ্যয়নরত সব শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টদের সব ধরনের দলীয় রাজনীতি থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করা হলো। গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম লোগো দলীয় রাজনীতিতে নিষিদ্ধ। এর ব্যত্যয় হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে প্রচলিত বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শিক্ষার্থীদের দাবি, বামপন্থী কয়েকটি সংগঠন ও ইসলামী ছাত্র শিবির বিভিন্ন মোড়কে সক্রিয় থাকলেও এসব সংগঠনের কমিটি ঘোষণা কিংবা প্রকাশ্যে নাম উল্লেখসহ কোনো কার্যক্রম দেখা যায়নি। তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পরপরই গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে সক্রিয় হতে শুরু করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। ক্যাম্পাসের নাম ও লোগো ব্যবহারসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণামূলক কর্মসূচি পালন করে বিএনপির এই সহযোগী সংগঠনটি। সবশেষ তারা গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় তিন দশকের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ঘোষণা করলো কমিটি।

কমিটি ঘোষণার বিষয়ে গণ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি মো. নির্জন বলেন, সম্প্রতি যে ১২ সদস্যের কমিটি গঠিত হয়েছে, তা সম্পূর্ণভাবে সংশ্লিষ্ট সদস্যদের সম্মতির ভিত্তিতেই গঠিত হয়েছে। গণ বিশ্ববিদ্যালয় একটি রাজনীতি-মুক্ত ক্যাম্পাস, এবং আমরা ছাত্ররাও সে ধারণা মাথায় রেখেই এখানে ভর্তি হয়েছিলাম। এ প্রসঙ্গে আমি বলতে চাই, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে কোনো দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করি না। আমাদের ছাড়াও আরও অনেক সংগঠন নানা ধরনের কাজ করে থাকে। তাহলে শুধু আমাদের কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে প্রশ্ন উঠলে সেটিকে বৈষম্যমূলক মনে করা যেতে পারে।

তিনি আরও বলেন, কমিটি গঠনের বিষয়ে এখনো প্রশাসনের সঙ্গে কোনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি। তবে আমরা এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলবো। তবে প্রশাসন অনেক ব্যাপারে আগ্রহ দেখায় না। তাই বলে কি আমাদের ব্যক্তি স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের অধিকার থাকবে না।

এ বিষয়ে ছাত্রদলের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক এম রাজিবুল ইসলাম তালুকদার বিন্দু বলেন, রাজনীতি নিষিদ্ধ এই শব্দের সঙ্গে সম্পূর্ণ দ্বিমত পোষণ করি। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব কিছু আইনকানুন করা আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে রাজনীতি করা যাবে না। আমরা তাদের এই নিয়মকে শ্রদ্ধা করি। এ জন্যই আমরা যে সকল রাজনীতি করি তা সম্পূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় বাইরে। কেন করি? কারণ রাজনীতি বাংলাদেশের  নাগরিকের একটি সাংবিধানিক অধিকার। সংবিধানের ৯ নম্বর অনুচ্ছেদের ক অথবা ঘ তে বলা আছে রাজনীতি তার মৌলিক অধিকারের মতো এবং কেউ যদি তা খর্ব করে চাইলে তাদের বিরুদ্ধে অনেকে অনেক ব্যবস্থা নিতে পারবে।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ক্যাম্পাসে যেন সুস্থ শিক্ষার পরিবেশ থাকে এই বিবেচনা করেই ছাত্র রাজনীতি করে। সুতরাং আমরা ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে রাজনীতি করি না। বিশ্ববিদ্যালয়ে বাইরে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন সর্বশেষ যে আন্দোলন কোটা বিরোধী আন্দোলন এ আন্দোলনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যত জন শিক্ষার্থী শহীদ হয়েছেন তারমধ্যে ছাত্রদলের সাতজন শহীদ। আমরা ক্যাম্পাসে রাজনীতি করি জনগণের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে, শিক্ষার্থীদের স্বার্থে।

তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টের দেখবেন অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে তারা বিভিন্ন রকমের দুর্নীতি করে থাকে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকমের ফি আরোপ করে থাকে। সেগুলো নিয়ে আমাদেরই কাজ করতে হবে। তারা তাদের মন মত একটি আইন করে রাখছে যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় ভেতর কাজ করতে দেবে না, সেহেতু আমরা বিশ্ববিদ্যালয় বাইরে। তারা তাদের মনমর্জি মতো একটি আইন তৈরি করে রেখেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে রাজনীতি করা যাবে না। যদি আমরা হাইকোটে রিট করি তবে আমরাই জিতে যাবো। কিন্তু আমরা তা করছি না আমি ছাত্রদের কথা মাথায় রেখে ছাত্র রাজনীতি করছি এবং ভবিষ্যৎ করবো। 

ছাত্রদল কোনো রাজনৈতিক দল নয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ছাত্র রাজনীতি করার কারণে যদি কোনো শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তবে আমরা সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মিলে দূর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবো। শিক্ষার পরিবেশ প্রশ্নে, এমন কোনো কাজ আমরা করবো না। কিন্তু আমাদের রাজনৈতিক অধিকার যদি কেউ খর্ব করে আমরা তা হতে দেব না। যেখানে সংবিধান আমাকে অধিকার দিয়েছে সেখানে আপনারা কিভাবে আমার অধিকার খর্ব করেন। ভর্তির সময় কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের এডমিশন ফর্মে লেখা থাকে না যে তুমি রাজনীতি করতে পারবা না।

এদিকে রাজনীতি নিষিদ্ধ গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিটি গঠনের ঘোষণায় উষ্মা প্রকাশ করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন বলেন, গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ। এ সংক্রান্ত নির্দেশনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাসঙ্গিক নীতিমালায় এবং প্রসপেক্টাসে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুনরায় একটি নোটিশ জারি করা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে কিংবা বাহিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ব্যবহার করে কোনো দলীয় রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে না।

তিনি আরও বলেন, নোটিশ প্রদানের পরও যদি কোনো সংগঠন বা ব্যক্তি রাজনৈতিক কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ব্যবহার করে, তাহলে তা স্পষ্টভাবে নীতিমালার লঙ্ঘন। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালে গণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। সেই সময় থেকেই ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনীতি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে কর্তৃপক্ষ। ক্যাম্পাসে সুস্থ রাজনীতির স্বার্থে ২০১৩ সালে শুরু হয় ছাত্র সংসদের কার্যক্রম। সবশেষ ২০১৮ সালে তৃতীয়বারের মতো গণ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও ক্যাম্পাসে সাংবাদিক সমিতি, ক্যারিয়ার ক্লাব, ফটোগ্রাফিক সোসাইটি, ডিবেটিং সোসাইটি, অগ্নিসেতুসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের কার্যক্রম রয়েছে।

আরটিভি/এএএ

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement

Loading...


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |