সিলেট ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণ আজ। দুই সিটিতেই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোট নেওয়া হবে। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে। ভোট উপলক্ষে এই দুই সিটিতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
ইলেকশন কমিশন (ইসি) জানায়, সিসিটিভির মাধ্যমে ঢাকার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবন থেকে দুই সিটির ভোট সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করবে ইসি।
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) জেনারেল মো. আহসান হাবিব খান জানান, প্রতিটি নির্বাচনই সমান গুরুত্বপূর্ণ ও চ্যালেঞ্জের। ভোটারদের প্রত্যাশা পূরণের চেষ্টা করে যাচ্ছি। তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনি বিধি-বিধান নিশ্চিতকল্পে আমাদের অবস্থান কঠোর ছিল। রাজশাহী ও সিলেট সিটি নির্বাচনের প্রতিটি পদক্ষেপেই সুতীক্ষ্ণ নজর রেখে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছি।
তিনি বলেন, সরাসরি সিসি ক্যামেরায় এ নির্বাচন ঢাকা থেকে পর্যবেক্ষণ করবে। নির্বাচন পূর্ব, ভোটের দিন ও নির্বাচনোত্তর অনিয়ম, গোলযোগ ও সহিংসতা যেন না ঘটে সে বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আচরণবিধি মানার ক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে বেশ কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। অভিযোগ খতিয়ে সিলেটে একজন কাউন্সিলর প্রার্থীর প্রার্থিতাও বাতিল করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নির্বিঘ্নে ভোট দিতে ভোটকেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার ব্যাপারে প্রশাসন, পুলিশ, আইন শৃঙ্খলাবাহিনী ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা শতভাগ নিশ্চয়তা প্রদান করেছেন। সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করেছি এবং নির্বাচনী প্রচারণায় অনিয়ম বা বিশৃঙ্খলা করলে কোনো ধরনের ছাড় দিইনি।
ইসি জানায়, এবার সিলেট সিটিতে ৩ হাজার ২০৪টি এবং রাজশাহীতে ২ হাজার ৫০০টি কেন্দ্রে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হবে। ১ হাজার ৭৪৭টি সিসি ক্যামেরা দিয়ে সিলেট সিটি এবং ১ হাজার ৪৬৩টি সিসি ক্যামেরা দিয়ে রাজশাহী সিটির ভোট নির্বাচন ভবন থেকে পর্যবেক্ষণ করবে কমিশন।
এবার সিলেটে ভোটে নেমেছেন মোট ৩৬৭ জন প্রার্থী। এর মধ্যে মেয়র পদে লড়ছেন ৮ জন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী (নৌকা), জাতীয় পার্টির নজরুল ইসলাম বাবুল (লাঙ্গল), ইসলামী আন্দোলনের মাহমুদুল হাসান (হাতপাখা), জাকের পার্টির মো. জহিরুল আলম (গোলাপ ফুল), স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. শাহ জাহান মিয়া (বাস), মো. ছালাহ উদ্দিন রিমন (ক্রিকেট ব্যাট) ও মোশতাক আহমেদ রউফ মোস্তফা (হরিণ)। তবে নির্বাচন বর্জন করেছেন হাত পাখার মাহমুদুল হাসান।
নগরীর ৫৬ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী ৩৬০ জন। তবে অস্ত্রের মহড়া দেওয়ার অভিযোগে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আফতাব হোসেন খানের প্রার্থিতা বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন।
এ সিটিতে ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৭৫৩ জন। এরমধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৫৪ হাজার ৩৬৩, নারী ২ লাখ ৩৩ হাজার ৩৮৪ জন, তৃতীয় লিঙ্গের রয়েছেন ৬ জন ভোটার। ১৯০ কেন্দ্রের ১ হাজার ৩৬৭ ভোটকক্ষে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হবে। নির্বাচনে ১৯০ কেন্দ্রের মধ্যে ১৩২ কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। বাকি ৫৮ কেন্দ্র ঝুঁকিমুক্ত বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইমরুল হাসান জানান, সোমবার রাত ১২টার থেকে ৪২ ওয়ার্ডে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ৪২ টিম, পাশাপাশি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ১০টিম রয়েছে। প্রতিটি টিমের সঙ্গে রয়েছে ১ প্লাটুন বিজিবি।
এদিকে রাজশাহী সিটিতে প্রচার শেষ হয়েছে সোমবার রাত ৮টায়। চার মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মুরশিদ আলম নির্বাচন বর্জন করেছেন। তবে প্রচারে শেষদিন পর্যন্ত লিটনসহ জাতীয় পার্টির সাইফুল ইসলাম স্বপন ও জাকের পার্টির লতিফ আনোয়ার সক্রিয় ছিলেন।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম বিষয়ক মুখপাত্র অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) রফিকুল আলম জানান, সিটির ১৫৫ কেন্দ্রে তিন স্তর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ৪ হাজার সদস্য কাজ করবে। এর মধ্যে বিভিন্ন কেন্দ্রে থাকবে সাড়ে তিন হাজারের বেশি পুলিশ।
রাজশাহী র্যাব-৫ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল রিয়াজ শাহরিয়ার জানিয়েছেন, কেন্দ্রের বাহিরে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে ২৫০ জন র্যাব সদস্য মাঠে থাকবে। এছাড়া ভোটের মাঠে থাকবে ৭ প্লাটুন বিজিবি।
রাজশাহী সিটি নির্বাচনে মোট ভোটকেন্দ্র ১৫৫। এরমধ্যে ১৪৮টিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৫২ হাজার ১৫৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭১ হাজার ১৮৫ ও নারী ভোটার ১ লাখ ৮০ হাজার ৯৭২ জন। নির্বাচনে ২৯ ওয়ার্ডে ১১২ জন কাউন্সিলর প্রার্থী ও ১০ সংরক্ষিত নারী আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪৬ জন নারী কাউন্সিলর প্রার্থী।