অকালে ঝরে যাওয়া বলিউডের নক্ষত্র ইরফান খান
বলিউডের তিন খানের মতো তার নামের পাশেও রয়েছে খান। প্রায় তিন যুগের ক্যারিয়ারে এমন সব সিনেমা উপহার দিয়েছেন যা অন্য অনেকের জন্যই অনুকরণীয়। বলছি বলিউডের অন্যতম নক্ষত্র ইরফান খানের কথা।
আজ (২৯ এপ্রিল) তার চলে যাওয়ার দিন। দীর্ঘদিন ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে ২০২০ সালের এই দিনে মাত্র ৫৩ বছর বয়সে মারা যান তিনি। তার চলে যাওয়ার পর অস্কারের মতো সর্বোচ্চ সম্মাননার আসরে তাকে স্মরণ করা হয়েছে।
সিনে দুনিয়ায় অসামান্য খ্যাতি পাওয়া এই তারকা ছোটবেলায় হতে চেয়েছিলেন ক্রিকেটার। বেশ ভালো খেলতেনও। কিন্তু অল্প কিছু টাকার জন্য ক্রিকেট ক্যারিয়ার হাতছাড়া হয়ে যায় তার। সেই ঘটনা ২০১৭ সালের এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন ইরফান।
সেটার সূত্র ধরে ভারতীয় গণমাধ্যম সংবাদ প্রতিদিন বলছে, ক্রিকেট মাঠে অলরাউন্ডার ছিলেন ইরফান। তবে বোলিং ছিল তার অধিক প্রিয়। দলের অধিনায়ক, টিম ম্যানেজমেন্টও তার বোলিংয়ের ভক্ত ছিল। প্রতি ম্যাচে গড়ে ২-৩ উইকেট তার ঝুলিতে আসতো। এমন প্রতিভার জোরে ইরফান সুযোগ পান কর্নেল সিকে নায়ডু ট্রফিতে। কিন্তু পরিবার খেলাধুলায় মোটেও রাজি ছিল না। তাই লুকিয়ে খেলতে যেতেন ইরফান। বাড়িতে ফিরে দিতেন নানা অজুহাত।
সাক্ষাৎকারে অভিনেতা বলেছিলেন, আমি যখন সুযোগ পাই তখন আমাদের জয়পুর থেকে আজমেড় যেতে হতো। সেজন্য ২০০-২৫০ রুপি লাগতো। আমি সেই টাকাটা জোগাড় করতে পারিনি। সেদিনই বুঝে গিয়েছিলাম, এটা আমার জন্য নয়।
এই সামান্য টাকার অভাবই ঘুরিয়ে দিয়েছিল ইরফান খানের জীবন। তার এক আত্মীয় কাজ করতেন যোধপুরের থিয়েটারে। তাকে দেখেই অভিনয়ে আগ্রহ জাগে ইরফানের। তিনিও যোগ দেন থিয়েটারে। স্থানীয় পর্যায়ে বেশ কিছু নাটকে অভিনয়ও করেন। এরপর ১৯৮৪ সালে তিনি দিল্লি গিয়ে ভর্তি হন ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামায় (এনএসডি)।
অভিনয়ের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হলেন আর ওমনি কাজ পেয়ে গেলেন, এমন ছিল না মোটেও। সংগ্রামের সেই দিনগুলোতে তিনি এয়ার কন্ডিশনার মেরামতের কাজ করতেন ইরফান। যেটা দিয়ে নিজের খরচ মেটাতেন। এই কাজের সুবাদেই একবার রাজেশ খান্নার বাড়িতে যান ইরফান। আর তাকে দেখেই ইরফানের মনে অভিনেতা হওয়ার আগ্রহ আরও প্রবল হয়ে ওঠে।
১৯৮৭ সালে এনএসডি থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার পর একটি ছবিতে ছোট এক চরিত্রে সুযোগ পান ইরফান খান। মিরা নায়ের নির্মিত ছবিটির নাম ‘সালাম বোম্বে’। মুক্তি পায় ১৯৮৮ সালে। এরপর এরকম ছোট ছোট চরিত্রে আরও কিছু সিনেমা ও টেলিভিশন সিরিজে কাজ করেছিলেন ইরফান।
২০০৪ সালে এসে ইরফান খান গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে সুযোগ পান এবং বাজিমাত করেন। বিশাল ভরদ্বাজ নির্মিত ওই ছবির নাম ‘মকবুল’। এর পরের বছরই প্রধান চরিত্রে হাজির হন ইরফান। ‘রোগ’ নামের ছবিটিতে তার অভিনয় মুগ্ধ করেছিল সমালোচকদের।
অতঃপর সাফল্য, জনপ্রিয়তা আর পুরস্কার সমান্তরালে আসতে থাকে ইরফানের ঝুলিতে। ক্যারিয়ারে যুক্ত করেছেন ‘পান সিং তোমার’, ‘লাইফ অব পাই’, ‘পিকু’, ‘লাঞ্চবক্স’, ‘হিন্দি মিডিয়াম’, ‘তলোয়ার’, ‘স্লামডগ মিলিয়নিয়ার’, ‘মাদারি’, ‘কারিব কারিব সিঙ্গেল’, ‘আংরেজি মিডিয়াম’র মতো নন্দিত সব সিনেমা। একবার ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, ছয়টি ফিল্মফেয়ার, দেশটির রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পদ্মশ্রী এবং ফিল্মফেয়ারের আজীবন সম্মাননাসহ বহু পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
মন্তব্য করুন