সালমান শাহ আজও বেঁচে আছেন কোটি ভক্তের হৃদয়ে
বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম সালমান শাহ। তিনি যেন আসলেন আর জয় করে নিলেন কোটি ভক্তের হৃদয়। ১৯৯৬ সালের এই দিনেই না ফেরার দেশে পাড়ি জমান জনপ্রিয় এই নায়ক। শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) তার ২৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি আমাদের মাঝে না থাকলেও একবিন্দু কমেনি তার জনপ্রিয়তা ও আবেদন। বরং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে আরও অনেক বেশি রঙিন হয়েছে তাকে নিয়ে ভালোবাসার রঙ।
১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন সালমান শাহ। পড়াশোনা করেন খুলনার বয়রা মডেল হাইস্কুলে। একই স্কুলে চিত্রনায়িকা মৌসুমী তার সহপাঠী ছিলেন।
১৯৮৭ সালে তিনি ঢাকার ধানমন্ডি আরব মিশন স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। পরে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট ও ধানমন্ডির মালেকা সায়েন্স কলেজ (বর্তমান ডক্টর মালিকা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ) থেকে বি.কম. পাস করেন।
১৯৮৬ সালের দিকে হানিফ সংকেতের গ্রন্থনায় ‘কথার কথা’ নামের একটি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান প্রচার হতো। এর কোনও একটি পর্বে ‘নামটি ছিল তার অপূর্ব’ নামের একটি গানের মিউজিক ভিডিও পরিবেশিত হয়। হানিফ সংকেতের কণ্ঠে গাওয়া এই মিউজিক ভিডিওতে মডেল হওয়ার মাধ্যমেই সালমান শাহ মিডিয়াতে প্রথম সবার নজর কাড়েন।
তখন অবশ্য তিনি ইমন নামেই পরিচিত ছিলেন। প্রয়াত নাট্যজন আব্দুল্লাহ আল মামুনের প্রযোজনায় ‘পাথর সময়’ ধারাবাহিক নাটকে একটি ছোট চরিত্র এবং কয়েকটি বিজ্ঞাপনচিত্রেও কাজ করেছিলেন।
গায়ক হিসেবেও সালমানের পরিচিতি ছিল। ছোট বেলা থেকেই শিল্প-সংস্কৃতির প্রতি দারুণ আগ্রহ ছিল তার। বন্ধু মহলে সবাই তাকে কণ্ঠশিল্পী হিসেবে চিনতেন। ১৯৮৬ সালে ছায়ানট থেকে পল্লী গীতিতে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন তিনি। চলচ্চিত্রে অভিনয়ে আসার আগেই ১৯৯২ সালের ১২ আগস্ট সাবেক ক্রিকেটার শফিকুল হক হিরার কন্যা সামিরার সঙ্গে বিয়ে হয় সালমানের।
রূপালি পর্দায় সালমান সাম্রাজ্যের সূচনা হয় নব্বই দশকের শুরুর দিকে সোহানুর রহমান সোহানের ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমার মধ্য দিয়ে। মাত্র চার বছরে ২৭টি সিনেমা করেন তিনি।
সব শ্রেণির দর্শক-সমালোচকদের মন জয় করে তারকা হওয়ার জন্য সময়টা যথেষ্ট নয়। এর মধ্যে প্রায় দশটি অসমাপ্ত সিনেমা। প্রথম সিনেমা ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ১৯৯৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি বাংলাদেশি চলচ্চিত্র। সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন সোহানুর রহমান সোহান। এটি আমির খান-জুহি চাওলা জুটির সুপারহিট হিন্দি চলচ্চিত্র ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’-এর অফিসিয়াল পুনর্নির্মাণ।
হিন্দি চলচ্চিত্রের কাহিনি লিখেছেন নাসির হোসেন খান, যার বাংলা চিত্রনাট্য লিখেছেন সোহানুর রহমান সোহান ও সংলাপ লিখেছেন আশীষ কুমার লোহ। চলচ্চিত্রটির প্রযোজক সুকুমার রঞ্জন ঘোষ এবং প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আনন্দমেলা সিনেমা লিমিটেড। এতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন মৌসুমী, সালমান শাহ, রাজিব, আহমেদ শরীফ, আবুল হায়াত প্রমুখ। এটি মৌসুমী ও সালমান শাহ অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র।
এই সিনেমায় আরও অভিষেক হয় কণ্ঠশিল্পী আগুনের। এতটা জায়গা নায়করাজ রাজ্জাক-পরবর্তী সময়ে কেউ নিতে পারেননি। হয়ত অল্প সময়ের জন্য এসেছিলেন বলেই এত দ্যুতি ছড়াতে পেরেছিলেন, কেটে গেছেন দাগ। যে দাগটা তার প্রস্থানের টানা ২৭ বছর পরেও এতটা জ্বলজ্বলে। তার অনুপস্থিতি আর অকাল প্রস্থান আজও পোড়াচ্ছে অগুনতি মানুষের মন।
মৃত্যু ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর। মাত্র ২৫ বছরের জীবন। ক্ষণজন্মা অথচ কী বিস্তৃত প্রভাব। তখনও যেমন ততোধিক উজ্জ্বল এখনও। সালমান শাহ-পরবর্তী সময়ে যারা চলচ্চিত্রে নায়ক হওয়ার জন্য এসেছেন তারা প্রত্যেকেই বলেছেন, এখনও সালমান শাহ-ই তাদের অনুপ্রেরণার প্রধান উৎস। সালমানকে দেখেই তারা নায়ক হতে এসেছেন।
দেখতে দেখতে তার মৃত্যুর ২৮ বছর পার হলেও আজও তার জনপ্রিয়তা আজও বিন্দুমাত্র কমেনি। প্রজন্মের পর প্রজন্ম তাকে নিজদের আইডল মনে করে আসছেন এখনও। তিনি আজও কোটি ভক্তের মনে বেঁচে আছেন।
মন্তব্য করুন