কলিগের কাছে আমার ‘সম্ভ্রম’ এতটা তুচ্ছ: মৌসুমী
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মানের একটি ভাইরাল ভিডিও নিয়ে তোলপাড় চলছে। বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয় অভিনেত্রীকে। তার অনুমতি না নিয়ে এক সাংবাদিক ভিডিওটি ছড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সাদিয়া।
এবার এ ঘটনায় সরব হলেন মডেল ও অভিনেত্রী মৌসুমী হামিদ। গত ২৭ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে নিজের ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দিয়েছেন। যেখানে অভিনেত্রীর সঙ্গে শুটিং সেটে ঘটে যাওয়া এক অপ্রীতিকর ঘটনার কথা তুলে ধরেছেন তিনি।
পাঠকদের জন্য মৌসুমীর স্ট্যাটাসটি হুবুহু তুলে ধরা হলো—
শুটিংয়ের একটা ঘটনা শেয়ার করি, প্রায় ৩ বছর আগের কথা পূবাইলে শুটিং করছি। বেশ রাত হয়েছে, কিন্তু অনেক কাজ বাকি। সাধারণত আমরা যখন শুটিং করি বিশেষ করে আউটডোর, তখন কাজের চাপ থাকে বেশি এবং শুটিং লোকেশন, মেকআপ রুম-চেঞ্জরুম বেশ দূরে হয়। বারবার দৌড়াদৌড়ি করে কাপড় বদলানো কষ্ট হয়, সময়ও বেশি লাগে। রাত সাড়ে ১২টা প্রায়। আমি যেখানে শুটিং করছিলাম তার পাশেই একটা মাটির ঘর ছিল, যে ঘরে লাইটের কিছু জিনিসপত্র রাখা ছিল।
পরিচালক আমাকে অনুরোধ করলেন বারবার মেকআপ রুমে যেয়ে চেঞ্জ করতে যেই সময় লাগছে সেই সময়টাও নেই, উনি বললেন আমি যদি অনুমতি দিই উনি আমার কাপড়ের ব্যাগটা ওই মাটির ঘরে আনার ব্যবস্থা করবেন ওখানেই চেঞ্জ করতে পারব কি না। আমি বললাম ঠিক আছে। যদিও সেই ঘরটা মোটেও আরামদায়ক বা সেইফ নয়। তার ওপর দেখি ছিটকানিও নাই দরজায়। আমি বললাম তাহলে কীভাবে হবে?
তখন ক্যামেরায় যিনি ছিলেন উনাকে আমি মামা ডাকতাম। উনি বললেন মামু তুমি টেনশন নিও না আমি আছি বাইরে, পাহারা দিচ্ছি। আমি ওনার কথা বিশ্বাস করে ওই মাটির ঘরে ঢুকি। সব জানালা বন্ধ করে দিই এবং দরজা চাপিয়ে দিই। আমি নিজেও শুনতে পাচ্ছিলাম ওনারা বাইরে কথাবার্তা বলছেন। পরিচালক তখন সেটে বা অন্য কোথাও।
শাড়িটা পরা শুরু করিনি তখনও। কি যেন মনে করে শাড়িটার ভাঁজ খুলে পুরো শাড়িটা ওড়নার মতো কাঁধের ওপর রেখে দিই এবং ঠিক তখনই লাইটের একটা ছেলে হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকে পড়ে। আমি চিৎকার দিয়ে উঠি ‘এই চেঞ্জ করি’ খুবি অস্বস্তিকর অবস্থা। ছেলেটা প্রচণ্ড ভয় পেয়ে বের হয়ে গেল। সরি আপু আমি জানতাম না আপনি ছিলেন।
তখন প্রচণ্ড রাগ হলো মামার ওপর। চিৎকার দিলাম একটা, আমি শুধুমাত্র সহযোগিতা করার জন্য এমন একটা জায়গায় কাপড় পাল্টাতে রাজি হলাম। কারণ, আমাকে কথা দেওয়া হয়েছিল বাহিরে একজন দায়িত্ব নিয়ে পাহারা দেবে। কিন্তু ছেলেটা উঠান পার হয়ে ঘরে ঢুকে গেল কেউ ওরে বলল না যে ঘরে আমি আছি।
আমি যখন ঘরের ভিতর থেকেই চিৎকার করছি ইউনিটের ওপর তাদের দায়িত্বহীনতা নিয়ে তখন সেই মামা (চিত্রগ্রাহক) বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলেন ‘আরে বাদ দে তো ও তো ঢুকেই বের হইয়া আসছে এইটুকু সময় আর কি দেখছে। ওই ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে বললো ‘ওই তুই কিছু দেখছোস?’ বলে অসভ্যর মতো হাসতে লাগল। ছেলেটা কোনো উত্তর দিলো না।
আমার শরীরের যতখানি অংশ দেখা গেছে সেটা তেমন কোনো বিষয়ই না, উল্টো আমি নাকি ওভার রিঅ্যাক্ট করছি। এ কথা শোনার পর বের হয়ে জীবনের সর্বোচ্চ রিঅ্যাক্ট সেদিন করেছি সেটে। কলিগের কাছে আমার ‘সম্ভ্রম’ এতটা তুচ্ছ? পরিবার ছেড়ে দিনের বেশির ভাগ সময় যাদের সঙ্গে কাজ করি, তারা এইভাবে তাদের দায়িত্বহীনতা জাস্টিফাই করবে?
সেটের বেশির ভাগ মানুষের কাছে মনে হয়েছে, দায়িত্ব নেওয়ার পরও নির্লজ্জের মতো ওনার ওই খ্যাঁক খ্যাঁক হাসায় আমি যে রিঅ্যাকশন দিয়েছি সেটা বেশি বেশি ছিল। সবাই তার অ্যাকশনকেই জাস্টিফাই করে গেল। কিন্তু পরিচালক আমার চিৎকার শুনে সেখানে এসে পুরো ঘটনা শুনে চিত্রগ্রাহককে সেট থেকে বের করে দেন। এবং উনি নিজেও ভুল বুঝতে পেরে সরি বলেন।
আমি পুরো ঘটনা ওনাকে বলি। ওনার কাছে জানতে চেয়েছিলাম, ‘তোমার পরিবারের কোনো মেয়ে এমন অবস্থায় পড়লে দায়িত্বরত মানুষটা দায়িত্ব পালন না করে উল্টা যদি এমন করে রসায় রসায় হাসতো, তারপর প্রচণ্ড অপমান বোধে যদি তোমার নিজের মেয়ে বা বোন বা তোমার বউ যদি রিঅ্যাক্ট করত তুমি কি বলতা তোমার মেয়েকে, মামনি ওভার রিঅ্যাক্ট করতেছো কেন? আমি বেশি অবাক হয়েছিলাম সেটে ওই দিন চিত্রগ্রাহকের দায়িত্বহীনতা ও অসভ্যতাকে যারা জাস্টিফাই করছিলেন তাদের ওপর।
আবারও অবাক হয়েছি যারা আয়মান সাদিয়ার ভিডিও দেখে পোস্ট করেছেন ‘ভিডিওতে তো তেমন কিছুই দেখা যায় নাই’ তাদের ওপর। যিনি ভিডিওটি পোস্ট করেছেন তার জন্য আমার কিছুই বলার নাই। উনি ভিডিও ডিলিটও করেছেন। আমি সাধুবাদ জানাই কিন্তু সর্বনাশ যা হওয়ার তো হয়ে গেছে। ভিডিও বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে গেছে এবং মানুষের ট্রলিং। কারণ, আমি ওনাকে যতটুকু চিনি একদমই ক্ষতিকারক মানুষ নন।
বেশ বন্ধু সুলভ হাস্যোজ্জ্বল এবং প্রচণ্ড পরোপকারী। আমি বিশ্বাস করতে চাই না উনি উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে এমন কাজটা করেছেন। লুকিয়ে বা গোপন ক্যামেরায় তো নয়ই। বরং উনি অনুতপ্তই হয়েছেন বলে আমি মনে করি। কিন্তু যারা বলছেন এই ভিডিওতে তেমন কিছুই দেখা যায় নাই তাদের জন্য প্রশ্ন আছে, এই তেমন কিছুই না দেখা ভিডিওটির কারণে যে পরিমাণ নোংরা, অসভ্যতা, বুলিং, বডি শেইম, ধর্ষণ, থ্রেট মেয়েটাকে সহ্য করতে হয়েছে বা এখনো হচ্ছে সেটা যদি আপনার পরিবারের কোনো মেয়েকে সহ্য করতে হয়, আপনি সেটা দেখার জন্য প্রস্তুত আছেন তো?
আরটিভি/এইচএসকে/এসএ
মন্তব্য করুন