শেফালির মৃত্যু

অ্যান্টি-এজিং ট্রিটমেন্ট কী বয়স আটকায়, যা জানালেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা

বিনোদন ডেস্ক, আরটিভি নিউজ

রোববার, ০৬ জুলাই ২০২৫ , ১২:৫৭ পিএম


অ্যান্টি-এজিং ট্রিটমেন্ট কী বয়স আটকায়, যা জানালেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা
ছবি: সংগৃহীত

বলিউডের ‘কাঁটা লাগা’ খ্যাত অভিনেত্রী শেফালি জারিওয়ালা গত ২৭ জুন না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। তার হঠাৎ মৃত্যুতে ইন্ডাস্ট্রির সহকর্মী থেকে শুরু করে ভক্ত-শুভাকাঙ্ক্ষীরা শোক প্রকাশ করেছেন। তবে আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে, এ অভিনেত্রীর মৃত্যুর পর আলোচনায় উঠে এসেছে তার অ্যান্টি-এজিং ট্রিটমেন্ট ও হার্ট অ্যাটাকের মধ্যকার যোগসাজশের বিষয়। যদিও এখনো ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন প্রকাশ্যে আসেনি।

বিজ্ঞাপন

প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, অভিনেত্রী শেফালির মরদেহে গ্লুটাথিয়ন, ভিটামিন সি-এর ইনজেকশন, গ্যাসের ওষুধের মতো প্রচুর ড্রাগের উপস্থিতি ছিল। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বয়স ধরে রাখতে গিয়েই কী তাহলে মৃত্যু হলো ‘কাঁটা লাগা’ গার্লের? ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তার অ্যান্টি-এজিং ট্রিটমেন্ট এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। বিভিন্ন কারণে শরীরে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস তৈরি হয় এবং কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বয়সের আগেই বার্ধক্য সৃষ্টি করে।

অক্সিডেটিভ ড্যামেজকে আটকানোর একমাত্র উপায় হচ্ছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। গ্লুটাথিয়ন প্রান্তশ্বসনের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অক্সিডেটিভ ড্যামেজকে আটকে দেয়। এ কারণে অ্যান্টি-এজিং বা বার্ধক্যরোধী ট্রিটমেন্টের ক্ষেত্রে গ্লুটাথিয়নের গুরুত্ব এত বেশি। কিন্তু এই উপাদান কতটা নিরাপদ―তা নিয়েই এখন প্রশ্ন।

বিজ্ঞাপন

কসমেটিক্স সার্জন সৌম্য গায়েন বলেন, সাধারণত লেবুজাতীয় ফল খেলেই শরীরে ভিটামিন সি-এর ঘাটতি পূরণ হয়। গ্লুটাথিয়ন খাবারে হঠাৎ করে পাওয়া যায় না। তবে কোনো রোগীকে গ্লুটাথিয়ন ইনজেকশন দেয়া হয় না। সাধারণত, পেটের বড় কোনো সার্জারি হলে যেমন- খাদ্যনালির অপারেশন বা কোনো ক্যানসারের অপারেশন হলে অল্প সময়ের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠার জন্য গ্লুটাথিয়ন ট্যাবলেট দেয়া হয়। এতে জিঙ্ক ও সেলেনিয়ামের মতো ড্রাগ থাকে।

ত্বকরোগ বিশেষজ্ঞ কৌশিক লাহিড়ী বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় আগে গ্লটাথিয়ন ইনজেকশন দেয়া হতো, সেখানে মৃত্যুর ঘটনাও দেখা গেছে। ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন থেকে এই ইনজেকশন ‘ব্যান’ও করা হয়েছে। কিন্তু ভারতের দিল্লি, মুম্বাই, গোয়ায় অ্যান্টি-এজিংয়ের ব্যবসা রমরমাভাবে চলছে।

সাধারণত বিউটি পার্লারগুলো এ ধরনের অ্যান্টি-এজিং ট্রিটমেন্টের ‘ডেন’। পার্লারে কোনো চিকিৎসকের তত্ত্বাধনে এই গ্লুটাথিয়ন ইনজেকশন দেয়া হয়। এ ধরনের অ্যান্টি-এজিং ট্রিটমেন্ট যে কোনো ক্ষতি করবে না, তা জোর দিয়ে মোটেও বলা যায় না। ডা. লাহিড়ীর মতে, গ্লটাথিয়ন ইনজেকশনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে বাধ্য।

বিজ্ঞাপন

সার্জন সৌম্যের ভাষ্য, খুব কম গবেষণা রয়েছে, যেখানে জানা গেছে গ্লটাথিয়ন অ্যান্টি-এজিং হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে ভালো কাজ করেছে। তা ছাড়া এ ধরনের কোনো তথ্য নেই যে, যেখানে উল্লেখ রয়েছে কতদিন ধরে এবং কত ডোজে গ্লটাথিয়ন ব্যবহার করলে উল্লেখযোগ্য ফল পাওয়া যায়।

বিজ্ঞাপন

আবার গ্লটাথিয়ান বা ভিটামিন সি অ্যান্টি-এজিং ট্রিটমেন্ট অনেক ব্যয়বহুল। সাধারণ মানুষের পক্ষে এ চিকিৎসা করানো প্রায় অসম্ভব। বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টি-এজিং ট্রিটমেন্ট রয়েছে। এতে দাবি করা হয়, কম খরচে ত্বক টানটান রাখা সম্ভব। সেসবই বা কতটা কার্যকর?

বাজারে সচরাচর এলইডি মাস্ক বিক্রি হয়। বিউটি ব্লগারদের দাবি, এই মাস্ক অ্যান্টি-এজিংয়ে কাজ করে। ত্বকে কোলাজেন গঠন থেকে শুরু করে ত্বকের প্রদাহ কমাতেও কার্যকর এলইডি মাস্ক। যারা এই মাস্ক কিনতে পারছেন না, তারা বিকল্প উপায়ের জন্য পার্লারে গিয়ে এলইডি মাস্ক ট্রিটমেন্ট নেন। তার উদ্দেশ্য একটাই, বয়সের ছাপ যেন মুখে না পড়ে। ডা. লাহিড়ী বলেন, এ ধরনের কোনো ট্রিটমেন্ট কার্যকর নয়। কোনো মেডিকেল বইয়েও এ ধরনের ট্রিটমেন্টের কথা উল্লেখ নেই। একমাত্র কসমেটিক্স সার্জনরা যে ট্রিটমেন্ট করেন, সেসব নিরাপদ।

অ্যান্টি-এজিং ট্রিটমেন্ট বার্ধক্য প্রতিরোধ করে... 

কালের নিয়ম অনুযায়ী বার্ধক্য আসে। কেবল বয়স বাড়লেই বার্ধক্য হানা দেবে, বিষয়টি এমন নয়। অনেক সময় বয়স হওয়ার আগেই চামড়া কুঁচকে যেতে পারে। পরিবেশ দূষণ থেকে শুরু করে অস্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইল, স্ট্রেস, খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি অল্প অল্প করে ত্বকের বয়স বাড়ায়। আর ত্বকের যৌবন ধরে রাখার জন্য পার্লারগুলো অ্যান্টি-এজিং ট্রিটমেন্ট সার্ভিস করায়।

ডা. সৌম্য বলেন, হাজারও ট্রিটমেন্ট করিয়ে, ওষুধ খেয়েও বার্ধক্যকে আটকানো সম্ভব নয়। যে সব অ্যান্টি-এজিং ট্রিটমেন্ট বাজারে রয়েছে, তার একটিও দীর্ঘমেয়াদী ফল দেয় না। বোটক্স বা অন্য কোনো ট্রিটমেন্ট, সেসবের প্রভাবও নির্দিষ্ট সময়ের পর কার্যকরিতা হারাতে থাকে। ফের চোখ-মুখে বার্ধক্য দেখা দেয়। তাই বলা যায়, বয়সকে ধরে রাখা যায় না। তবে ত্বক সুস্থ রাখা যায়। এ জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার, ঘুম, শরীরচর্চা, সঠিক স্ক্রিন কেয়ার করা জরুরি।

আরটিভি/এএ

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission