শিশু বিকাশ কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আট মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধ এবং কেন্দ্রগুলোকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের দাবি জানিয়েছেন শিশু বিকাশ কেন্দ্রের কর্মকর্তারা।
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ হলে বকেয়া বেতন এবং চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানায় তারা। ৩৫টি শিশু বিকাশ কেন্দ্র, হসপিটাল সার্ভিসেস ম্যানেজমেন্ট, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ঢাকার ব্যানারে এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, শিশু বিকাশ কেন্দ্রের চিকিৎসকরা বিগত ১৫ বছরের মতো প্রতিদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন, যেন বিকাশজনিত সমস্যায় আক্রান্ত শিশু ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুরা একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ পেতে পারে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এই কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বিগত ৮ মাস ধরে বেতন ছাড়াই কাজ করছেন। বেতনবিহীন অবস্থায় দীর্ঘদিন কাজ করা কোনও ব্যক্তির পক্ষেই সহজ নয়। এই কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তাদের পরিবারের ভরণপোষণ, সন্তানের শিক্ষা, চিকিৎসা ও অন্যান্য মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য বেতনের ওপর নির্ভরশীল।
তারা বলেন, বেতন না পাওয়ার কারণে তাদের জীবনযাত্রা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে একজন অফিস ক্লিনার আর্থিক দুঃশ্চিন্তায় স্ট্রোকে আক্রান্ত হন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করতে না পেরে মৃত্যুবরণ করেছেন। অনেকেই ঋণের বোঝা বহন করছেন, অনেকে পরিবারের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। এই পরিস্থিতি শুধু তাদের ব্যক্তিগত জীবনেই প্রভাব ফেলছে না, এটি শিশু বিকাশ কেন্দ্রের কার্যক্রমেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
তারা আরও বলেন, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিগত ১৫ বছর ধরে সমাজের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে আসছেন। অথচ তাদের সাথে যে বৈষম্য করা হচ্ছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তারা তাদের ন্যায্য বেতন ও ভাতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, যা তাদের মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন। শিশু বিকাশ কেন্দ্রের ৫০ শতাংশের উপরে নারী সদস্য হওয়া সত্ত্বেও তারা স্ববৈতনিক মাতৃত্বকালীন ছুটি থেকেও প্রতিষ্ঠাকাল থেকে বঞ্চিত। তাদের সাথে যে বৈষম্য করা হচ্ছে, তা অবিলম্বে দূর করা উচিত।
এসময় তারা তাদের চার দফা দাবি তুলে ধরেন। তাদের দাবিগুলো হলো—
শিশু বিকাশ কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিগত মাসের প্রাপ্য বকেয়া বেতন ও ভাতা অবিলম্বে পরিশোধ করতে হবে; শিশু বিকাশ কেন্দ্রগুলোকে রেভিনিউ বাজেটের অন্তর্ভুক্তি বা সরকারি বিশেষ সেবাদানকারী গুরুত্বপূর্ণ জরুরি সেবা হিসাবে চালুর বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে; শিশু বিকাশ কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তাদের চাকরির অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে; এবং বিকাশজনিত সমস্যায় আক্রান্ত শিশু ও প্রতিবন্ধী শিশুদের সেবার মান উন্নয়নের জন্য শিশু বিকাশ কেন্দ্রগুলোর আধুনিকায়ন ও উন্নয়ন করতে হবে।
এ সময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রোমেনা মোরশেদ, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজির (আইইউবিএটি) প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. মাহমুদোর রহমান, শিশু মনোবিজ্ঞানী ড. ফাইজা আহমেদ, শিশু স্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসক ড. ইসরাত জাহান ইমা, সিনিয়র ইন্সট্রাকটর মোহসীনা সুলতানা প্রমুখ।
আরটিভি নিউজ