ট্রাম্পের হুমকি সামলাতে কানাডায় আগাম নির্বাচন ঘোষণা

আরটিভি নিউজ

সোমবার, ২৪ মার্চ ২০২৫ , ০৩:৪২ এএম


ট্রাম্পের হুমকি সামলাতে কানাডায় আগাম নির্বাচন ঘোষণা
ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুমকির মুখে কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে ২৮ এপ্রিল আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। 

বিজ্ঞাপন

রোববার (২৩ মার্চ) এই ঘোষণার মাধ্যমে নির্বাচনি প্রচারণা শুরু হলো। কানাডার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে কার্নির দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে এই ঘোষণা আসলো। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনা বৃদ্ধির এই সময়ে তিনি জাস্টিন ট্রুডোর স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।

ক্ষমতাসীন লিবারেল পার্টির নেতা কার্নি অটোয়ার গভর্নর জেনারেলের সঙ্গে বৈঠক করে পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার অনুরোধ করেন। জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেন, আমরা আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় সংকটের মুখোমুখি হয়েছি, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অযৌক্তিক বাণিজ্য নীতি এবং আমাদের সার্বভৌমত্বের প্রতি তার হুমকির কারণে। এই সংকট মোকাবিলার সর্বোত্তম পথ হলো আমাদের দেশ থেকেই আমাদের শক্তি তৈরি করা। এই (মার্কিন) শুল্কের ফলে যারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাদের সাহায্য করা। এটাই সঠিক কাজ। এটাই ন্যায্য কাজ। এটাই করতে হবে কানাডীয়দের করণীয়।

বিজ্ঞাপন

নির্বাচন আগামী ২০ অক্টোবরের মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কার্নি আশা করছেন যে আগাম ভোট তার লিবারেল পার্টির জন্য সুবিধাজনক হবে। ২০১৫ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা লিবারেল পার্টি ট্রুডোর পদত্যাগের ঘোষণা এবং ট্রাম্পের বারবারের হুমকির পর থেকে ব্যাপক জনসমর্থন পেয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের শুল্ক নীতি এবং কানাডাকে সংযুক্ত করার আহ্বান কানাডাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ ও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে। অনেক কানাডিয়ান লিবারেল সরকারের দৃঢ় ও ঐক্যবদ্ধ প্রতিক্রিয়াকে সমর্থন করছেন। 

বাড়তি আবাসন খরচ ও জীবনযাত্রার ব্যয় সংকট মোকাবিলায় সমালোচনার মুখে থাকলেও সাম্প্রতিক জরিপ অনুযায়ী লিবারেল পার্টি এখন বিরোধী কনজারভেটিভ পার্টির সঙ্গে সমান তালে লড়ছে। জানুয়ারিতে কনজারভেটিভরা তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের উপর দ্বিগুণ ব্যবধানে এগিয়ে ছিল এবং ফেডারেল নির্বাচনে সহজেই জয়লাভ করার আশা করছিল। 

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কানাডাকে ‘৫১তম রাজ্য’ বানানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন, যা কানাডিয়ান জাতীয়তাবাদকে উসকে দিয়েছে। তিনি কানাডিয়ান পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা অর্থনীতিবিদদের মতে দেশটিকে মন্দার দিকে ঠেলে দিতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ আল জাজিরাকে বলেছেন, আসন্ন নির্বাচনের মূল প্রশ্ন হবে-কোন দলনেতা ট্রাম্পের সঙ্গে মোকাবিলা এবং কানাডা-মার্কিন সম্পর্ক পরিচালনায় সবচেয়ে সক্ষম। 

বিজ্ঞাপন

ইপসোসের এক জরিপ অনুযায়ী, কার্নি ফেডারেল নেতাদের মধ্যে সর্বোচ্চ জনসমর্থন পেয়েছেন। কানাডাবাসীরা তাকে ট্রাম্পের শুল্ক নীতি এবং তার প্রভাব মোকাবিলায় সবচেয়ে সক্ষম নেতা হিসেবে দেখছেন। কার্নি ট্রুডোর নীতি অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যার মধ্যে বিশ্বের শীর্ষ বাণিজ্যিক অংশীদার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়াও রয়েছে। 

অন্যদিকে, বিরোধী কনজারভেটিভ পার্টি এই বছরের শুরু থেকে হারানো অবস্থান ফিরে পেতে চাইছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কনজারভেটিভ নেতা পিয়েরে পোয়েলিভ্রে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দৃঢ় বার্তা দেওয়ার ক্ষেত্রে দোটানায় ছিলেন। পোয়েলিভ্রের আক্রমণাত্মক রাজনৈতিক কৌশল তাকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তুলনা করিয়েছে, যা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে যে কনজারভেটিভরা নির্বাচনে জিতলে এবং তিনি প্রধানমন্ত্রী হলে ট্রাম্পের সঙ্গে কীভাবে মোকাবিলা করবেন। 

সিবিসি নিউজ পোল ট্র্যাকার অনুযায়ী, রোববার পর্যন্ত লিবারেল পার্টির সমর্থন ৩৭.৫ শতাংশ, যেখানে কনজারভেটিভদের সমর্থন ৩৭.১ শতাংশ। বামপন্থি নিউ ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ১১.৬ শতাংশ এবং ব্লক ক্যুবেকোয়া ৬.৪ শতাংশ সমর্থন পেয়েছে। 

কানাডার পার্লামেন্টারি ব্যবস্থায়, যে দল সবচেয়ে বেশি আসন পায়, সাধারণত তাদের সরকার গঠনের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। সেই দলের নেতাই প্রধানমন্ত্রী হন।

আরটিভি/একে

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission