যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বাতিল হওয়া অর্ধেকই ভারতীয় শিক্ষার্থী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, আরটিভি নিউজ

শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫ , ১১:২১ পিএম


যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বাতিল হওয়া অর্ধেকই ভারতীয় শিক্ষার্থী
ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্যাম্পাস শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের জেরে ৩২৭ বিদেশি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এসব শিক্ষার্থীকে ‘রাষ্ট্রদোহী’ তকমা দিয়েছে মার্কিন সরকার। ফলে তারা আর কখনও যুক্তরাষ্ট্রে যেতে পারবেন না। আমেরিকান অভিবাসন আইনজীবী সমিতির (এআইএলএ) প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাতিল হওয়া ৩২৭টি শিক্ষার্থী ভিসার মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশই ভারতীয় শিক্ষার্থীদের।

বিজ্ঞাপন

এআইএলএর ‘আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অভিবাসন প্রয়োগকারী পদক্ষেপের পরিধি’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ভিসা বাতিল হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১৪ শতাংশ চীনের, বাকিরা দক্ষিণ কোরিয়া, নেপাল ও বাংলাদেশের মতো দেশ থেকে এসেছেন।

গত চার মাসে, মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের তথ্য পর্যালোচনা করছে। কিছু সূত্রের দাবি, এই পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়ায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করা হচ্ছে, যা অপরাধী ইতিহাস বা ক্যাম্পাস আন্দোলনের সঙ্গে কোনো সংযোগ না থাকা শিক্ষার্থীদেরও ভুলভাবে লক্ষ্যবস্তু করছে।

বিজ্ঞাপন

চলতি বছরের মার্চে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ‘ধরো এবং বাতিল করো’ নামে একটি নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভিসাধারীদের শনাক্ত ও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তাদের সোশ্যাল মিডিয়া পর্যবেক্ষণ করে দেখা হচ্ছে যে কেউ ইসরায়েলবিরোধী বা হামাসপন্থি কোনো বিক্ষোভ কিংবা সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন কি না বা হামাসের পক্ষে কোনো মত প্রকাশ করছেন কি না।

মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের (ডিএইচএস) শিক্ষার্থী ও এক্সচেঞ্জ ভিজিটর তথ্য ব্যবস্থার (এসইভিআইএস) মাধ্যমে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ট্র্যাক করা হয়। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৭৩৬ জন শিক্ষার্থীর ভিসা এসইভিআইএস সিস্টেমে বাতিল করা হয়েছে, যাদের বেশিরভাগেরই ছিল এফ-১ ভিসা।

এই ভিসা বাতিলের বড় একটি অংশ অপশনাল প্র্যাক্টিক্যাল ট্রেইনিং (ওপিটি) প্রোগ্রামের আওতাভুক্ত শিক্ষার্থী। ওপিটি প্রোগ্রামের অধীনে শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রে তাদের স্নাতক ডিগ্রির পরে ১ বছর থেকে ৩ বছর পর্যন্ত কাজ করতে পারেন। কিন্তু ভিসা বাতিলের কারণে তারা এখন আর কাজ করতে পারছেন না। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে টেক্সাস, ক্যালিফোর্নিয়া, নিউ ইয়র্ক, মিশিগান এবং অ্যারিজোনা।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ভারত সরকারও পদক্ষেপ নিচ্ছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রন্ধীর জয়স্বাল এক বিবৃতিতে জানান, আমরা জানি যে অনেক ভারতীয় শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছ থেকে তাদের এফ-১ ভিসা সম্পর্কিত বিজ্ঞপ্তি পেয়েছেন। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি এবং আমাদের দূতাবাস ও কনসুলেট সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে।

এছাড়া অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের একটি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, মার্চের শেষ থেকে প্রায় ১ হাজার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল হয়েছে বা তাদের আইনি অবস্থান পরিবর্তন করা হয়েছে। যদিও বেশিরভাগ ভারত ও চীনের নাগরিক, আইনজীবীদের মতে এই পদক্ষেপ কোনো একটি নির্দিষ্ট দেশের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে নয়। যারা ইসরায়েলবিরোধী মনোভাব প্রকাশ করেছেন বা করছেন, তাদের ওপরেই এই কঠোরতা প্রযোজ্য হচ্ছে।

এই ভিসা বাতিলের ঘটনা শুধু ভারতীয় শিক্ষার্থীদের জন্য নয়, বরং বৈশ্বিক শিক্ষা সম্পর্কেও প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, মর্যাদা ও ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র ও সংশ্লিষ্ট দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সমন্বয় আরও জোরদার করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

আরটিভি/এএ/এআর

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission