ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলাকে ঘিরে তলানিতে নেমেছে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক। এরই মধ্যে পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে দুদেশ। পাল্টাপাল্টি অভিযোগ আর হুমকি-ধামকিতে ক্রমেই বাড়ছে উত্তেজনা, যা থামার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না এখনও।
সবশেষ রোববার (২৭ এপ্রিল) রাতেও কাশ্মীর সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ রেখায় (এলওসি) গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে দুই দেশের সেনাদের মধ্যে। এ নিয়ে টানা চার রাত সংঘাতের ঘটনা ঘটলো ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
অবশ্য ভারতীয় গণমাধ্যমে গোলাগুলির বিষয়ে বরাবরের মতো পাকিস্তানকে দোষারোপ করা হলেও পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বা দেশটির সংবাদমাধ্যমে এখনও এ বিষয়ে কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি।
এনডিটিভি বলছে, জম্মু ও কাশ্মিরের নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর টানা চতুর্থ রাতেও যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে বিনা উসকানিতে গুলি চালিয়েছে পাকিস্তানি সেনারা।
ভারতীয় সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ২৭-২৮ এপ্রিল রাতের মধ্যে কুপওয়ারা ও পুঞ্চ জেলার বিপরীত পাশে পাকিস্তানের সেনাঘাঁটি থেকে বিনা উসকানিতে ছোট অস্ত্র দিয়ে গুলিবর্ষণ শুরু হয়। ভারতীয় সেনারাও দ্রুত এবং কার্যকরভাবে তার ‘জবাব’ দিয়েছে।
এই প্রথমবারের মতো পুঞ্চ সেক্টরেও পাকিস্তানের সেনারা যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করল বলে দাবি করেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী।
এর আগে, শনিবার, শুক্রবার ও বৃহস্পতিবার রাতেও নিয়ন্ত্রণরেখায় দুই দেশের সেনাদের মধ্যে গুলি বিনিময় ঘটে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর দাবি, পাকিস্তানি সেনারা বিনা উসকানিতে গুলি চালিয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় ভারতের সেনাবাহিনী পাল্টা জবাব দিলেও এসব ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, গত ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় পর্যটকশ ২৬ জন নিহত হন। পরোক্ষভাবে পাকিস্তান এ হামলায় জড়িত, এমন অভিযোগ তুলে বুধবার দেশটির সঙ্গে ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করে ভারত। পাশাপাশি আরও বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয় দেশটি। জবাবে সিমলা চুক্তি স্থগিত ও ভারতীয় বিমানের জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধের ঘোষণা দেয় পাকিস্তান। স্থগিত করে দেওয়া হয় ভারতের সঙ্গে সবরকম বাণিজ্যও।
এছাড়া, সিন্ধু নদের পানি ইস্যুতে কড়া বার্তা দেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ। স্পষ্ট ভাষায় তিনি ঘোষণা দেন, যেকোনো মূল্যে নিজের পানির অধিকার রক্ষা করবে পাকিস্তান।
সিন্ধু চুক্তি স্থগিতের জেরে ভারতকে হুমকি দেন পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) নেতা ও দেশটির সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টোও। তিনি বলেন, সিন্ধু দিয়ে হয় পানি বইবে, না হয় ভারতীয়দের রক্ত বইবে।
অন্যদিকে পেহেলগাম হামলায় জড়িত ও মদতদাতাদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির হুঁশিয়ারি দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, আমরা প্রতিটি সন্ত্রাসী ও তাদের মদতদাতাদের খুঁজে বের করব এবং এমন শাস্তি দেব, যা তারা কল্পনাও করতে পারবে না। সময় এসেছে সন্ত্রাসের আশ্রয়স্থল সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করার। ১৪০ কোটি মানুষের দৃঢ় সংকল্প সন্ত্রাসের মদতদাতাদের চূর্ণ করে দেবে।
আরটিভি/এসএইচএম