• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
logo
মার্কিন আদালতে গৌতম আদানির বিরুদ্ধে ঘুষ ও প্রতারণার অভিযোগ 
ভারতে অবৈধ প্রবেশ, ১৫ বাংলাদেশি আটক
ভারতে ১৫ জন বাংলাদেশিকে আটক করা হয়েছে বলে জানা গেছে। দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে আটক করা হয়েছে ৯ বাংলাদেশিকে। অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের অভিযোগে আটক ওই ৯ জনকে অবশ্য পরে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। অন্যদিকে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কর্ণাটকেও আটক হয়েছেন আরও ৬ বাংলাদেশি।  বুধবার (২০ নভেম্বর) পৃথক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া ও হিন্দুস্তান টাইমস। গণমাধ্যম দুটির প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের অভিযোগে মঙ্গলবার আসামের করিমগঞ্জ জেলায় ৯ বাংলাদেশিকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতরা হলেন মো. মামুন, আবু নাইম, রাশেদ ইসলাম, মুরাদ আলী মন্ডল, মো. আশরাফুল হক, মো. বসির হাওলাদার, মো. রবিউল হাওলাদার, মো. মহাবত আলী ও মো. মহিম হোসেন। পরে তাদেরকে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। অভিযানের প্রশংসা করে আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছেন, আজ আসাম পুলিশ করিমগঞ্জে ৯ জন বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীকে শনাক্ত করেছে ও গ্রেপ্তার করেছে এবং পরে তাদেরকে সীমান্তের ওপারে পাঠিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে কর্ণাটকের চিত্রদুর্গায় জাল কাগজপত্রসহ আটক হয়েছেন ৬ বাংলাদেশি। ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট অব পুলিশ বি দিনাকর বলেন, বাংলাদেশি নাগরিক বলে সন্দেহ হওয়ায় অভিযানে ১৫ জনকে আটক করা হয়েছিল। তবে জিজ্ঞাসাবাদের সময় জানা যায়, আটককৃত ১৫ জনের মধ্যে ছয়জন জাল নথি ব্যবহার করে ভারতে বসবাস এবং কাজ করছেন। তিনি আরও বলেন, আমরা কলকাতায় তাদের জাল আধার কার্ড, ভোটার আইডি, লেবার কার্ড এমনকি ব্যাংক অ্যাকাউন্টও খুঁজে পেয়েছি। তারা এ জাল পরিচয়ে বিভিন্ন রাজ্যে কাজ করে আসছিল। সোমবার চিত্রদুর্গা জেলায় তাদের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করেছি। অভিযুক্তরা হলেন শেখ সাইফুর রহমান, মুহাম্মদ সুমন আলী, মাজহারুল, আজিজুল শেখ, মুহাম্মদ সাকিব সিকদার এবং সানোয়ার হোসেন। তাদের সবার বয়স ২২ থেকে ২৯ বছরের মধ্যে। বি দিনাকর বলেন, ভারতে বসতি স্থাপনের উদ্দেশ্যে তারা বেশ কয়েক বছর আগে পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন। আরটিভি/এমকে
সাড়ে ১৮ ঘণ্টা নয়, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারত আসতে লাগবে ৩০ মিনিট
দিল্লিতে বিষাক্ত ধোঁয়াশা, স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত
এবার রাহুল গান্ধীর হেলিকপ্টারে নির্বাচন কমিশনের তল্লাশি
২৮ বছর পর প্রথমবার কলকাতা বইমেলায় থাকছে না বাংলাদেশ
ভারতের উত্তর প্রদেশে হাসপাতালে আগুন, ১০ শিশুর মৃত্যু
ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ১০ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে আরও ৩৭ শিশুকে।  শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) রাতে রাজ্যের ঝাঁসি জেলায় মহারানি লক্ষ্মীবাঈ মেডিকেল কলেজে এই দুর্ঘটনা ঘটে। খবর হিন্দুস্তান টাইমস। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকেই হাসপাতালে নবজাতকদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (এনআইসিইউ) এই আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় সেখানে ৫৪টি শিশু চিকিৎসাধীন ছিল। পরে ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় আটকে পড়া ৩৭ শিশু ও ডাক্তারদের উদ্ধার করা হয়।  এ বিষয়ে কানপুর জোনের এডিজি অলোক সিং বলেন, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে এই আগুন লেগেছে। মৃত শিশুরা সে সময় ইনকিউবেটরে ছিল।  উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এরই মধ্যে অগ্নিকাণ্ড সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছেন ও আহত শিশুদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ঝাঁসি মেডিকেল কলেজের এনআইসিইউতে আগুন লেগে শিশুদের মৃত্যু অত্যন্ত দুঃখজনক। মৃতদের আত্মার শান্তি কামনা করি। আহতরা যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে। আরটিভি/আইএম/এসএ
বাংলাদেশ-পাকিস্তান সমুদ্র যোগাযোগ চালু, উদ্বিগ্ন ভারত
১৯৭১ সালের পর এই প্রথম কোন পাকিস্তানি পণ্যবাহী জাহাজ সরাসরি বাংলাদেশের বন্দরে নোঙর করেছে। গত সপ্তাহে জাহাজটি চট্টগ্রামে নোঙর করায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে ভারত।  শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সরাসরি সামুদ্রিক সংযোগ ভারতের সেভেন সিস্টার্স রাজ্যগুলোতে সম্ভাব্য অস্থিরতা তৈরির কাজে ব্যবহার করা হতে পারে। কারণ, ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় সেভেন সিস্টার্স বাংলাদেশ সীমান্তের খুব কাছাকাছি। ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীর এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, গত পাঁচ দশকে বাংলাদেশের প্রধান দুই বন্দর চট্টগ্রাম ও মংলায় পাকিস্তান কোন জায়গা পায়নি। সিঙ্গাপুর ও কলম্বোর মাধ্যমে দুদেশের বাণিজ্য হতো। তবে এখন পাকিস্তানি জাহাজ সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরে আসবে। ফলে পাকিস্তান থেকে চট্টগ্রামে নিষিদ্ধ জিনিস (অস্ত্র) আসতে পারে। যেগুলো সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে যেতেও পারে। যেমন ২০০৪ সালে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ১ হাজার ৫০০ চাইনিজ অস্ত্র ট্রলারে করে আসামের বিচ্ছিন্নতাবাদী দল উলফার জন্য পাঠিয়েছিল। তবে সেগুলোর উলফার হাতে যাওয়ার আগেই জব্দ করা হয়। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সাবেক স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ব্যবহার করে ভারত চট্টগ্রাম ও মংলা থেকে চীনকে দূরে রেখেছিল। কিন্তু এখন পাকিস্তান চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের সুযোগ পেয়েছে। ফলে বিষয়টি অবশ্যই এই অঞ্চলের ভূরাজনীতির ওপর প্রভাব ফেলবে। কেননা মিয়ানমারও চট্টগ্রামের খুব কাছে, সেই সঙ্গে মিয়ানমারে অবস্থা এখন টালমাটাল। ভারত শক্কা করছে, মিয়ানমার থেকে ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশ এবং মাদক কারবারি বেড়ে যেতে পারে। এদিকে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে জাহাজ আসার বিষয়টিকে ‘ঐতিহাসিক’ হিসেবে অভিহিত করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট। কেননা এর মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান জটিল সম্পর্ক উষ্ণ হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। আরটিভি/এসএপি
ফের বোমাতঙ্কে কলকাতাগামী ফ্লাইটের জরুরি অবতরণ
আকাশপথে সেবাদানকারী ভারতীয় সংস্থা ইন্ডিগোর একটি ফ্লাইটে বোমাতঙ্ক দেখা দিয়েছে। দেশটির মহারাষ্ট্র রাজ্যের নাগপুর থেকে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় আসার পথে ওই ফ্লাইটে বোমাতঙ্ক ছড়ায়। পরে ফ্লাইটটিকে ছত্তীসগঢ়ের রায়পুর বিমানবন্দরে ১৯৩ জন আরোহী নিয়ে অবতরণ করানো হয়। জরুরি অবতরণের পর ওই বিমানটিতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। ভারতীয় বার্তাসংস্থা পিটিআইয়ের বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৮৭ জন যাত্রী এবং ৬ ক্রু সদস্যসহ কলকাতাগামী ইন্ডিগোর একটি ফ্লাইট বৃহস্পতিবার সকালে বোমা হুমকির পরে রায়পুর বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। রায়পুরের সিনিয়র পুলিশ সুপার সন্তোষ সিং বলেছেন, নাগপুর থেকে কলকাতার উদ্দেশ্যে যাত্রা করা ওই বিমানটির বিষয়ে হুমকি পাওয়ার পর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বিমানটিকে রায়পুরের দিকে ঘুরিয়ে দেয়। পরে বিমানটি সকাল ৯টার পরে ছত্তীসগঢ়ের রাজধানী রায়পুরের বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এদিকে জরুরি অবতরণের পর বাধ্যতামূলক নিরাপত্তা পরীক্ষার জন্য বিমানটিকে তাৎক্ষণিক বিচ্ছিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয় বলে ওই কর্মকর্তা বলেছেন। তিনি বলেন, কারিগরি কর্মীদের পাশাপাশি বোম্ব স্কোয়াডের সদস্যরা বিমানটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করছেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, রায়পুর বিমানবন্দরের একটি নিরাপদ জায়গায় বিমানটিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বিমানে থাকা যাত্রীদের নামিয়ে চলছে তল্লাশি। যদিও এখনও পর্যন্ত বিমানের ভেতর থেকে কোনও বিস্ফোরক পদার্থ বা রহস্যজনক বস্তুর সন্ধান মেলেনি। তবে তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছেন বিমানবন্দরের নিরাপত্তারক্ষী এবং বোম্ব স্কোয়াডের কর্মীরা।  রায়পুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) কিরণ রাঠৌর জানিয়েছেন, সত্যিই বিমানের ভেতর বিস্ফোরক রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, গত কয়েক সপ্তাহে ধারাবাহিকভাবে একাধিক ভারতীয় বিমান সংস্থার কাছে বোমা হামলার হুমকি পাঠানো হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট তো বটেই, আন্তর্জাতিক ফ্লাইটেও ছড়ানো হচ্ছে বোমাতঙ্ক। গত দু’সপ্তাহে পাঁচ শতাধিক ফ্লাইটে বোমা থাকার হুমকির তথ্য ছড়িয়েছে। আর গত সপ্তাহেই কলকাতা বিমানবন্দরে আসা-যাওয়ার অন্তত সাতটি ফ্লাইটে বোমাতঙ্ক ছড়িয়েছে। যদিও পরে দেখা যায়, সব ফ্লাইটেই বোমা রাখার তথ্য ভুয়া। এদিকে একের পর এক ফ্লাইটে বোমাতঙ্কের ঘটনায় উদ্বেগ বেড়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের। নরেন্দ্র মোদি সরকারের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে একাধিক পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে। কারা এই ভুয়া খবর ছড়াচ্ছেন, তাদের খোঁজে তল্লাশি অভিযানও চালানো হচ্ছে। আরটিভি/এফআই-টি
ভারতে শেখ হাসিনার ১০০ দিন: কীভাবে রয়েছেন, সামনেই বা কী?
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এরপর থেকে সেখানেই আছেন তিনি। তবে কীভাবে রয়েছেন, তা অনেকেরই অজানা। বিষয়টি নিয়ে ‘বিবিসি বাংলা’ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। আরটিভি অনলাইনের পাঠকদের জন্য প্রতিবেদনটি হুবহু তুলে ধরা হলো- ভারতের রাজধানী দিল্লির কেন্দ্রস্থলকে চক্রাকারে ঘিরে রয়েছে যে ইনার রিং রোড, তার ঠিক ওপরেই চারতলা পেল্লায় বাড়িটা। ডাক বিভাগের রেকর্ড অনুযায়ী ঠিকানা ৫৬ রিং রোড, লাজপত নগর, দিল্লি ১১০০২৪। শহরের দক্ষিণপ্রান্তে পাঞ্জাবি অধ্যুষিত ওই এলাকায় এই বাড়িটার আলাদা করে কোনো বিশেষত্ব চোখে পড়ার কোনও কারণ নেই! কিন্তু আসলে ক’জনই বা জানেন প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে শেখ হাসিনা যখন প্রথম ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন তার ঠিকানা ছিল রিং রোডের ওপরের এই ভবনটাই? আসলে তখন ৫৬ রিং রোড ছিল ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের একটি ‘সেফ হাউজ’ বা গোপন অতিথিশালা। শেখ মুজিবুর রহমান আততায়ীদের হাতে নিহত হওয়ার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী যখন তার কন্যাকে সপরিবারে ভারতে আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, দেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো প্রথমে তার থাকার ব্যবস্থা করেছিল এই বাড়িতেই। পরে একাধিকবার হাতবদল হয়ে ওই ভবনটি এখন শহরের একটি ছিমছাম চারতারা হোটেলে রূপ নিয়েছে। নাম ‘হোটেল ডিপ্লোম্যাট রেসিডেন্সি’। মজার ব্যাপার হলো, লাজপত নগরের ওই এলাকাটি এখন দিল্লির আইভিএফ চিকিৎসার প্রধান হাবে পরিণত; যার সুবাদে বাংলাদেশসহ বিশ্বের নানা দেশ থেকে হাজার হাজার নিঃসন্তান দম্পতি ওখানে আসেন এবং দিনের পর দিন ওখানকার হোটেল ও গেস্ট হাউসগুলোতে থাকেন। কিন্তু বাংলাদেশের এই মেডিকেল ট্যুরিস্টদের যারা ওই বিশেষ হোটেলটিতে ওঠেন, তাদের হয়তো কারও জানা নেই তাদের দেশের সবচেয়ে বেশি সময় প্রধানমন্ত্রী থাকা শেখ হাসিনাও তার জীবনের চরম সঙ্কটের মুহূর্তে ওই একই ভবনে আশ্রয় পেয়েছিলেন! লাজপত নগরের ওই ঠিকানায় অবশ্য শেখ হাসিনা বা তার পরিবারকে খুব বেশিদিন থাকতে হয়নি। শহরের ব্যস্ততম রাস্তার ওপর একজন গুরুত্বপূর্ণ অতিথিকে দীর্ঘ সময় রাখাটা নিরাপদ নয় বিধায় তাদের সরিয়ে নেওয়া হয় দিল্লির কেন্দ্রস্থলে অভিজাত পান্ডারা রোডের একটি সরকারি ফ্ল্যাটে, যার বাইরে ঝোলানো থাকত ভিন্ন নামের নেমপ্লেট। দীর্ঘ প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর সেখানেই ছিলেন তারা। লাজপত নগরের সেই ভবনে এসে ওঠার ঠিক ৪৯ বছর বাদে বাংলাদেশ থেকে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে শেখ হাসিনা যখন আরও একবার ভারতে এসে আশ্রয় নিলেন, তখনও কিন্তু শহরে তার প্রথম ঠিকানায় তিনি থিতু হননি। আসলে আজ থেকে ঠিক একশো দিন আগে ৫ আগস্টের চরম নাটকীয় পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনা যখন ভারতে পা রাখেন, দিল্লির বিশ্বাস ছিল তার এই আসাটা একেবারেই সাময়িক; ইউরোপ বা মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশে যাওয়ার আগে এটা একটা সংক্ষিপ্ত যাত্রাবিরতির বেশি কিছু নয়! যে কোনো মুহূর্তে তৃতীয় কোনো দেশের উদ্দেশে তিনি রওনা হয়ে যাবেন, এই ধারণা থেকেই প্রথম দুই-চারদিন তাকে ও তার বোন শেখ রেহানাকে রাখা হয়েছিল দিল্লির উপকন্ঠে গাজিয়াবাদের হিন্ডন বিমানঘাঁটির টার্মিনাল বিল্ডিংয়েই, যেটির নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার ভার দেশের বিমান বাহিনীর। কিন্তু চট করে শেখ হাসিনার তৃতীয় কোনো দেশে পাড়ি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠার পর ভারত সরকার তাকে হিন্ডন থেকে সরিয়ে আনে দিল্লির কোনো গোপন ঠিকানায়। পরে তাকে হয়তো দিল্লির কাছাকাছি অন্য কোনো সুরক্ষিত ডেরাতে সরিয়েও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে ভারত সরকার আজ পর্যন্ত কোনো তথ্যই প্রকাশ করেনি। কিন্তু ‘লোকেশন’ যাই হোক, ভারতে তার পদার্পণের একশো দিনের মাথায় এসে এই প্রশ্নটা ওঠা খুব স্বাভাবিক যে, এখন শেখ হাসিনাকে কীভাবে ও কী ধরনের নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে? আর সেটার পেছনে কারণটাই বা কী? পাশাপাশি এই ‘এক্সট্রাঅর্ডিনারি সিচুয়েশন’ বা চরম অস্বাভাবিক একটা পরিস্থিতিতে তিনি স্বাধীনভাবে কতটা কী করতে পারছেন? কিংবা ‘হোস্ট কান্ট্রি’ হিসেবে ভারত কি তাকে কোনো কোনো কাজ না-করারও অনুরোধ জানিয়েছে? দিল্লিতে একাধিক মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা ও ওয়াকিবহাল মহলের সঙ্গে কথাবার্তা বলে বিবিসি বাংলা এসব প্রশ্নের যে উত্তর পেয়েছে, প্রতিবেদনে থাকছে তারই সারাংশ। নিরাপত্তা প্রোটোকলটা ঠিক কী রকম? সরকারি পদমর্যাদা ও নিরাপত্তাগত ঝুঁকি বিবেচনায় ভারতের ভিভিআইপিরা বিভিন্ন ক্যাটাগরির নিরাপত্তা পেয়ে থাকেন। যার মধ্যে ‘জেড প্লাস প্লাস’-কেই সর্বোচ্চ বলে ধরা হয়।  প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তা অবশ্য সম্পূর্ণ আলাদা মানদণ্ডে আয়োজন করা হয়। ‘স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপ’ বা এসপিজি কমান্ডোরা সচরাচর বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় রেখে তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব সামলান। যে ভিভিআইপিদের নিয়মিত প্রকাশ্যে আসতে হয়, আর যাদের লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকলেও চলে– অবশ্যই তাদের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার আয়োজনও হয় কিছুটা ভিন্ন ধাঁচের।  তাহলে ‘অপ্রত্যাশিত অথচ অতি গুরুত্বপূর্ণ’ অতিথি শেখ হাসিনার জন্য ভারত এখন ঠিক কোন ধরনের নিরাপত্তা প্রোটোকল অনুসরণ করছে? হুবহু এই প্রশ্নটাই করা হয় ভারতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাকে, যিনি গত একশোদিন ধরে ভারতে শেখ হাসিনার প্রতিটি পদক্ষেপের বিষয়ে সম্পূর্ণ অবগত। ক্ষুদে বার্তায় তিনি ছোট ছোট তিনটি বাক্যে এই প্রশ্নের যে উত্তর দিলেন, তা এমন- ১. ‘বেয়ার মিনিমাম, প্লেইন ক্লোদস, নো প্যারাফারনেলিয়া!’ যার অর্থ হল, যেটুকু নাহলে নয় শেখ হাসিনাকে সেটুকু নিরাপত্তাই দেওয়া হয়েছে। সাদা পোশাকের রক্ষীরাই তার চারপাশে ঘিরে রয়েছেন (জলপাই-রঙা পোশাকের কমান্ডো বা সেনাসদস্যরা নন)। আর গোটা বিষয়টার মধ্যে কোনো আতিশয্যর বালাই রাখা হয়নি! মানে ঢাকঢোল পিটিয়ে বা ঘটা করে তাকে কোনো নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে না। বরং পুরো জিনিসটাকে খুব নিচু তারে বেঁধে রাখা হয়েছে। ২. ‘ইন হার কেস, সিক্রেসি ইজ দ্য সিকিওরিটি!’ সোজা কথায়, তার বেলায় গোপনীয়তাই হল নিরাপত্তা! এটারও অর্থ খুব সহজ– শেখ হাসিনার অবস্থানের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে গোপনীয়তা রক্ষার ওপর। কারণ তিনি কোথায়, কীভাবে আছেন এটা যত গোপন রাখা সম্ভব হবে, ততই তার নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র করা সহজ হবে। ৩. ‘মুভমেন্টস অ্যান্ড ভিজিটস– অ্যাজ লিটল অ্যাজ পসিবল!’ ওই কর্মকর্তা তার তৃতীয় বাক্যে জানাচ্ছেন, শেখ হাসিনাকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে যাওয়া, কিংবা তার সঙ্গে অন্যদের দেখা করানোর ব্যবস্থা– এটাও যতটা সম্ভব এড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে শেখ হাসিনার মুভমেন্টস বা ভিজিটস যে পুরোপুরি বন্ধ নয়, তার কথায় সে ইঙ্গিতও ছিল! ওই কর্মকর্তার কথা থেকে স্পষ্ট, শেখ হাসিনার জন্য কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকলেও সেটা খুব বিশেষ এক ধরনের আয়োজন– মানে ধরা যেতে পারে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর জন্য যে ধরনের নিরাপত্তা থাকে তার সঙ্গে সেটা মাত্রায় তুলনীয় হলেও আয়োজনে একেবারেই অন্য রকম! শেখ হাসিনাকে যাতে কোনোভাবেই প্রকাশ্যে না আসতে হয়, এই প্রোটোকলে সেই চেষ্টাও বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। ফলে দিল্লির মর্নিং ওয়াকারদের স্বর্গ লোদি গার্ডেনে তিনি এসে মাঝেমাঝে হাঁটাহাঁটি করে যাচ্ছেন কিংবা ইচ্ছে করলে নিজামুদ্দিন আউলিয়ার দরগায় বৃহস্পতিবারের সন্ধ্যায় কাওয়ালি শুনে আসছেন– এই ধরনের যাবতীয় জল্পনা হেসেই উড়িয়ে দিচ্ছেন ভারতের সংশ্লিষ্ট মহলের কর্মকর্তারা! সেই সঙ্গে তারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, শেখ হাসিনাকে ভারত আশ্রয় দিয়েছে, এর অর্থ হলো তার সম্পূর্ণ নিরাপত্তা ও সুরক্ষার দায়িত্বও কিন্তু এখন ভারতেরই কাঁধে। সেখানে সামান্য কোনো ভুল হলেও তার দায় ভারতের কাঁধেই আসবে এবং সেটা দিল্লির জন্য অত্যন্ত বিব্রতকর হবে। ফলে সেই নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনও আপস করা যাবে না এবং তার জীবনকে সামান্যতম ঝুঁকিতেও ফেলা যাবে না। আর পাশাপাশি পুরো বিষয়টা অত্যন্ত গোপন রাখতে হবে– এগুলো বিবেচনায় নিয়েই সাজানো হয়েছে তার নিরাপত্তা প্রোটোকল! ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে মেলামেশা? গত ৫ আগস্ট যখন শেখ হাসিনা দিল্লিতে এসে নামেন, সে দিনই সন্ধ্যায় দিল্লিতে কংগ্রেসের একদা মুখপাত্র শর্মিষ্ঠা মুখার্জি নিজের এক্স হ্যান্ডল থেকে একটি টুইট করেন। তিনি লেখেন, ‘স্টে সেফ অ্যান্ড স্ট্রং, হাসিনা আন্টি। টুমরো ইজ অ্যানাদার ডে, মাই প্রেয়ার্স আর উইথ ইউ!’ শেখ হাসিনাকে ‘আন্টি’ বলে ডাকতে পারেন, দিল্লিতে শর্মিষ্ঠা মুখার্জি ছাড়া এমন আর দ্বিতীয় কেউ আছেন কিনা বলা খুব মুশকিল! সেই প্রিয় আন্টিকে মনোবল শক্ত রাখার কথা বলতে তিনি কিন্তু এক মুহূর্তও দেরি করেননি। আসলে শর্মিষ্ঠা মুখার্জির আরেকটা পরিচয় হলো, তিনি ভারতের প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কন্যা। খুব ছোটবেলায় শেখ হাসিনার পরিবারের সঙ্গে তার যে নিবিড় ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়েছিল, তা আজও এতটুকু ম্লান হয়নি বলেই তিনি ওই কথাগুলো সেদিন বলতে পেরেছিলেন। পঁচাত্তরে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী শেখ হাসিনাকে দিল্লিতে আশ্রয় দেওয়ার পর তাদের ‘স্থানীয় অভিভাবক’ হিসেবে সবকিছু দেখাশুনার ভার ছেড়ে দিয়েছিলেন তার আস্থাভাজন বাঙালি কংগ্রেস নেতা প্রণব মুখার্জির ওপর। হিন্দি ও পাঞ্জাবিভাষীদের শহর দিল্লিতে নির্ভেজাল বাংলায় কথা বলতে পারাটাও তখন শেখ হাসিনা ও তার স্বামী-সন্তানদের জন্য ছিল বিরাট একটা ব্যাপার! প্রণব মুখার্জির স্ত্রী শুভ্রা মুখার্জির সঙ্গেও নিবিড় পারিবারিক বন্ধন গড়ে উঠেছিল শেখ হাসিনার। আর শেখ হাসিনার মেয়ে পুতুল ও প্রণববাবুর কন্যা শর্মিষ্ঠা ছিল প্রায় সমবয়সী। দুটি বাচ্চা মেয়ে প্রায়ই পান্ডারা রোড থেকে হাঁটাপথের দূরত্বে ইন্ডিয়া গেটের প্রশস্ত লনে খেলতে চলে যেত! প্রণব মুখার্জি নিজে একবার এই প্রতিবেদককে হাসতে হাসতে গল্পচ্ছলে বলেছিলেন, ‘নিজের ছেলেমেয়েদের কখনও সেভাবে সময় দিতে পারিনি, কিন্তু মিসেস গান্ধীর নির্দেশে আমি শেখ হাসিনার ছেলে-মেয়ে, জয় আর পুতুলকে নিয়ে হরিয়ানার দমদমা লেকে বোটিং পর্যন্ত করিয়েছি!’ ফলে প্রণব মুখার্জির গোটা পরিবারের সঙ্গে শেখ হাসিনার পরিবারের সবার কেন নিবিড় আত্মীয়তার সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছিল, তা বোঝা মোটেই শক্ত নয়।  প্রয়াত পিতাকে নিয়ে শর্মিষ্ঠা মুখার্জি গত বছর ‘প্রণব মাই ফাদার’ নামে যে স্মৃতিচারণাটি লিখেছেন তাতেও তিনি লিখেছেন, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীনও দিল্লিতে হুটহাট প্রণব মুখার্জির কাছে তার ফোন আসত! প্রণব মুখার্জি হয়তো তখন দেশের অর্থ, প্রতিরক্ষা বা পররাষ্ট্রমন্ত্রী, তিনি শেখ হাসিনাকে মনে করিয়ে দিতেন এভাবে একজন প্রধানমন্ত্রীর অন্য দেশের ক্যাবিনেট মন্ত্রীকে সরাসরি ফোন করাটা ঠিক বিধিসম্মত নয়! শর্মিষ্ঠা মুখার্জি জানাচ্ছেন, তখনই হাসিনা তার স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বলে উঠতেন, ‘আরে রাখেন তো আপনার প্রোটোকল! শোনেন, যে জন্য ফোন করলাম ...’ ওপরের এতগুলো কথা এই জন্যই বলা যে, দিল্লিতেও এমন কেউ কেউ আছেন রাজনীতি বা কূটনীতির ঊর্ধ্বে উঠে শেখ হাসিনা যাদের ‘ফ্যামিলি’ বলে ভরসা করতে পারেন। দিল্লিতে সে সময় বহুদিন থাকার সুবাদে তার নিজস্ব পরিচিতিরও একটা বলয় গড়ে উঠেছিল, যাদের মধ্যে কেউ কেউ এখনও জীবিত বা সক্রিয় আছেন। কিংবা দিল্লিতে আজও আছেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাবেক কর্নেল অশোক তারার মতো কেউ, যিনি একাত্তরের ১৭ ডিসেম্বর সকালে ধানমন্ডিতে পাকিস্তানি সেনাদের পাহারায় থাকা শেখ হাসিনাসহ মুজিব পরিবারের সদস্যদের প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন। আজও অশোক তারা ও তার স্ত্রী, দুজনের সঙ্গেই শেখ হাসিনার দারুণ সুসম্পর্ক! এমনকি ঢাকাতে কূটনীতিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে গেছেন, এমন অনেক সাবেক ভারতীয় কর্মকর্তার সঙ্গেও ব্যক্তিগত পর্যায়ে শেখ হাসিনার সৌহার্দ আছে। বিবিসি বাংলা জানতে পেরেছে, গত একশো দিনের ভেতর তার পুরনো পরিচিত এই ঘনিষ্ঠজনদের মধ্যে কেউ কেউ শেখ হাসিনার সঙ্গে সামনাসামনি দেখা করারও সুযোগ পেয়েছেন। তবে এই ধরনের ভিজিটের সংখ্যা হাতেগোনা হতে পারে। ভারত সরকারও সচেতনভাবে তার ক্ষেত্রে এই ধরনের কিছু দেখা-সাক্ষাতের অনুমতি দিয়েছে, যাতে তাদের ভিভিআইপি অতিথি মানসিকভাবেও চাঙ্গা থাকেন! রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কতটা অবাধ? গত তিন মাসে শেখ হাসিনার সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কথিত ফোনালাপের বেশ কিছু অডিও ‘ভাইরাল’ হয়েছে – যাতে একপক্ষের কণ্ঠস্বর হুবহু শেখ হাসিনার মতোই শোনাচ্ছে। ভারত যদিও এই সব ‘ফাঁস’ হওয়া অডিও নিয়ে সরকারিভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে একাধিক পদস্থ সূত্র একান্ত আলোচনায় স্বীকার করেছেন এগুলো বাস্তবিকই শেখ হাসিনার কণ্ঠস্বর! দিল্লির নর্থ ব্লকের একজন কর্মকর্তা আবার বলছেন, ‘আমি জানি না এটা এআই দিয়ে বানানো হয়েছে নাকি শেখ হাসিনার নিজেরই গলা। তবে তার তো পরিচিতদের সঙ্গে কথাবার্তা বলায় কোনো বিধিনিষেধ নেই। এখন কেউ যদি সেই আলাপ রেকর্ড করে লিক করে দেয়, তাতে আমাদের কী করার আছে?’ ভারতে কোনো কোনো পর্যবেক্ষক আবার ধারণা করছেন, শেখ হাসিনা যাতে নিজের দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়ে তাদের মনোবল ধরে রাখতে পারেন– সে জন্য দিল্লিই এসব কথাবার্তা হতে দিচ্ছে এবং পরে সুযোগ বুঝে তা লিকও করে দিচ্ছে, যাতে তা যত বেশি সম্ভব লোকের কাছে পৌঁছতে পারে! এর আসল কারণটা যাই হোক, বাস্তবতা হলো শেখ হাসিনা ভারতে কোনো গৃহবন্দিও নন বা রাজনৈতিক বন্দিও নন। ফলে দেশে-বিদেশে তার পরিচিতদের সঙ্গে কথাবার্তা বলার সুযোগ তিনি পাচ্ছেন। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘ভারতে যখন কোনো রাজনৈতিক নেতা গৃহবন্দি হন, তার বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে যোগযোগের অধিকারও কার্যত কেড়ে নেওয়া হয়! যেমন ধরুন পাঁচ বছর আগে কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলোপ করার পর ওমর আবদুল্লা বা মেহবুবা মুফতিদের যখন গৃহবন্দি করা হয়, তারা কিন্তু দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে দেখা করা তো দূরস্থান– মোবাইল বা ইন্টারনেট সংযোগও পাননি!’ সুতরাং শেখ হাসিনা যে ভারতে মোটেই গৃহবন্দি নন– তার প্রমাণ তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিতই কথাবার্তা বলতে পারছেন। দিল্লিতে থাকা মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ বা ভার্জিনিয়াতে থাকা ছেলে সজীব ওয়াজেদের সঙ্গেও তার প্রায় রোজই যোগাযোগ হচ্ছে। নিউজ চ্যানেল, খবরের কাগজ বা ইন্টারনেটেও তার সম্পূর্ণ অ্যাকসেস আছে। তবে ৫ আগস্টের পর থেকে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের যে নেতাকর্মীরা পালিয়ে ভারতে চলে এসেছেন তাদের কারও কারও সঙ্গে শেখ হাসিনার যোগাযোগ হলেও তারা কেউই সশরীরে দলনেত্রীর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাননি। আর ভারতের মাটিতে বসে শেখ হাসিনা যাতে এখনই নিজের বয়ানে কোনো প্রকাশ্য রাজনৈতিক বিবৃতি না দেন, সে জন্যও তাকে ভারতের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে বলে বিবিসি জানতে পেরেছে। আসলে শেখ হাসিনাকে ভারতে আশ্রয় দিয়ে তারপর তার মাধ্যমে ভারত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে উসকানি দিতে চাইছে– এটা যাতে কেউ বলতে না পারে, সে জন্যই দিল্লির এই সতর্ক অবস্থান! আর যেহেতু শেখ হাসিনার নিজস্ব কোনো ভেরিফায়েড ফেসবুক বা এক্স অ্যাকাউন্টও নেই – ফলে এটাও দিল্লির স্বস্তির একটি কারণ যে, সেখানেও তার কোনো পোস্ট আসছে না! কিন্তু বাংলাদেশে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক পুনর্বাসন কি আদৌ সম্ভব? এই অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়টা নিয়ে দিল্লি কী ভাবছে?  ভারত এ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি কথাও বলছে না সঙ্গত কারণেই। তবে ঢাকায় ভারতের সাবেক হাই কমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, এই কাজটা শুধু কঠিন নয়, খুবই কঠিন! এখনও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে বিক্ষোভ চলছে। তাদের দলীয় সংগঠনও ছত্রভঙ্গ! তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনার বয়স আজকের চেয়ে দশটা বছর কম হলেও ধরে নেওয়া যেত, তিনি দেশে ফিরে দলের হাল ধরবেন। কিন্তু এই মুহূর্তে সেটা প্রায় অসম্ভব বলেই মনে হচ্ছে। কিছুদিন আগে ফাঁস হওয়া একটি অডিওতে শেখ হাসিনার মতো কণ্ঠস্বরে একজনকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি (বাংলাদেশের) খুব কাছাকাছিই আছি, যাতে চট করে ঢুকে পড়তে পারি!’ গত সপ্তাহে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ী হওয়ার পর আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মীও হয়তো ভাবছেন, তাদের নেত্রীর দেশে ফেরা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা! তবে শেখ হাসিনা এই মুহূর্তে যে দেশের আতিথেয়তায় আছেন তারা কিন্তু এখনই অতটা আগ বাড়িয়ে ভাবতে রাজি নয়! সাউথ ব্লকের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার কথায়, ‘পিচ এখনও প্রতিকূল, বল উল্টাপাল্টা লাফাচ্ছে। এ রকম সময় চালিয়ে খেলতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে! এখন বরং ধৈর্য দেখানোর সময়। ফলে প্রতিপক্ষের লুজ বলের জন্য অপেক্ষা করাটাই শ্রেয়। রাজনীতির উইকেটে পোড় খাওয়া ব্যাটার শেখ হাসিনাও নিশ্চয় এটা জানেন এবং সেই অনুযায়ী উপযুক্ত সুযোগ এলে তবেই সেটা কাজে লাগাবেন– একশো দিনের মাথায় ভারতও আপাতত এটুকুতেই তাদের ভাবনা সীমিত রাখছে! আরটিভি/আইএম
জলবায়ু সম্মেলন কপে কেন গেলেন না মোদী বা যাদব
জাতিসংঘের জলবায়ুবিষয়ক বৈশ্বিক সম্মেলন কনফারেন্স অব পার্টিজ (কপ) এর ২৯ তম শীর্ষবৈঠকে যোগ দিলেন না ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যাচ্ছেন না পরিবেশমন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদবও। পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী কীর্তিবর্ধন সিং ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবেন। তিনি ১৮-১৯ নভেম্বর কপ ২৯-এ যাবেন বলে জানানো হয়েছে। ভারতে এমনিতে প্রতিমন্ত্রীদের খুব একটা গুরুত্ব নেই। অধীর চৌধুরী কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী থাকার সময় বলতেন, প্রতিমন্ত্রীরা হলেন আধা-মন্ত্রী। ফলে একজন প্রতিমন্ত্রী কপ ২৯-এ ভারতের প্রতিনিধিত্ব করায় প্রশ্ন উঠেছে, এই সম্মেলনকে কি গুরুত্ব দিচ্ছে না ভারত? ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগামী ১৬ থেকে ২১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী বিদেশ সফর করবেন। তিনি নাইজেরিয়া, ব্রাজিল ও গায়ানা যাবেন। কাকতালীয় হলেও ঘটনা হলো, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দ্য সিলভাও কপ ২৯-এ আসেননি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-ও কপ ২৯-এ যোগ দেননি। জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসও যাননি। পরিবেশ বিজ্ঞানী বিল হেয়ার বার্তাসংস্থা এপি-কে বলেছেন, পরিবেশ নিয়ে সিদ্ধান্ত কার্যকর করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তির অভাব দেখা যাচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়ার তাগিদটাই নেই। ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার্স অফ কমার্সের রিপোর্ট বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে গত দশকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশগুলির ক্ষতির পরিমাণ দুই ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এক ট্রিলিয়ন মানে একের পর ১২টা শূন্য। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের, দুই নম্বরে আছে চীন ও তিন নম্বরে ভারত। ভারতের ক্ষতির পরিমাণ ১১ হাজার দুইশ কোটি ডলার। আর যে তিন দেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তাদের রাষ্ট্রপ্রধানরাই কপ২৯-এ যোগ দেননি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও পরিবেশমন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব কেন কপ২৯-এ গেলেন না, সেবিষয়ে সরকারিভাবে কোনো ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি। বিজেপি সূত্র জানাচ্ছে, ভূপেন্দ্র যাদব মহারাষ্ট্রের বিধানসভা ভোটের দায়িত্বে আছেন। আগামী ২০ নভেম্বর মহারাষ্ট্রে বিধানসভা নির্বাচন। তাই দলের তরফে ভোটের গুরুদায়িত্ব সামলাতে গিয়েই কপ২৯-এ তার যাওয়া হয়নি। মহারাষ্ট্রের বিধানসভা ভোট বিজেপি-র কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পশ্চিম ভারতের এই রাজ্যে বিজেপি-কে শরদ পাওয়ার, উদ্ধব ঠাকরে এবং কংগ্রেস জোটকে হারিয়ে ক্ষমতা ধরে রাখতে হবে। তাই ভূপেন্দ্র যাদবকে এই সময় মহারাষ্ট্রের বিষয়টিই দেখতে হবে। ভারতের ঘোষণা ২০২২ সালে কপ২৬-এ প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, ২০৭০ সালে ভারত জিরো এমিশনের জায়গায় পৌঁছে যাবে। ভারতের লক্ষ্য হলো, ২০৩০ সালের মধ্যে ক্লিন এনার্জির পরিমাণ ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে নেওয়া। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের পরিস্থিতি হলো, ভারতের বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় ৪৫২ দশমিক সাত গিগাওয়াট। তার মধ্যে ৪৪ দশমিক পাঁচ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন কয়লা বা তেলের উপর নির্ভরশীল নয়। আরটিভি/এএইচ
ভারতে রুদ্ধদ্বার কোর্টরুমে আরজি কর মামলার বিচার শুরু
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসককে খুন ও ধর্ষণ মামলার বিচার সোমবার শুরু হলো। শিয়ালদহের রুদ্ধদ্বার আদালতে এই বিচার পর্ব শুরু হলো। সিবিআই তাদের চার্জশিটে সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কেই প্রধান অভিযুক্ত হিসাবে চিহ্নিত করেছে। তাকে কালো প্রিজন ভ্যানে করে প্রবল নিরাপত্তার মধ্যে আদালতে নিয়ে আসা হয়। আদালত চত্বরের মূল প্রবেশদ্বার দিয়ে ভ্যান ঢুকিয়ে তা আবার বন্ধ করে দেয়া হয়। সাংবাদিক সত্যজিৎ সাউ জানিয়েছেন, আদালত চত্বরে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করে রাখা হয়েছিল। গত সোমবার চার্জ গঠনের দিন ভ্যানের মধ্যে থেকে সঞ্জয় রায় কিছু কথা বলেছিলেন। টিভি ক্যামেরায় রেকর্ড হওয়া সঞ্জয়ের সেই কথা থেকে প্রবল বিতর্ক শুরু হয়।   সঞ্জয় সেদিন দাবি করেছিল, তাকে ডিপার্টমেন্ট কথা বলতে বারণ করেছিল। এদিন তাই ভ্যানের কাছে কাউকে যেতে দেয়নি পুলিশ। আদালতকক্ষ থেকেও যারা মামলার সঙ্গে জড়িত নন, তাদের বের করে দেয়া হয়। রুদ্ধদ্বার কক্ষে শুনানি ও সক্ষ্যগ্রহণ হয়। আদালতে আরজি করের নির্যাতিতার বাবা-মা আদালত কক্ষে ছিলেন। তারা সিবিআইয়ের গাড়িতে করে আসেন। প্রথম দিনেই তাদের সাক্ষ্য নেয়া হয়। মোট ১২৮ জনের সাক্ষ্য নেয়া হবে। তার জন্য সপ্তাহে চার থেকে পাঁচদিন ধরে এই মামলার শুনানি হতে পারে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে তারা আদালতকক্ষে ঢোকেন। প্রথমে বাবা ও তারপর মায়ের সাক্ষ্য দেয়ার কথা। নির্যাতিতার বাবা-মা এতদিন ধরে বলে এসেছেন, শুধু সঞ্জয় রায় নয়, আরো মানুষ এই কাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। প্রথম দিন তিন ঘণ্টা ধরে সাক্ষ্যগ্রহণপর্ব চলে। বিচারপর্ব শুরু হলো আন্দোলনকারীরা প্রথম থেকে দাবি করছিলেন, আরজি কর কাণ্ডের দ্রুত বিচার করতে হবে। এতদিনে সেই বিচার শুরু হলো। আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের অভিযোগ ছিল, এই কাণ্ডের সঙ্গে একাধিক মানুষ জড়িত। কিন্তু সেই প্রশ্নের ফয়সালা এখনো হয়নি। কিন্তু এখনো পর্যন্ত চার্জশিটে প্রধান অভিযুক্ত হলো সঞ্জয় রায়। এখন শিয়ালদহের আদালতে এই মামলার বিচার শুরু হলো। এখানে মামলার রায় দেওয়ার পর উচ্চ আদালতে তার বিরুদ্ধে আবেদন হতে পারে। সাধারণত এই ধরনের মামলা সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। রুদ্ধদ্বার আদালতকক্ষে বিচারকে বলা হয় ইন-ক্যামেরা বিচার। কোনো মামলার বিচার ইন ক্যামেরা হবে নাকি প্রকাশ্য আদালতে হবে তা ঠিক করার অধিকার আদালতের আছে। কোনো মামলা খুব সংবেদনশীল হলে গোপনীয়তার অধিকার ও সংশ্লিষ্ট পক্ষের মর্যাদা রক্ষার জন্য আদালত ইন ক্যামেরা বিচারের নির্দেশ দেয়। তখন সেখানে মিডিয়া বা বাইরের কেউ আদালতকক্ষে থাকতে পারেন না। আরটিভি/এএইচ