ঢাকা

আন্তর্জাতিক সুখ দিবস আজ

লাইফস্টাইল ডেস্ক, আরটিভি নিউজ

বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫ , ১২:৫০ পিএম


loading/img
ছবি: ফ্রিপিক

আজ ২০ মার্চ, আন্তর্জাতিক সুখ দিবস। সুখ—একটি ছোট্ট শব্দ, কিন্তু এর গভীরতা অসীম। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ২০১২ সালে এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক সুখ দিবস হিসেবে ঘোষণা করে, যা প্রথমবারের মতো ২০১৩ সালে উদযাপিত হয়। লক্ষ লক্ষ মানুষ এই দিনে সুখ ও সুস্থতার প্রসারে নানা কর্মকাণ্ডে অংশ নেন। মূলত, সুখকে মানুষের মৌলিক অধিকার হিসেবে বিবেচনা করে বিশ্বব্যাপী মানুষের জীবনমান উন্নত করা, ইতিবাচক মনোভাব ছড়িয়ে দেওয়া এবং সমতা, শান্তি ও সুস্থ জীবনযাত্রার গুরুত্ব তুলে ধরার উদ্দেশ্যেই এই দিনটি পালন করা হয়।

বিজ্ঞাপন

সুখ মানে কী?
সুখ একেকজনের জন্য একেক রকম। কারও কাছে সুখ মানে পরিবারকে নিয়ে হাসিখুশি থাকা, কারও কাছে এটি সফলতার আরেক নাম, আবার কেউ কেউ প্রকৃতির সান্নিধ্যে গিয়েও সুখ খুঁজে পান। গবেষণায় দেখা গেছে, মানসিক প্রশান্তি, ইতিবাচক চিন্তাভাবনা এবং সামাজিক সংযোগ মানুষের সুখের প্রধান উপাদান।

আন্তর্জাতিক সুখ দিবসের পটভূমি
ভুটান নামের ছোট্ট রাজ্যটি বিশ্বের প্রথম দেশ, যারা জিডিপির পরিবর্তে গ্রস ন্যাশনাল হ্যাপিনেস (GNH) বা সামগ্রিক জাতীয় সুখ সূচককে উন্নয়নের মানদণ্ড হিসেবে গ্রহণ করে। ভুটানের অনুপ্রেরণায় জাতিসংঘ ২০১২ সালে সিদ্ধান্ত নেয় যে, অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি মানুষের সুখকেও বিশ্ব উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। এর পরই ২০ মার্চকে আন্তর্জাতিক সুখ দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

বিজ্ঞাপন

সুখ মাপা সম্ভব?
হ্যাঁ, কিছু সূচকের মাধ্যমে সুখ পরিমাপ করা সম্ভব। প্রতি বছর ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়, যেখানে বিভিন্ন দেশের মানুষের গড় সুখের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এ প্রতিবেদনে সাধারণত ছয়টি বিষয় বিবেচনা করা হয়:

  • আর্থিক নিরাপত্তা – অর্থনৈতিক সচ্ছলতা মানুষের সুখের অন্যতম উপাদান।
  • সামাজিক সংযোগ – পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও সহকর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক সুখের মূল ভিত্তি।
  • স্বাস্থ্য ও সুস্থতা – শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা সুখের জন্য অপরিহার্য।
  • ব্যক্তিগত স্বাধীনতা – ব্যক্তি স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের সুযোগ যত বেশি, তত বেশি মানুষ সুখী থাকে।
  • দাতব্যতা ও সহমর্মিতা – অন্যকে সাহায্য করার মানসিকতা সুখ বাড়িয়ে দেয়।
  • দুর্নীতির পরিমাণ – কম দুর্নীতিপ্রবণ দেশগুলোর জনগণ সাধারণত বেশি সুখী।

 

বিজ্ঞাপন

সুখী দেশগুলো এবং বাংলাদেশের অবস্থান
প্রতি বছর প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট অনুযায়ী, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক, সুইজারল্যান্ড, আইসল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডস পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। অপরদিকে, যুদ্ধবিধ্বস্ত ও দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলো এই তালিকায় নিচের দিকে অবস্থান করে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন সত্ত্বেও জনগণের মধ্যে হতাশা ও দুশ্চিন্তা লক্ষ্য করা যায়। মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি সচেতনতা বাড়ানো, সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তুললে দেশের মানুষ আরও সুখী হতে পারে।

সুখী থাকার কিছু সহজ উপায়
সুখ কেবল বাইরের উপাদানের ওপর নির্ভর করে না, বরং এটি অভ্যন্তরীণ বিষয়ও বটে। কিছু ছোট ছোট পরিবর্তন এনে নিজেকে আরও সুখী করা সম্ভব:

  • কৃতজ্ঞ থাকা – যা আছে তা নিয়ে কৃতজ্ঞ থাকলে মন ভালো থাকে।
  • পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো – ভালো সম্পর্ক মানসিক প্রশান্তি আনে।
  • শরীরচর্চা ও পর্যাপ্ত ঘুম – মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার জন্য অত্যন্ত জরুরি।
  • সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া – অন্যকে সাহায্য করলে নিজের মাঝেও ইতিবাচক অনুভূতি তৈরি হয়।
  • ডিজিটাল ডিটক্স – সোশ্যাল মিডিয়া থেকে কিছু সময় বিরতি নিলে মানসিক প্রশান্তি পাওয়া যায়।

 

সুখ খুঁজে পাওয়ার বিষয় নয়, এটি গড়ে তুলতে হয়। আন্তর্জাতিক সুখ দিবসের মূল বার্তা হলো— সুখ কেবল ব্যক্তিগত নয়, বরং এটি সামাজিক ও বৈশ্বিক উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তাই আসুন, আমরা সবাই মিলে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলি, আত্মতুষ্টি অর্জন করি এবং চারপাশের মানুষদের সুখী করার চেষ্টা করি। কারণ, সুখ তখনই প্রকৃত অর্থে সফল হয়, যখন তা সবার জন্য নিশ্চিত করা যায়।

আরটিভি/জেএম

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |