ঢাকা

কেমন ছিলেন রবীন্দ্রনাথ (ভিডিও)

লাইফস্টাইল ডেস্ক, আরটিভি অনলাইন

রোববার, ০৭ মে ২০১৭ , ১১:৫৬ পিএম


loading/img

আজ ২৫ বৈশাখ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৬তম জন্মজয়ন্তী।‘মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে, মানবের মাঝে আমি বাঁচিবার চাই’ তার অসংখ্য সাহিত্য কর্মের মাধ্যমে তিনি আজও বেঁচে আছেন আমাদের মাঝে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এক হিমালয়প্রতিম ব্যক্তিত্ব। বাংলা সাহিত্য জগতের এক অমূল্য ধন। তিনি বাংলা সাহিত্যে এনে দিয়েছেন এক যুগান্তকারী পরিবর্তন। তাকে বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিকও বলা হয়। আজ আমরা টুকরো টুকরো কথায় হারিয়ে যাব রবীন্দ্রভুবনে। 

বিজ্ঞাপন

ব্যক্তি রবীন্দ্রনাথ : রবী ঠাকুর কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ীতে ১৮৬১ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ছিলেন পিতামাতার চর্তুদশ সন্তান। ঠাকুর পরিবারের আদি পদবী ছিল কুশারী। তারা ছিলেন শান্ডিল্য গোত্রের ব্রাহ্মণ। আগের দিনে নিচু শ্রেণির হিন্দুরা ব্রাহ্মণদের অনেক সময় ঠাকুর বলতেন, এভাবেই তাদের পদবী ঠাকুর হয়ে যায়। তবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুররা ছিলেন জমিদার। তাদের জমিদারির প্রতি গ্রামেই, তারা প্রাথমিক বিদ্যালয়রে ব্যবস্থা করেছিলেন। এছাড়া তিনটি মাইনর স্কুল ও জমিদারির সদর কাছারিতে হাইস্কুলও তৈরি করা হয়। বানানো হয় ছাত্রাবাসও। কিন্তু বালক রবীন্দ্রনাথের স্কুলশিক্ষায় ছিল অনাগ্রহ, তাই  তার জন্য বাড়িতেই রাখা হয় গৃহশিক্ষক। তিনি বাড়িতে পড়াশোনা, গান ও আঁকা শেখা ছাড়াও প্রায় প্রতিদিন ভোরে উঠে তখনকার বিখ্যাত কুস্তিগির হিরা সিং এর কাছে কুস্তি শিখতেন।

ঘুমাতেন কম : রবীন্দ্রনাথের ঘুম ছিলো খুব কম। তিনি খুব গভীর রাতে শুতেন। আবার উঠে যেতেন প্রায় শেষ রাতে। সাধারণত তার দিন শুরু হতো প্রভাত স্নান দিয়ে। ঠিক ভোর ৪টায় এক কাপ চা পান করতেন। ভোর ৪টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত একটানা লিখতেন। তারপর সকাল ৭টায় নাস্তা সেরে আবার লেখা। লেখার ফাঁকে ফাঁকে চা বা কফি পান করতে পছন্দ করতেন তিনি। বেলা ১১টা পর্যন্ত টানা লিখে আবার স্নানে যেতেন। এরপরই খেতে বসতেন। রবীন্দ্রনাথ দুপুরে খাবার পর ঘুমাতে বা বিশ্রাম নিতে তেমন পছন্দ করতেন না। ঘন্টাখানেক কোনো পত্রিকা বা বইয়ের পাতা উল্টে আবার লিখতে বসতেন।

বিজ্ঞাপন

কবির পোশাক : গুরুদেব বাড়িতে সাধারণত গেরুয়া বা সাদা রঙের জোব্বা আর পায়জামা পরতেন। এছাড়া তিনি উপাসনা বা সভা সমিতিতে যাবার সময় জোব্বা ছাড়াও সাদা ধুতি, জামা ও চাদর ব্যবহার করতেন। ঋতু উৎসবে ঋতু অনুযায়ী নানা রঙের রেশমী উত্তরীয় ব্যবহার করতেন। যেমন বর্ষায় কালো বা লাল, শরতে সোনালি, বসন্তে বাসন্তী রঙের। কখনো কখনো জোব্বার রঙও হতো উত্তরীয়র রঙের।

সন্ধ্যায় খেতেন রাতের খাবার : কবি বিকেল ৪টার দিকে চা এর সঙ্গে কিছু নোনতা বিস্কুট খেতেন। রবীন্দ্রনাথ রাতের খাবারটা সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে সেরে ফেলতেন। রাতে তিনি বিদেশি খাবার খেতেই পছন্দ করতেন। আর দুপুরে সাধারণত বাঙালি খাবার খেতেন। রাতে খেয়েদেয়ে আবার একটানা রাত ১২টা পর্যন্ত চলতো লেখা বা পড়া।

বিজ্ঞাপন

জন্মোৎসব : আনুষ্ঠানিকভাবে রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন প্রথম পালন করা হয়েছিল ১৮৮৭ সালে, পার্ক স্ট্রিটে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়িতে। গুরুদেবের সেই প্রথম জন্মোৎসব পালনের কৃতিত্ব দাবি করেছেন রবীন্দ্রনাথের ভাগনি, সরলা দেবী চৌধুরাণী।

বিজ্ঞাপন

গ্রন্থ ও সাহিত্য : রবীন্দ্রনাথের প্রথম বই ‘কবি কাহিনী’ প্রকাশিত হয় কবির অজান্তে ১৮৭৮ সালের ৫ নভেম্বর। কবি তখন বিদেশে। কবিবন্ধু প্রবোধচন্দ্র ঘোষ বইটি প্রকাশ করে কবির কাছে পাঠিয়েছিলেন।মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথের মোট ৩১১টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগ থেকে প্রকাশিত হয় ৮৮টি গ্রন্থ। প্রশান্ত মহলানবীশ একবার হিসেব করে দেখেছিলেন যে গল্পগুচ্ছসহ রবীন্দ্রনাথের ১৮টি গ্রন্থে মোট ৮,৬৩,৩১০টি শব্দ আছে। তার মধ্যে ‘আমি’ আছে ৭৭৩৭ বার এবং ‘তুমি’ আছে ৩,১৪৭ বার।

গান ও আবৃত্তি চর্চা : রবীন্দ্রনাথ যে শুধু লেখালেখি নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন তা কিন্তু না। লেখালেখির পাশাপাশি গান, নাচ এবং অভিনয়ও তিনি সমান তালে চালিয়ে যেতেন। ছোটবেলা থেকেই রবীন্দ্রনাথ গানের চর্চা করে এসেছেন। গবেষকদের মতে, রবীন্দ্রনাথ মাত্র ৭ বছর বয়সে তার জীবনের প্রথম গানটি গান। সে গানটি হলো তার খুড়তুতো দাদা গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘দেখিলে তোমার সেই অতুল প্রেম আননে’ গানটি। রবীন্দ্রনাথের গাওয়া প্রথম ডিস্ক বের হয় ১৯০৫ সালে। একপিঠে ছবি বঙ্কিমচন্দ্রের ‘বান্দেমাতরম’ অন্যপিঠে স্বরচিত ‘সোনার তরী’ কবিতার আবৃত্তি।

মঞ্চ অভিনেতা : রবীন্দ্রনাথ ১৬ বছর বয়সে জীবনের প্রথম মঞ্চ অভিনয় করেছিলেন। নিজের লেখা নাটকে প্রথম অভিনয় করেছিলেন ‘বাল্মীকি প্রতিভা’য় বাল্মীকির ভূমিকায়। অভিনয়ের জন্যে রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং মঞ্চে অবতীর্ণ হন মোট ১০১ বার।

নাচকেও বাদ দেননি : রবীন্দ্রনাথ খুব ভালো ‘বলডান্স’ করতে পারতেন। তাঁকে নাচ শিখিয়েছিলেন খুড়তুতো দিদি সত্যেন্দ্রবালা ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথ নানা দেশের নানা ধরনের নৃত্যশৈলী দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে তাঁর নিজস্ব নৃত্যশৈলীর জন্ম দিয়েছিলেন। তবে তিনি সবসময় বলতেন, নাচের টেকনিক যেন গানের ভাবকে ছাড়িয়ে না যায়।

নোবেল প্রাইজের টাকা : ১৯০৫ সালে রবীন্দ্রনাথ স্থাপন করেন ‘পতিসর কৃষি ব্যাংক’। রবীন্দ্রনাথ তার নোবেল প্রাইজের এক লক্ষাধিক টাকা সেই ব্যাংকেই ঢালেন। সেখান থেকে কৃষকদের স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া হতো। ব্যাংকটি চলেছিল কুড়ি বছর।

হোমিওপ্যাথিকেই বিশ্বাস : রবীন্দ্রনাথের হোমিওপ্যাথি পদ্ধতিতে চিকিৎসার প্রতি আগ্রহ ছিল খুব বেশি। তিনি নিজেও হোমিওপ্যাথি পদ্ধতিতে চিকিৎসা করতেন। হেলথ কো-অপারেটিভ তৈরি করে চিকিৎসার ব্যবস্থা ভারতে রবীন্দ্রনাথই প্রথম চালু করেন।

রঙের খেলা ছিল শখ : রবীন্দ্রনাথের অনেক শখের মধ্যে আরো একটি শখ ছিল ছবি আঁকা। জীবনের অনেক আগে আঁকা শুরু করলেও নিয়মিত ছবি আঁকতে শুরু করেন ৬৭ বছর বয়সে। ১৯০১ থেকে ১৯৪০,  এই চল্লিশ বছরে সাদা কালো ও গাঢ় রঙে ছোট বড় মিলিয়ে রবীন্দ্রনাথ ছবি এঁকেছিলেন প্রায় ৩ হাজার।

একজন বৃক্ষপ্রেমী : রবীন্দ্রনাথ শুধু কাব্যপ্রেমীই ছিলেন না তিনি একজন বৃক্ষপ্রেমীও ছিলেন। তার গানে ও কবিতায় ছড়িয়ে আছে অসংখ্য উদ্ভিদ আর ফুলের নাম। শুধু কাব্যেই উল্লেখ আছে ১০৮টি গাছ ও ফুলের নাম। এর মধ্যে বেশ কিছু বিদেশি ফুলের বাংলা নাম দিয়েছিলেন কবি স্বয়ং। তার দেয়া কয়েকটি ফুলের নাম হলো- অগ্নিশিখা, তারাঝরা, নীলমণিলতা, বনপুলক, বাসন্তী।

 

 

আরকে/জেএইচ

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement

Loading...


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |