• ঢাকা বুধবার, ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১ মাঘ ১৪৩১
logo

ঘুরে দাঁড়ানোর অনন্য উদাহরণ সিভিল এভিয়েশন স্কুল

আরটিভি নিউজ

  ২৯ মে ২০২৩, ১৫:৫০
ঘুরে দাঁড়ানোর অনন্য উদাহরণ সিভিল এভিয়েশন স্কুল

রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর এলাকা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকার ছেলে-মেয়েদের শিক্ষাদানের লক্ষ্যে ১৯৭৮ সালে সিভিল এভিয়েশন স্কুল নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানের স্বর্ণযুগ থাকলেও পরবর্তী সময়ের ইতিহাস অনেকটাই নেতিবাচক। বিশেষ করে করোনা মহামারির থাবায় অনেকটা নড়বড়ে হয়ে যায় সেখানকার শিক্ষা কার্যক্রম। ১২শ’ শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক মাত্র ২৯। অধিকাংশ শিক্ষার্থী শিক্ষাবিমুখ। অভিভাবকরা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত নিয়ে শংকিত। শিক্ষকদের মধ্যেও নেই তেমন কোনো সৃজনশীল উদ্যোগ। এমন অবস্থায় অধ্যক্ষের দায়িত্বে আসেন অধ্যক্ষ উইং কমান্ডার মো. মনিরুজ্জামান। ঘুরে দাঁড়ানোর ইতিহাস রচনা করেন তিনি।

কিভাবে সম্ভব হলো এ অসম্ভব কাজ, এ বিষয়ে মতামত নিতে চাইলে তিনি তার ব্যক্তিগত কিছু অনুভূতি প্রকাশ করেন একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় তার কর্মনীতি সম্পর্কেও কথা বলেন।

‘আমি যখন কাজ শুরু করি ওই সময়ে এখানে মাত্র ২৯ জন শিক্ষক ছিলেন। তাদের সবাইকে আলাদাভাবে ডেকে একে একে সাক্ষাতকার গ্রহণ করি এবং অত্র প্রতিষ্ঠানে বিদ্যমান সমস্যাগুলো চিহ্নিত করার চেষ্টা করি। তাদের বক্তব্যগুলো যাচাই-বাছাই এর জন্য আবার প্রত্যেক ক্লাস থেকে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে ডেকে আলাদাভাবে কথা বলি। এরপর অত্র প্রতিষ্ঠানের উন্নতির পথে বাধা বা সমস্যাসমূহ আমার কাছে স্পষ্ট হয় এবং উক্ত সমস্যাসমূহ সমাধানে আত্মনিয়োগ করি। এখানে সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল সঠিক শিক্ষককে সঠিক বিষয় পড়ানোর জন্য নির্ধারণ না করা এবং যোগ্য শিক্ষককে পদায়ন না করা। এছাড়া শিক্ষক সংখ্যাও ছিল সীমিত। আমি তখন শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে নজর দেই এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা ছাত্র-ছাত্রীদের খুঁজে খুঁজে খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের ব্যবস্থা করি।’ বললেন অধ্যক্ষ মো. মনিরুজ্জামান।

তিনি আরো জানালেন, পুরাতন শিক্ষকসহ নতুন শিক্ষকদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা এবং আন্তরিকতার ফলে ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানের পড়ালেখার মান এবং পরিবেশের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হতে থাকে। যার ফলশ্রুতিতে খুব দ্রুত এই প্রতিষ্ঠান এলাকার শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়। ফলাফল হিসেবে বর্তমানে অত্র প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৩০০০ শিক্ষার্থী অধ্যায়ন করছে।

বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির স্কুল ও কলেজ শাখায় মোট ১০৫ জন অভিজ্ঞ শিক্ষক, সুপরিসর মাল্টিমিডিয়া, শীততাপ নিয়ন্ত্রিত লাইব্রেরি, ব্যবহারিক ল্যাব, ক্লাসরুম, আইটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র এবং সুন্দর ও বিশাল একটি খেলার মাঠ রয়েছে। এছাড়া শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের যাতায়াতের জন্য রয়েছে পরিবহন ব্যবস্থা।

এই প্রতিষ্ঠানের গরিব, অসহায় শিক্ষার্থীরা যেন ঝরে না পড়ে সেজন্য তাদের বিনা বেতন ও অর্ধবেতনে পড়ালেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। করোনার পরে সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী স্কুল-কলেজ খোলার পর বিদ্যালয়ে শতভাগ শিক্ষার্থীদের উপস্থিত করতেও সক্ষম হয়েছেন অধ্যক্ষ উইং কমান্ডার মো. মনিরুজ্জামান।

রাজধানী উত্তরা ও এর আশেপাশের এলাকায় এখন স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে এই প্রতিষ্ঠানটি।

বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানে একটি পরিশীলিত ও দূষণমুক্ত পরিবেশ বিরাজ করছে। দ্রুত সময়ে ইংরেজি মাধ্যম ও কলেজ শাখা চালুর ব্যাপারে অধ্যক্ষ বলেন, আমি যোগদান করার ছয় মাসের মাঝে এখানে ইংরেজী ভার্সন চালু করা হয়েছে।

বর্তমানে প্লে গ্রুপ থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত ইংলিশ ভার্সন শিক্ষাদান চলছে। যা প্রতিবছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে খুব অল্প সময়ের মধ্যে কলেজের সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তির মাধ্যমে কলেজ শাখার কার্যক্রম চালু হয়েছে এবং প্রথম বছরেই একাদশ শ্রেণিতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে।

কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ উইং কমান্ডার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, শিক্ষার্থীদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে আমি এবং এই প্রতিষ্ঠান দৃঢ় প্রতিজ্ঞবদ্ধ। এক্ষেত্রে সততা, শৃঙ্খলা ও নৈতিকতার কোন বিকল্প নেই। বিশেষ করে শৃঙ্খলার বিষয়ে আমরা আপোষহীন। কেননা সুশিক্ষা এবং শৃঙ্খলাই পারে কোনো ব্যক্তির জীবন ধারার পরিবর্তন করতে।

অধ্যক্ষ বলেন, আমাদের লক্ষ্য আত্মমর্যাদা বোধ সম্পন্ন সৎ, মেধাবী ও নিয়ত পরিবর্তনশীল বিশ্বের আধুনিকতম জ্ঞানের অধিকারী মানুষ তৈরি করা। আশা করি সকলের সহযোগিতা ও ভালোবাসায় সিভিল এভিয়েশন স্কুল এন্ড কলেজ আগামী দিনগুলোতে আরো সাফল্য বয়ে আনবে এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।

এই প্রতিষ্ঠানটির আধুনিকীকরণে অধ্যক্ষ আরো দুটি ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ এর কথা জানান। এখানে মহিলা শিক্ষকদের শিক্ষাদানকে নির্বিঘ্ন করনে ‘শিশু দিবা যত্ন কেন্দ্রের’ ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি আরো উল্লেখ করেন এই সফলতার মূল নায়ক অত্র প্রতিষ্ঠানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান, বিবিপি, বিএসপি, বিইউপি, এনডিইউ, এএফডব্লিউসি, পিএসসি। তার নির্দেশনাতে আমরাই প্রথম এ বছর বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের শ্রেণি কার্যক্রমের ব্যবস্থা করে একটি বিশেষ ধারার শিক্ষা ব্যবস্থা শুরু করতে যাচ্ছি। যেখানে মূল ধারা ও বিশেষ ধারা দুটিই চলমান থাকবে, এবং এটিই হবে বাংলাদেশের প্রথম বিশেষ ও মূল ধারার সমন্বিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

তাই বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ, অবকাঠামো ও শিক্ষাদান ব্যবস্থার বৈপ্লবিক পরিবর্তনের পাশাপাশি খুব দ্রুত সময়ে এই প্রতিষ্ঠানকে দেশের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একটি হিসেবে দেখতে চান তিনি। তার দূরদর্শিতা আর সাহসিকতায় এই প্রতিষ্ঠান তার হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাচ্ছে।

মন্তব্য করুন

Bangal
rtv Drama
Radhuni
  • অন্যান্য এর পাঠক প্রিয়