তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী দ্রুত পাসের দাবি সাংবাদিকদের
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী দ্রুত পাস করার দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিকরা। তামাক নিয়ন্ত্রণে সাংবাদিকদের কার্যকর ভূমিকা রাখার লক্ষ্যে নারী মৈত্রীর আয়োজনে ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে সাংবাদিকদের কাছে প্রত্যাশা ও করণীয়’ বিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় এই দাবি জানান তারা।
বুধবার (৯ অক্টোবর ) সকালে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মতবিনিময় সভায় একাত্তর টিভির সাংবাদিক সুশান্ত কে সিনহা তামাক কোম্পানিগুলোর নানামুখী অপকৌশলে বিভ্রান্ত না হওয়ার কথা জানান। তিনি বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের অধিকতর সংশোধনী আনার যে উদ্যোগ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় নিয়েছে, তা নিঃসন্দেহে একটি সময়োচিত এবং জনবান্ধব উদ্যোগ। তবে বেশ কিছু ধাপ পার হলেও আইনটিকে চূড়ান্ত রূপ পেতে হলে আরও কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করতে হবে। এখনও এটি পাসের অপেক্ষায় রয়েছে। এটিকে আইনে রূপান্তরের পথে নানা রকম বাধা আসার আশঙ্কা রয়েছে, বিশেষ করে সংশোধনীর বিপক্ষে তামাক কোম্পানিগুলো নানামুখী অপ-কৌশল ও অপ-তৎপরতা চালাচ্ছে। তারা নানা রকম বিভ্রান্তিমূলক তথ্য মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচার করে জনবিভ্রান্তি তৈরি করছে। এক্ষেত্রে আমাদের সাংবাদিক বন্ধুদেরকে যথেষ্ট সতর্ক থাকতে হবে।
রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি বলেন, তামাক থেকে সরকারের যে রাজস্ব আয় আসে, তার চেয়ে তামাক ব্যবহারজনিত কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা বাবদ ব্যয় ৩৪ শতাংশ বেশি। রাজস্ব আয় প্রায় ২২ হাজার ৮১০ কোটি টাকা এবং চিকিৎসা ব্যয় প্রায় ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। তামাকের কারণে বার্ষিক ক্ষতি প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা (ক্যানসার সার্ভে-২০১৮)। সুতরাং, মানুষের ভ্রান্ত ধারণা দূর করার পাশাপাশি প্রয়োজন তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী কর।
আর একটি প্রাণও যাতে না হারাতে হয় তামাকের কারণে সে প্রেক্ষাপটে সোহরাব হাসান বলেন, প্রতিদিন মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন এই ভয়ঙ্কর তামাকের আগ্রাসনে। তামাকের এই সর্বগ্রাসী আগ্রাসন ও তামাক মহামারি আমাদের জনস্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। আমাদের তামাকের ভয়াবহতা সম্পর্কে আরও সোচ্চার হতে হবে।
বিশেষজ্ঞ অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর ড. গোলাম মহিউদ্দীন ফারুক বলেন, বিশ্বব্যাপী ক্যান্সারের কারণে মৃত্যুর প্রায় এক-তৃতীয়াংশের জন্য দায়ী তামাক। তামাকের কারণে ফুসফুস ক্যানসার, প্যানক্রিয়াসের ক্যানসার, মুখগহ্বরের ক্যানসারের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। এই ঝুঁকি মোকাবিলায় তামাক নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই। বাংলাদেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক অন টোব্যাকো কন্ট্রোল—এফসিটিসি’তে স্বাক্ষরকারী প্রথম দেশ হলেও ধূমপানমুক্ত পরিবেশ এবং তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন ও প্রণোদনা নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে এখনও সর্বোত্তম মান অর্জন করতে পারেনি। তাই তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাস এবং শক্তিশালী করা অতি জরুরি।
সভাপতির বক্তব্যে শাহীন আকতার ডলি বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৩ কোটি ৮৪ লাখ মানুষ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন, বিশেষ করে নারী ও শিশুরা। পরোক্ষ ধূমপানের কারণে নারীর প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস, গর্ভপাত এবং সন্তান জন্মদানে মা ও শিশু উভয়ই মৃত্যুর মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই নারী ও শিশু স্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাসের জোরালো দাবি জানাচ্ছি।
নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আকতার ডলির সভাপতিত্বে বিশেষজ্ঞ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অনকোলজিস্ট এবং বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটির প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ডা. গোলাম মহিউদ্দীন ফারুক, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস’র (সিটিএফকে) লিড পলিসি অ্যাডভাইজার মো. মোস্তাফিজুর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি, গ্লোবাল টিভির চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার শামীম মেহেদী, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, জাতীয় প্রেস ক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য শাহনাজ বেগম পলি, অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস- এপি’র ঢাকা ব্যুরো প্রধান জুলহাস আলম।
আরটিভি/এফএ
মন্তব্য করুন