উত্তম রিজিকের জন্য দোয়া ও করণীয়
রিজিক (উত্তম উপার্জন) একজন মানুষের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মহান আল্লাহ রিজিক প্রদানকারী এবং তিনি যেভাবে চান, সেভাবেই রিজিক দেন। তবে মুমিনদের জন্য কেবল আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা যথেষ্ট নয়, বরং রিজিকের ব্যাপারে কিছু করণীয়ও রয়েছে, যা তাদের জীবনকে সহজ করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সাহায্য করে। উত্তম রিজিকের জন্য কিছু দোয়া ও করণীয় বিষয়ে আলোচনা করা হলো।
১. আল্লাহর কাছে দোয়া করা
রিজিকের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ তার বান্দাদের কাছে সৎভাবে চাওয়া এবং প্রার্থনা করার জন্য উৎসাহিত করেছেন। কিছু দোয়া যা উত্তম রিজিক লাভে সাহায্য করে:
- اللهم اغفر لي ذنبي وَوَسَحُ لِي فِي رِزْقِي وَبَارِك لي فيما رَزَقْتَنِي
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফির লি জাম্বি, ওয়া ওয়াসসি লি ফি রিযকি, ওয়া বারিক লি ফিমা রাজাকতানি।
অর্থ : হে আল্লাহ, আমার গুনাহ ক্ষমা করে দিন, আমার ঘর প্রশস্ত করে দিন এবং আপনি আমাকে যে জীবিকা দান করেছেন তাতে বরকত দান করুন।
- اللّهُمّ اكفني بحلالك عن حرامك، واغنني بفضلك عمن سواك
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাক ফিনি বিহালালিকা আন হারামিকা ওয়া আগনিনি বিফাদলিকা আম্মান সিওয়াক।
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমাকে তোমার হালাল দ্বারা হারাম থেকে বিরত রেখো এবং তোমার অনুগ্রহ দ্বারা অন্যদের থেকে আমাকে পরিতৃপ্ত করো।’ এই দোয়া মুমিনদের জন্য বিশেষভাবে রিজিকের সংস্থান এবং হারাম থেকে মুক্তির জন্য অত্যন্ত কার্যকর।
আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা
রিজিকের বরকত লাভের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। আপনি যদি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতে পারেন, তবে তিনি আপনাকে প্রয়োজনীয় রিজিক দান করবেন। এর জন্য আপনাকে নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর দিকে মনোযোগ দিতে হবে:
হালাল উপার্জন
আমরা যে উপার্জন করি, তা যেন হালাল উপার্জন হয়, সেদিকে নজর রাখতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ইমানদাররা! তোমরা যা উপার্জন কর তা থেকে ভালো এবং পবিত্র রিজিক খাও। (সুরা আল-মায়িদা: ৮৮)
জাকাত দেওয়া
জাকাত প্রদান রিজিকের প্রশস্ততার একটি বড় মাধ্যম। এর মাধ্যমে আপনি আপনার সম্পদে বরকত এনে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে পারেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা নিজেদের সম্পদের কিছু অংশ নিঃস্বার্থভাবে দান করে, তাদের জন্য আল্লাহ তাআলা আরো বরকত দেন।’
সচ্চরিত্র এবং কঠোর পরিশ্রম
সত্যবাদিতা, পরিশ্রম এবং সৎ পথে উপার্জন করা আল্লাহর কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিজেকে সবসময় সৎ ও নিষ্ঠাবান রেখে কাজ করা রিজিকের প্রশস্ততা আনে। এ ছাড়া, কাজের প্রতি নিষ্ঠা, কঠোর পরিশ্রম এবং ধৈর্য রাখাও গুরুত্বপূর্ণ।
ইস্তিগফার ও তাওবা করা
রিজিকের সমস্যা বা সংকটের সময় ইস্তিগফার করা (অভিশাপ থেকে মুক্তি চাওয়া) রিজিকের দ্বার খুলে দেয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি যদি তাদের (অথবা তোমাদের) ইস্তিগফার করি, তবে আমি আকাশ ও পৃথিবী থেকে তাদের জন্য রিজিক দেব।’ (সুরা নূহ: ১০-১২)
ধৈর্য ধারণ করা
কখনো কখনো রিজিক দেরিতে আসে। এ সময় ধৈর্য ধারণ করা এবং আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ বলেন, ‘যারা ধৈর্য ধারণ করে, তাদেরকে তাদের পুরস্কার দ্বিগুণ দেওয়া হবে।’ (সুরা আল-আহজাব: ১১)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতি দিন ১০০ বার আমার ওপর দরুদ পড়বে, আল্লাহ তার জন্য রিজিক বৃদ্ধি করবেন।’
রিজিক হলো আল্লাহর এক বিশেষ দান, এবং এর জন্য শুধু দোয়া করাই যথেষ্ট নয়, বরং আমাদের সৎভাবে কাজ করতে হবে, আল্লাহর নির্দেশ অনুসরণ করতে হবে এবং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে অপেক্ষা করতে হবে। ইস্তিগফার, হালাল উপার্জন, যাকাত প্রদান এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য সৎ পথে চলা রিজিকের দ্বার খুলে দেয়। আল্লাহ আমাদের সবাইকে উত্তম রিজিক দান করুন, এবং আমাদের কাজের মাধ্যমে তার সন্তুষ্টি অর্জন করার তৌফিক দিন। আমিন।
মন্তব্য করুন