জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা রেজিমের সঙ্গে করা ভারতের অর্থনৈতিক ও সামরিক চুক্তিগুলোকে ‘অবৈধ’ অভিহিত করে অবিলম্বে স্থগিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ।
এছাড়া সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যা ও গুম করে পাচার করার ঘটনায় ভারতের সরকার ও জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের মুখোমুখি করতে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করার দাবি জানিয়েছ সংগঠনটি।
ঐতিহাসিক বড়াইবাড়ী দিবস উপলক্ষে শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে ভারতীয় আগ্রাসন বিরোধী সমাবেশ থেকে এ দাবি জানানো হয়।
সমাবেশে ২০০১ সালের ১৮ এপ্রিল কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার বড়াইবাড়ী গ্রামে অনুপ্রবেশ করা ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বিজয়কে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করতে দিনটিকে ‘জাতীয় প্রতিরোধ দিবস’ ঘোষণার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এ সময় ছাত্র-জনতা ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবর’ ‘ভারতীয় আগ্রাসন, রুখে দাও জনগণ’ ‘সীমান্তে হত্যা কেন, ভারত রাষ্ট্র জাবাব দে’, ‘বড়াইবাড়ী জিন্দাবাদ, জুলাই বিপ্লব জিন্দাবাদ’ প্রভৃতি স্লোগান দেয়।
বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদের সভাপতিত্বে সমাবেশে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, যুগ্ম-আহ্বায়ক সাইয়েদ কুতুব, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের সদস্য সচিব ফজলুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক সানোয়ারা খাতুন, কেন্দ্রীয় সদস্য তাশফিকুল ইসলাম ও ঢাকা মাদ্রাসা-ই-আলিয়ার আহ্বায়ক রাকিব মণ্ডল বক্তব্য দেন।
মোহাম্মদ শামসুদ্দিন বলেন, আমরা গত ১৬ এপ্রিল দাবি করেছি, প্রতি বছর যেন ১৮ এপ্রিল রাষ্ট্রীয়ভাবে বড়াইবাড়ী দিবস পালন করতে হবে। সরকার এ বিষয়ে উদ্যোগ না নেওয়ায় আজ একই দাবি পুনর্ব্যক্ত করছি।
তিনি আরও বলেন, ভারতীয় আগ্রাসন থেকে দেশকে রক্ষা করতে বড়াইবাড়ী যুদ্ধের ইতিহাস মাধ্যমিক শ্রেণি থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বড়াইবাড়ী যুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া বাংলাদেশি সীমান্তরক্ষী বাহিনীর নাম বিজিবি বদলে আগের মতো বিডিআর করতে হবে।
সাইয়েদ কুতুব বলেন, দেশকে বিদেশি আগ্রাসন থেকে রক্ষা করতে উন্নত বিশ্বের মতো তরুণদের বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণ দিতে হবে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী জনগণকে রাইফেল চালানো শেখাতে হবে যেন আগ্রাসন হলে তারা সেনাবাহিনীর পাশে দাঁড়াতে পারে।
আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, গত ৫৪ বছর ধরেই ভারত বাংলাদেশের ওপর আগ্রাসন চালাচ্ছে। এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ২০০১ সালে বড়াইবাড়ীতে সফল প্রতিরোধ হয়েছে। তাই বড়াইবাড়ী দিবসকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে জাতীয় প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালন করতে হবে।
তিনি বড়াইবাড়ীতে শহীদ বিডিআর ল্যান্স নায়েক মো. ওয়াহিদুজ্জামান, সিপাহী মাহফুজুর রহমান ও সিপাহী আবদুল কাদেরকে বীরশ্রেষ্ঠ; যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বিডিআর সিও শাহরুখ জামানকে বীর প্রতীক; প্রতিরোধের অগ্রনায়ক বড়াইবাড়ীর বাসিন্দা ডা. সাইফুল ইসলাম লাল মিয়া ও প্রথম সংবাদদাতা মো. মিনহাজ আলীকে জাতীয় বীর ঘোষণা করার দাবি জানান।
এ সময় ভারতপন্থী ফ্যাসিবাদী দল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করায় সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন আবদুল ওয়াহেদ। তিনি বলেন, আমরা ফ্যাসিবাদী দল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে এ রাজু ভাস্কর্যে টানা ৩৬ দিন গণঅবস্থান করেছি। কিন্তু সরকার ভারতের কথায় লীগকে নিষিদ্ধ করেনি। উল্টো সরকার এদেরকে ছাড় দেওয়ায় আজ উত্তরায় এবং গত কয়েকদিনে খিলগাঁও ও চকবাজারসহ নানা জায়গায় মিছিল করেছে।
বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক হুঁশিয়ার করে বলেন, সরকার ফ্যাসিবাদী দল আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করলে আরেকটি গণঅভ্যুত্থান হবে।
ফজলুর রহমান বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে লাগাতারভাবে আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে। তারা আমাদের নাগরিকদের নির্বিচারে হত্যা করছে। আমরা দাবি জানাই, ভারত যদি আমাদের প্রতি আর একটি গুলি করে তবে আমাদেরকে দুইটি গুলি ছুড়ে জবাব দিতে হবে।
সমাবেশে বড়াইবাড়ী যুদ্ধের সাহসিকতার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বড়াইবাড়ীতে আমাদের বিডিআর ও জনগণের সামনে ভারত টিকতে পারেনি। তাদের তিন শতাধিক বিএসএফ সদস্য হতাহত হয়েছিল। অন্যদিকে বাংলাদেশের তিন বিডিআর সদস্য বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করে শাহাদাত বরণ করেছেন।
আরটিভি/আরএ/এআর