বিভাজনের পথ বেয়েই আওয়ামী লীগ আসবে বলে মন্তব্য করে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম বলেছেন, অভ্যুত্থানের শক্তির মধ্যকার বিরোধ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হোন।
শুক্রবার (২১ মার্চ) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে এক পোস্টে তিনি এসব কথা বলেন।
গুরুতর কয়েকটি বিষয়ে জানতে চেয়ে পোস্টে মাহফুজ আলম লিখেছেন, এস্টাবলিশমেন্ট মাস্টারমাইন্ড বানালো। আবার নিজেরাই মাস্টারমাইন্ডের বিরুদ্ধে নেপথ্য শক্তি’র অন্ধভক্তদের লেলিয়ে দিল। ছাত্রদের মধ্যকার ক্রেডিটবাজির লড়াই কারা শুরু করিয়ে দিল? নেপথ্য শক্তির ন্যারেটিভের পেছনে ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্ট কি করছিল? বামপন্থিদের একাংশকে কারা প্রথমেই অভ্যুত্থানের শক্তি থেকে আলাদা করে ফেলল? বামপন্থিদের মুজিববাদী অংশ কিভাবে পরিপুষ্ট হলো?
তিনি আরও লিখেন, প্রথম বিতর্ক হলো- সোনার বাংলা নিয়ে। সেখান থেকে কালচারাল ওয়ার শুরু। কখন, কাকে দিয়ে সে খেলা শুরু হলো? হিযবুত গালিটা দেওয়া হলো ছাত্রদের। অথচ ছাত্রদের হিযবুত বলে ন্যারেটিভ বানিয়ে আসল হিযবুতদের পতাকাবাজি করতে হেল্প করেছিল কারা?
এসকেএস টাওয়ারে এস্টাবলিশমেন্টের হাতে এক দশকে গজানো ‘তৌহিদী জনতা’ নামধারীদের প্রথম মিটিং হলো জানিয়ে তথ্য উপদেষ্টা লিখেন, পরে সারা বাংলাদেশে, জেলায় জেলায়। কারা ইন্ধন জোগাল তাদের। আর কার/কাদের বিরোধিতা করল, এখনও করে যাচ্ছে? ঢাকা শহরের স্কুল কলেজে র্যাডিকালাইজেশনের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত হলো কাদের আয়োজনে? নেপথ্য শক্তির প্রোপাগান্ডু (স) এবং মিম পেজগুলো একের পর এক আক্রমণ করল অভ্যুত্থানের নেতাদের। অভ্যুত্থানের যে নেতারা শাপলা-শাহবাগের বাইনারি ভাঙতে চাইল, নতুন বন্দোবস্ত গড়তে চাইল- তাদের বিরুদ্ধে নেপথ্য শক্তি, ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্ট, নেপথ্য শক্তির প্রোপাগান্ডু (স), তৌহিদী জনতা নামধারীদের একসঙ্গে লেলিয়ে দিল কারা? এর বিপরীতে ছাত্রদের প্রতিক্রিয়া কিভাবে ছাত্রদের নিজেদের মধ্যে বিভাজন শতগুণ বাড়িয়ে দিল?
বামপন্থি-ডানপন্থি বিভাজনের জন্য বিভিন্ন মঞ্চ ও আন্দোলনের পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ল কারা এমন প্রশ্ন করে মাহফুজ আলম লিখেন, সেসব মঞ্চের পেছনে নেপথ্য শক্তি কি করছিল? অর্থ ও জনবলের উৎস কারা ছিল? বামপন্থিদের একাংশ হরেদরে কেন এ সরকারের বিরোধী হয়ে উঠল এবং মুজিববাদীদের ক্রীড়ানকে পরিণত হলো? রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে ছাত্রদের নিয়ে টেনশন তৈরি করল কারা? কেন এক্স (সাবেক) কমিশনের এক সদস্য নেপথ্য শক্তির ইন্ধনে সমঝোতা করল? নেপথ্য শক্তিকে কিভাবে সাপোর্ট দেয়া হলো এডমিনে এবং ব্যবসায়ে, প্রকারাস্তরে যা ‘দেশপ্রেমিক’ নেপথ্য শক্তি আর জাতীয়’ শক্তির মধ্যে বিভাজন, সন্দেহ ও দূরত্ব তৈরি করল।
ছাত্ররা এবং অন্যান্য দলের কর্মীরা বিভিন্ন অপরাধ করছে না, তা কিন্তু নয় মন্তব্য করে তথ্য উপদেষ্টা লিখেন, জাতীয় শক্তিই বা কেন বারবার এলাইন করতে থাকল এস্টাবলিশমেন্টের সঙ্গে? কেন তারা ছাত্র-জনতার আবেগের বিরুদ্ধে যেতে চাইল? আর এ আলাইনমেন্টের সূত্রে জাতীয় শক্তি কেন ছাত্রদের ওপর আক্রমণ বহুগুণ বাড়িয়ে দিল, ডিসেম্বর অনওয়ার্ড? অলিগার্কদের টাকা কিভাবে ভাগ করা হলো, এস্টাবলিশমেন্ট, ‘বড়’ নেপথ্যশক্তি আর জাতীয়’ শক্তির মধ্যে? কিভাবে টিকিয়ে রাখা হলো সামিটসহ অন্যান্য গ্রুপের বিজনেস ইন্টারেস্ট। কিভাবে ছাত্রদের একাংশকে টেনে নেয়া হলো সেসব আর্থিক লেনদেনে। যাতে পরবর্তীতে তাদের ব্লাকমেইল করা যায়?
তিনি আরও লিখেন, লাকি কেন হঠাৎ সামনে আসল? শাহবাগ-শাপলার দ্বন্দ্ব কেন প্রকট হলো? সব বাহিনীর মোরাল কেন এখনো ভঙ্গুর? মিডিয়াগুলোর ন্যারেটিভ কেন এত এত সাজানো ও সময়োপযোগী হয়? মুজিববাদীরা কিভাবে রিওর্গানাইজড হলো মিডিয়া আর কালচারপাড়ায়?
তদুপরি, কোন কোন এডভাইজারের পক্ষ-বিপক্ষ কখন তৈরি করা হলো? কার কার পদত্যাগ চাওয়া হলো আর কাকে কাকে ইসলামবিদ্বেষী, নাস্তিক বানানো হলো? কেনই বা বানানো হলো? উত্তর হিসাবে বিশেষ কারও নাম গুরুত্বপূর্ণ না। আর, সবই অন্যরা করল, আমাদের কোনো দোষ নেই, তাও নয়। কিন্তু ষড়যন্ত্র হয়েছিল এবং এখনো চলমান! তবু, চলুন বিচার ও সংস্কারের পক্ষে কাজ করি। চলুন, শহিদ আহতদের স্পৃহা ও চৈতন্যের বাংলাদেশ তৈরি করতে আগুয়ান হই। এখনো সময় শেষ হয়নি! সবার জন্য শুধরাবার মতন সময় এখনো আছে! জুলাইয়ের মতো করে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ারও সুযোগ রয়েছে! চলুন, ছাত্ররা এক হোন/হই আবার। আমাদের বিরুদ্ধে, এ প্রজন্মের বিরুদ্ধে, ‘বাচ্চাকাচ্চা’দের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছে। এটাই সত্য! আপনারা রুখে দাঁড়ান এবং জবাবদিহি ও সুবিচারের রাষ্ট্র গঠনে আবার ঐক্যবদ্ধ হোন।
একমাত্র ছাত্র-জনতার জুলাই ঐক্যই পারবে আওয়ামী লীগের ফিরে আসাকে ঠেকিয়ে দিতে দাবি করে মাহফুজ আলম লিখেন, বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে পুরাতন বন্দোবস্তের সব কলকব্জা বিকল করেই এগোতে হবে। নাহলে কিছুই দীর্ঘমেয়াদে টিকবে না। জুলাই প্রজন্মের একাংশ এস্টাবলিশমেন্টের ফাঁদে পড়েছে, বিভিন্ন সেগমেন্টের ন্যায্য ক্ষোভকে একে অপরের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে ব্যবহার করা হয়েছে। আমাদের একে অপরের বিরুদ্ধে দাঁড় করানো হয়েছে যাতে এস্টাবলিশমেন্ট অক্ষত থাকে। আর সেটা আছেও বটে! তাই, আমাদের প্রজন্মের সব আবেগকেই আওয়ামী লীগ প্রশ্নে, বিচারের প্রশ্নে, সংস্কারের প্রশ্নে নিবদ্ধ করা এবং এস্টাবলিশমেন্টের পালটা সেটেলমেন্ট গড়ার কাজে লাগানো উচিত। জুলাই প্রজন্ম জিন্দাবাদ! ছাত্র-জনতার জুলাই ঐক্য জিন্দাবাদ।
আরটিভি/কেএইচ