সাকিব আল হাসানকে জানলো চীনের ইউনান প্রদেশের শিক্ষার্থীরা

খান আলামিন, চীনের ইউনান প্রদেশের তালি শহর থেকে

মঙ্গলবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ , ০৮:৫৭ পিএম


সাকিব আল হাসানকে জানলো চীনের ইউনান প্রদেশের শিক্ষার্থীরা

ক্রিকেটের ঝনঝনানি বাংলাদেশে যতটা, চীনে ঠিক তার বিপরীত। ফুটবলের সঙ্গে দীর্ঘদিন আগে থেকে চীনাদের পরিচয় ঘটলেও ক্রিকেটটা এখনো তাদের নখদর্পণের বাইরে। তাই বাংলাদেশের ক্রিকেট কিংবা ক্রিকেটারদের নিয়ে চীনাদের আগ্রহ না থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে সেই চীনেই বেশ কয়েকবার উচ্চারিত হলো সাকিব আল হাসানের নাম। 

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ-চায়না যুব ক্যাম্প-২০১৯ এর অংশ হিসেবে বাংলাদেশের দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী এখন চীনের ইউনান প্রদেশে অবস্থান করছে। প্রদেশের প্রাচীন শহর তালিতে এখন বাংলাদেশি যুবারা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সংস্কৃতি বিনিময় ঘটেছে তালির ফার্স্ট ক্লাস মিডল স্কুলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। সেখানেই ওঠে আসে বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রসঙ্গ। 

মিডল স্কুলের এক শিক্ষার্থী জানতে চান, বাংলাদেশের জনপ্রিয় খেলা কোনটি। তখন বাংলাদেশের এক শিক্ষার্থী বলেন, ক্রিকেট হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা এবং সাকিব আল হাসান বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার। গেল বিশ্বকাপে তিনি সবচেয়ে ভালো পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। তখন চীনের শিক্ষার্থীরা ভাঙা ভাঙা গলায় সমস্বরে বলে ওঠেন, সাকিব আল হাসান-সাকিব আল হাসান।  

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ফুটবলও বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয়। আর জাতীয় খেলা হচ্ছে কাবাডি, যাকে স্থানীয়ভাবে হাডুডু বলেই চেনে। এই সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মাধ্যমে চীনের মিডল স্কুলের শিক্ষার্থীরা জানতে পারে সাকিব আল হাসান সম্পর্কে, বাংলাদেশের ক্রিকেট, ফুটবল আর কাবাডি সম্পর্কে।

শুধু খেলা নয়, প্রশ্ন-উত্তর পর্বের মাধ্যমে চীনের শিক্ষার্থীরা যেমন বাংলাদেশ সম্পর্কে নানা বিষয়ে জানতে পারে, তেমনি বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাও চীনের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ করে। প্রশ্ন-উত্তর পর্বে চীনের শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, বিখ্যাত খাবার, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, সুন্দরবনসহ আরও নানা বিষয়ে জানতে চান। 

বিজ্ঞাপন

এরপর শুরু হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। মিডল স্কুলের মিলনায়তনে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চলে গান, নৃত্য আর কবিতা। সবগুলো পরিবেশনাই ছিল বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের। দিনাজপুর সরকারি স্কুলের শিক্ষার্থী শিউলি বাড়া আর ইউডার শিক্ষার্থী আলমিনা আক্তার নিতুর নৃত্যের তালে আর ছন্দে মোহিত হয় পুরো মিলনায়তন। 

গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী গান, ‘আজ কেন মোর প্রাণ সজনীগো, আমার মন করে উতলা’ গানের সঙ্গে তাদের যুগল নাচ সবার মন কেড়ে নেয়। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পোশাক শাড়ি পড়ে দুই শিক্ষার্থীর এই পরিবেশনা সত্যিই উপস্থিত সবার মন উতলা করে দেয়। এসময় বাঙালিদের পাশাপাশি চাইনিজদের করতালিতে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো মিলনায়তন।

নাচ আর ছন্দের তালে যখন পুরো মিলনায়তন মাতোয়ারা ঠিক তখনই বেজে ওঠে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের কবিতা আসাদ চৌধুরীর ‘বারবারা বিডলারকে’। আহমেদ রেজার বজ্রকন্ঠে উচ্চারিত কবিতায় শিহরণ জাগায় সবার শরীরে। চীনারা হয়তো এর মর্মার্থ বুঝেনি। তবে শিহরণের হাওয়া যে তাদেরকেও স্পর্শ করতে পেরেছে তা তাদের অভিব্যক্তিতেই বোঝা যায়। 

’ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা, আমাদের এই বসুন্ধরা। তাহার মাঝে লুকিয়ে আছে সকল দেশের সেরা।’ বাংলাদেশের রূপ সৌন্দর্যের বর্ণনা সংবলিত এই গান নিয়ে মঞ্চে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত দল। গানটি সবাই সমস্বরে গেঁয়ে ওঠে শিল্পীদের সঙ্গে। গানের মাঝে আচমকা তাদেরই একজন সাদিয়া রশনি সূচনা জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী কবিতা ‘বল বীর, বল উন্নত মম শির’ বলে সামনে এগিয়ে আসেন। আবারো শিহরণ জাগানিয়া এক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। 

দলগতভাবে ‘ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা, আমাদের এই বসুন্ধরা’ গাওয়ার পর পুনরায় এই গানেরই একক পরিবেশনা শুরু হয়। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাফকাত বিনতে কাদের সুরেলা কণ্ঠে পরিবেশন করেন গানটি। আর সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জেনিফার আহমেদ।  

লালনের ‘মিলন হবে কতদিনে’ গান দিয়ে শেষ হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা আর অনুষ্ঠান। ইউডার শিক্ষার্থী আলমিনা আক্তার  নিতুরই ছিল শেষ পরিবেশনাটি। তার কণ্ঠের জাদুতে মোহিত হয় উপস্থিত সবাই। চীনের বুকে লালনকে তার গানের মধ্য দিয়ে মেলে ধরে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা। ইউনান প্রদেশে রচিত হয় এক খণ্ড বাংলাদেশ। প্রস্ফুটিত হয় বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি।

এসজে

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission