ঢাকাশুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫, ২৯ ফাল্গুন ১৪৩১

শব্দ-ছবির শোভাযাত্রা অনলাইনে…

শাহেদ জাহিদী

সোমবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৬ , ১০:১৫ পিএম


loading/img

গণমাধ্যম কিংবা মিডিয়া। বহুল উচ্চারিত শব্দ নিঃসন্দেহে। বলা চলে ইংরেজি শব্দটাই বেশি চর্চিত হয় হামেশা।

বিজ্ঞাপন

মিডিয়া শব্দটি বহুবচন। এক বচনে-মিডিয়াম। তবে একক মাধ্যম বোঝাতেই মিডিয়া শব্দই ব্যবহৃত হচ্ছে বেশি।

আক্ষরিক অর্থে গণমাধ্যম হচ্ছে মানুষের সঙ্গে মানুষের বা গণযোগাযোগের অবলম্বন বা উপায়- যেখানে প্রতিফলিত হবে সবার আশা-আকাঙ্খা, ধ্যান-ধারণা, চিন্তা-চেতনা। প্রকাশ ঘটবে বহুমতের, ঐকমত্যের এমনকি মতভিন্নতারও। এসব মিথষ্ক্রিয়া বা পরস্পর সংযোগের মধ্য দিয়েই বেরিয়ে আসতে পারে নিরেট বা নিখাঁদ সত্য- যা সমাজকে এগিয়ে নেবে আলোকিত গন্তব্যে।

বিজ্ঞাপন

প্রশ্ন উঠতেই পারে, এ মানদণ্ডে আমাদের গণমাধ্যম কতটা জনঘণিষ্ঠ?

তথ্য-বিনোদন-শিক্ষা প্রদানের সঙ্গে সঙ্গে উদ্বুদ্ধ করবার কাজটিও কিন্তু গণমাধ্যমের। আর এসব ভূমিকা পালনে বিশ্বজুড়ে রেডিও এখনো পর্যন্ত জুড়িহীন। সেইসঙ্গে দোর্দণ্ড প্রতাপ নিয়ে বিকাশমান টিভি চ্যানেল। আর সনাতন কাগুজে পত্র-পত্রিকা তো রয়েছেই।

দুনিয়াজুড়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে প্রিন্ট বনাম ইলেকট্রনিক মিডিয়া বাস্তবতা। কেউ বলছেন, এরা পরস্পর পরিপূরক, কারো ভাষ্য- প্রতিদ্বন্দ্বী। কিন্তু আদৌ তুলনা চলে কি? ধরনের ভিন্নতা রয়েছে যে!

বিজ্ঞাপন

এটি সত্য, কোথাও কোথাও বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্বে কিছু নামীদামি কাগজের সার্কুলেশন বা বিক্রি কমে গেছে, এমন কি কোনো কোনোটি বন্ধ হয়ে গেছে। আবার কাগুজে সংবাদপত্রের প্রসারমানতাও দৃশ্যমান কোনো কোনো সমাজে।

যদিও ইন্টারনেটভিত্তিক নতুন মিডিয়া দারুণ শক্তিমত্তা নিয়ে উদ্ভাসিত এখন বিশ্বজুড়ে। বিজ্ঞান এবং তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশের ধারাবাহিকতায় প্রতিনিয়তই চেহারা পাল্টাচ্ছে অনলাইন মিডিয়া। মুঠোফোন আর নানা ডিভাইসের সুবাদে তথ্য-বিনোদন এখন রীতিমতো মানুষের নখদর্পনে। তাই কোনোরকম গবেষণা কিংবা জরিপ ছাড়াই বলে দেয়া চলে, অনলাইন পোর্টালই হয়ে উঠতে চলেছে তথ্যানন্দ পিপাসুদের প্রধানতম অবলম্বন।

মজার ব্যাপার হলো, প্রতিটি মাধ্যমেরই কোনো না কোনো সীমাবদ্ধতা আছে, যা নেই অনলাইনে। ছবি আর শব্দমালার এ মোহন মিছিলের গন্তব্যই যেন সীমানাহীন।অনলাইন এমনই এক লাইন যার শেষ বলে কিছু নেই।

ভেবে দেখুন তো, কী না ধারণ করতে পারে অনলাইন! লেখালেখির পাশাপাশি স্থির কিংবা চলমান ছবি তো বটেই, যোগাযোগের রাজা বেতারের প্রাণ- অডিওজুড়ে দেয়ার সুযোগটিও কিন্তু অবারিত এ মাধ্যমে। সেক্ষেত্রে বলা যেতেই পারে, সব গণমাধ্যমের মিলিত রূপই হচ্ছে অনলাইন।

স্বকীয়তা সমৃদ্ধ পরিবেশনা থাকবে যে অনলাইনে, ভিজিটরও নিশ্চয়ই বেশি মিলবে সেই সাইটে। সুযোগ যেহেতু আছে অডিও ব্যবহারের, সৃজনশীলতা কাজে লাগিয়ে বৈচিত্র্য আনা যেতে পারে যথেষ্টই।

ফোনে কোনো ঘটনার তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া নিয়ে নিউজে সেই অডিওজুড়ে দিলে খবর পরিবেশনা আরো অর্থময় হবে।

ভিডিও ব্যবহার সুবিধা থাকায় টিভি চ্যানেলের অনলাইন কনসার্ন একধাপ এগিয়ে থাকার সুযোগ নিতেই পারে।

বাসাবাড়ি বা অফিসে ফিক্সড টিভি দেখবার যে সীমাবদ্ধতা তা কেটে যাচ্ছে শুধু নয়, চলার পথে যে কোনো প্রান্তে যে কোনো অবস্থায় টিভি আপনার হাতের মুঠোয় ধরা দিচ্ছে অনলাইনেরই  সুবাদে।

গ্রাফিক্স চমক দেখানোর পাশাপাশি অ্যানিমেশন জাদু প্রয়োগের সুযোগও অবারিত এ মাধ্যমে।

কোনো ঘটনার তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া ফোনে নিয়ে নিউজের সঙ্গে অডিও ব্যবহার করার সুযোগ কাজে লাগানো যায়। তাৎক্ষ‍ণিকভাবে ঘটনাস্থল থেকে অডিও সাক্ষাৎকার বা ফোনো নিয়ে পরে পেজে কিছু সময়ের জন্য (এজ লাইভ) ব্যবহার করলে পাঠক-দর্শকের কাছে বেশ মনোগ্রাহী হবে।

রাজনীতিবিদ, খেলোয়ার, কিংবা যেকেনো অবস্থানের বিশিষ্টজন-গূরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির অডিও-ভিডিও সাক্ষাৎকার কাজে লাগানো যেতে পারে।

ফিচার স্টোরিতে দরকারমতো অডিও বা ভিডিও ডক্যুমেন্টারির ব্যবহার মনোজ্ঞ হতে পারে।

এখন প্রশ্ন, অনলাইনের বিরাট এ শক্তিমত্তাকে কাজে লাগাচ্ছি আমরা কতটা? ইতিবাচক কিংবা ফলপ্রসূ অর্থে একে ব্যবহারের অন্তহীন সুযোগ থাকা সত্ত্বেও এ মাধ্যমের অপব্যবহারের নজির রয়েছে অনেক। যে কারণে প্রশংসাপুষ্প ঝুড়িতে তোলার সঙ্গে সঙ্গে কাঠগড়ায়ও দাঁড়াতে হচ্ছে অনলাইনকে, এ মাধ্যমের নেতিবাচক চর্চাকারীদেরকে। ব্লগ’র মতো ইতিবাচক একটি টার্ম আমাদের সমাজে ‍দুষ্টুচক্রের কারণে হয়ে উঠেছে ‘আপত্তিকর’।

প্রযুক্তির অবাক অগ্রগতির বাস্তবতা এবং তারুণ্য নির্বিশেষে সববয়সী মানুষের দুর্নিবার কৌতূহলই বলে দিচ্ছে অনলাইনের সর্বোচ্চ সুবিধা কাজে লাগাতে হবে। মানব সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে অন্তহীন উৎকর্ষের পথে।

আধুনিক মানুষের সময় নেই, সময় নষ্ট করবার। কঠিন বাস্তবতাই জীবনযাত্রায় জুড়ে দিয়েছে ইঁদুরদৌঁড়। দ্রুত তথ্য পাবার জন্য ব্যাকুল এখন প্রতিটি মানুষ। সেই সঙ্গে খুব সংক্ষেপে এবং সহজ-সরল কথায় মূল খবর জানতে চায় সবাই, ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে। এক্ষেত্রে অনলাইনের কাছাকাছি ঘেঁষবার উপায় আছে কি, অন্য কোনো মাধ্যমের?

টেলিভিশন মুহূর্তেই খবর দিচ্ছে ঠিকই। কিন্তু প্রযুক্তির সবশেষ অগ্রগতি সুবাদে অনলাইন এগিয়েই থাকছে। স্মার্টফোনে কিংবা ট্যাবে যে কোনো প্রান্তের মানুষ, যে কোনো অবস্থায় জেনে নিতে পারছে সবশেষ তথ্য, সবার আগে। আর সেই সঙ্গে বিনোদন কিংবা যাপিত জীবনের চাহিদামাফিক সব বিষয়েই তৃষ্ণা মেটানোর সুযোগ করে দিচ্ছে অনলাইন মাধ্যম। তাই, সময়ের দাবি স্বয়ংসম্পূর্ণ অনলাইন পোর্টালের।

সত্যিই তো, ইন্টারনেটের ধারণসক্ষমতা যথাযথভাবে কাজে লাগানো গেলে কী বৈপ্লবিক বদলই-না সম্ভব সমাজে, জনজীবনে! অনলাইন সুযোগ করে দিয়েছে বলেই পাঠক এখন আর অনলুকার বা নির্লিপ্তের ভূমিকায় থাকতে নারাজ।কিংবা অন্যভাবে বললে, নীরব দর্শক-শ্রোতা না হয়ে অংশগ্রহণের জন্য মুখিয়ে থাকাদের জন্য আশীর্বাদ হয়েই অনলাইনের আগমন।

যোগাযোগের সবচাইতে কার্যকর বা ইন্টারঅ্যাক্টিভ মাধ্যম বলতে হবে এটিকেই। সহজ সংযোগ সুবিধার কারণে ব্যবহারকারীদের আগ্রহ রূপ নিয়েছে অভ্যাসে।

খবর এবং বিচিত্র সব উপাদানের পসরা সাজাতে হবে নানা অবস্থানের পাঠক-দর্শকের চাওয়া মাথায় রেখে। ছবির শক্তির কথা বলবার অপেক্ষা রাখে না। শুধু ছবি দিয়েই কত না গল্প বলা সম্ভব! মনে রাখতে হবে, একটি ছবি হাজার শব্দের চেয়েও অর্থপূর্ণ। স্টিল বা ভিডিও ছাড়াও অনলাইনে ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে মজার মজার কার্টুন। অ্যানিমেশন, ইলাস্ট্রেশন ইত্যাদি যোগ করে আরো উপভোগ্য করে তোলা যায় পোর্টাল।

আর মিডিয়ায় ব্যবহৃত দু’ ধরনের শব্দ নিয়েই খেলবার অবারিত সুযোগ অনলাইনেই আছে।

১. লেখা, দেখা ও পড়ার যে শব্দ অর্থাৎ অক্ষরে অক্ষরে তৈরি শব্দ এবং ২. শোনার যে শব্দ অর্থাৎ অডিও বা সাউন্ড

এ দুটোর যুৎসই প্রয়োগের মধ্য দিয়ে পাঠক-দর্শকের কাছে দারুণ আদৃত হয়ে উঠতে পারে অনলাইন মাধ্যম।

তথ্য ও বিনোদনের ঝলমলে এ ভার্চুয়াল জগতের বাসিন্দাদের তুষ্ট রাখতে পোর্টালের কর্মীদেরও হতে হবে সুদক্ষ। চাই অনলাইনের সুবিশাল ক্যানভাস ফুলে ফসলে ভরে দেয়ার মতো পারঙ্গমতা।

এসজেড/ডিএইচ

 

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |