হাতিয়ায় বরই চাষে ভাগ্যবদল অনেকের
থোকাই থোকাই বরই ঝুলছে গাছে গাছে। পরিপক্ব বরই পেড়ে খাচ্ছেন কৌতূহলী দর্শনার্থীরা। ছোট ছোট গাছ হওয়ায় মাটিতে দাঁড়িয়ে বরই পাড়ছেন শিশুরা। কেউ কেউ খেতের মধ্যে দাঁড়িয়ে তুলছেন ছবি। পরিবার পরিজন নিয়ে অনেকে এসেছেন কুল খেতের এই অপরূপ দৃশ্য দেখতে। অনেকে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন বাড়িতে। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষক বরই দিয়ে আপ্যায়ন করছে দর্শনার্থীদের। প্রতিদিনের এই দৃশ্য নোয়াখালী হাতিয়ার চরকৈলাশ গ্রামসহ বিভিন্ন বরইখেতের।
হাতিয়া একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা। এখানে জীবিকার প্রধান মাধ্যম হলো কৃষি। সম্প্রতি গতানুগতিক কৃষি ব্যবস্থাপনা থেকে বেরিয়ে মানুষ বিভিন্ন মাধ্যমে সফল হচ্ছেন। এই বছর তেমনি বরই চাষে সফলতা অনেক কৃষকের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়ে দিয়েছে। মাত্র আট মাস আগে লাগানো গাছের বরই বিক্রি করতে পারায় খুশি চাষিরা। নতুন জাতের বল সুন্দরি বরই এই দ্বীপে তিন বছর হলো পরীক্ষা মূলকভাবে চাষ করছে চাষিরা। এবারই বাণিজ্যিকভাবে অনেকে খেতে চাষ করেছে এই বরই। তবে প্রথম বছর হওয়ায় পুঁজি বেশি লেগেছে। এরপরও ফলন ভালো হওয়ায় লাভ দ্বিগুণ হবে বলে ধারণা চাষিদের।
চরকৈলাশ গ্রামের দুই বন্ধু বেলাল উদ্দিন ও খলিলুর রহমান দুই বন্ধু। দীর্ঘদিন থেকে কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কৃষি অফিসের অনুপ্রেরণায় এবার তারা প্রতিবেশী থেকে অনেকটা পরিত্যক্ত (পানিতে ডুবে থাকে) দুই একর জমি বর্গা নিয়ে এই বরই চাষ করেছেন। উপজেলা সদরের উত্তরে প্রধান সড়কের পাশে হওয়ায় তাদের এই খেত দেখতে হাতিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষজন আসছেন।
আলাপকালে খলিল জানান, দুই বন্ধু দীর্ঘদিন থেকে কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। সম্প্রতি কৃষি অফিসের অনুপ্রেরণায় বরই চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। এই বছরের প্রথম দিক প্রতিবেশী থেকে দুই একর জায়গা নিয়ে বরই চাষ শুরু করেন। সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত একটি জমিতে মাটির সেড তৈরি করে এই বরই চাষ করেন তারা। এই বছর একহাজার দুই শ’ চারা রোপণ করেছেন। কিন্তু ফলন দিচ্ছে প্রায় এক হাজার গাছে।
তিনি আরও জানান, দুই একর জমিতে ফলন দেওয়া পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এক হাজার গাছের প্রতিটিতে ২০ কেজি করে ফলন পাওয়া গেলে মোট ২০ হাজার কেজি কুল পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এই বছর ডিসেম্বর মাস থেকে এই খেতের বরই বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রথম দিকে ১২০ টাকা ধরে বিক্রি হয়েছে। এখন ১০০ টাকা ধরে বিক্রি করা যাচ্ছে। তিনি আশা করছেন এই খেত থেকে ২০ লাখ টাকার বরই বিক্রি করতে পারবেন।
খলিলুর রহমানের খেতে দেখা হয় জমির আলি নামে একজন চাকরিজীবীর সঙ্গে। তিনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বরই খেত দেখতে এসেছেন। জমির আলী জানান, তিনি এসেছেন দুই কন্যাকে নিয়ে। শিশুরা অনেক খুশি। গাছের বরই পেড়ে খেয়েছেন তারা। বাড়ির জন্য কিছু কিনে নেবেন। রাস্তার পাশে হওয়ায় অনেকে এসেছেন তাদের মতো এই খেত দেখতে।
চরঈশ্বর ইউনিয়নের আলী বাজারের পাশে সফল কৃষক খানসাব। বিভিন্ন ফল ও সবজির বিশাল থামারের মালিক তিনি। খানসাব জানান, বল সুন্দরী এই বরই চাষে হাতিয়াতে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। গত বছর অনেকে এই বরই চাষ করেছেন। তাদেরকে দেখা দেখি এই বছর প্রায় শতাধিক কৃষক ছোট ও বড় পরিসরে এই বরই চাষ শুরু করেছেন। তিনি নিজেও প্রায় ১০ শতক জমিতে এই বরই চাষ করে সফলতা পেয়েছেন। ধান চাষে ভালো ফলন হয় না এ ধরনের জমিতে এই বরই ভালো ফলন দেয়। এতে কৃষকের বরই চাষে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল বাছেদ সবুজ বলেন, বল সুন্দরী বরই এই জাতটি উপকূলীয় এলাকায় বেশি চাষ হয়। পরিত্যক্ত জমিতে এই বরই চাষ করা যায়। এখানে কৃষক প্রথম বছর মাটির সেড তৈরিসহ বিভিন্ন কাজে বেশি পুঁজি দিলেও পরের বছর থেকে তা আর লাগবে না। কম সময়ে অল্প পুঁজিতে ভালো লাভবান হওয়া যায়। এজন্য কৃষকদের আমরা বরই চাষে উদ্বুদ্ধ করছি। হাতিয়াতে প্রায় শতাধিক কৃষক এই বরই চাষ করছেন। আমাদের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা প্রতিনিয়ত কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
আরটিভি/এএএ
মন্তব্য করুন