ঢাকাবুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫, ১২ চৈত্র ১৪৩১

সংঘবদ্ধ ধর্ষণে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে হাসপাতালে স্কুলছাত্রী

স্টাফ রিপোর্টার (মানিকগঞ্জ), আরটিভি নিউজ 

মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫ , ০৯:৩৮ পিএম


loading/img
ফাইল ছবি।

মানিকগঞ্জের শিবালয়ে দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক ছাত্রীকে (১৮) ঘরে আটকে রেখে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। তাকে জেলা সদরের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনার পর মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে ছাত্রী। চিকিৎসকরা তাকে রাজধানীর জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

চিকিৎসকরা বলছেন, আটকে রেখে একাধিকবার ধর্ষণ ও ভয়ভীতির কারণে মেয়েটি মানসিক বিকারগ্রস্ত হতে পারে। এমন অবস্থায় যে কেউ মানসিক ভারসাম্যও হারিয়ে ফেলতে পারেন। ভুক্তভোগী মেয়েটি আঘাত সহ্য করতে না পেরে হয়তো মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে।

এ ঘটনায় মেয়েটির ভাই বাদী হয়ে বোনকে অপহরণ করে আটকে রেখে একাধিকবার ধর্ষণের অভিযোগে জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন। মামলায় উপজেলার একটি গ্রামের বাসিন্দা তিন ভাই হৃদয় হোসেন (২৫), জসিম উদ্দিন (৩৩) ও সুজন মিয়াকে (৩০) আসামি করা হয়।

বিজ্ঞাপন

মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, মেয়েটির বাবা নেই। স্থানীয় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসার পথে মেয়েটিকে উত্ত্যক্ত করতো হৃদয় হোসেন। হৃদয় বিবাহিত এবং সন্তান আছে। বোনকে উত্ত্যক্তের বিষয়ে বাদী হৃদয়ের বড় দুই ভাইকে জানালেও তারা কর্ণপাত করেনি। ১৩ মার্চ রাতে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে মেয়েটি ঘরের বাইরে গেলে হৃদয় হোসেন চেতনানাশক ওষুধ ছিটিয়ে তাকে অচেতন করে অজ্ঞাত স্থানের একটি কক্ষে নিয়ে আটকে রাখে। মেয়েটির জ্ঞান ফিরলে একটি কক্ষে দেখতে পেয়ে সে কান্নাকাটি শুরু করে। এ সময় তার গলায় ছুরি ধরে ধর্ষণ করা হয় এবং মোবাইলে ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করা হয়। ওই কক্ষ থেকে পালানোর চেষ্টা করলে হত্যা করে লাশ গুম এবং ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয় হৃদয়। এভাবে এক সপ্তাহ আটকে রেখে ধর্ষণ করা হয়।

১৯ মার্চ দুপুরে হৃদয়ের বড় ভাই জসিম মেয়েটির ভাইকে কল করে বোনকে নিয়ে যেতে বলে। এরপর হৃদয়দের বাড়ি থেকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন স্বজনরা। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে মেয়েটিকে জেলা সদরের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ বিষয়ে ভুক্তভোগীর পরিবার থানা পুলিশকে জানালেও ‘আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে’ বলে কালক্ষেপণ করার অভিযোগ ওঠে। পরে গত রবিবার আদালতে মামলার আবেদন করেন মেয়েটির ভাই।

বাদীপক্ষের আইনজীবী খন্দকার সুজন হোসেন বলেন, স্কুলছাত্রীকে অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগ আমলে নিয়ে শিবালয় থানা-পুলিশকে মামলা হিসেবে রেকর্ড করার নির্দেশ দেন আদালত। পরে আসামি হৃদয়কে গ্রেফতার করা হয়।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) দুপুরে শহরের ওই হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, প্রসূতি ওয়ার্ডের আলাদা একটি কক্ষে মেয়েটিকে তালাবদ্ধ অবস্থা রাখা হয়েছে। মেয়েটির মা ও বোন কক্ষের বাইরে বসে আছেন। তাদের চোখেমুখে অসহায়ত্বের ছাপ। 

মেয়েটির মা বলেন, ‘আমার মেয়ের এত বড় সর্বনাশ করলো। নির্যাতন সইতে না পাইর‍্যা মেয়েডা এহন পাগল হয়্যা গেছে। যারা আমার মেয়েরে নির্যাতন (ধর্ষণ) করছে, ওদের ফাঁসি চাই।’

প্রসূতি ওয়ার্ডের কর্তব্যরত নার্সরা বলেন, মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলায় মেয়েটি পাগলের মতো আচরণ করছে এবং অন্য রোগীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছে। এ কারণে আলাদা কক্ষে তালাবদ্ধ অবস্থায় রাখা হয়েছে।

প্রসূতির ওয়ার্ডের চিকিৎসক রুমা আক্তার বলেন, নির্যাতনের কারণে মেয়েটি মানসিক ভারসাম্য হারাতে পারে। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। 

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা তৌহিদুর রহমান বলেন, মেয়েটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা এখনও হয়নি। যেহেতু মামলা হয়েছে, কাজেই পুলিশই স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য আবেদন করবে। এরপর পরীক্ষা করা হবে।

শিবালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন বলেন, মঙ্গলবার সকালে আসামি হৃদয়কে গ্রেপ্তার করা হয়। অন্য দুই আসামি পালিয়েছে। বুধবার ভুক্তভোগী মেয়েটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে।


আরটিভি/এএএ 

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |