এক কক্ষের পাকা একটি ঘর। তিন পাশে আলমারি। তাতে সাজানো সারি সারি বই। গল্প, উপন্যাস, দর্শন, ধর্ম, সাইন্সফিকশন আলাদা করে ভাগ করে রাখা হয়েছে বিষয় অনুযায়ী। রয়েছে কবিতা, কিশোর সাহিত্য, ইতিহাস, খেলাধুলা, বিজ্ঞান, রাজনীতির বইও। সামনে রাখা লম্বা টেবিলে কয়েকটি কাঠের চেয়ার। সেখানে বসে বইয়ের পাতায় মগ্ন কয়েকজন তরুণ-তরুণী। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের গণপাঠাগারে গিয়ে চোখে পড়ল এমন দৃশ্য।
ইউনিয়ন পরিষদে সেবা নিতে এসে লম্বা সময়ের কারণে অনেকে অলস সময় পার করছেন, কেউ আড্ডা দিচ্ছেন আবার কেউ মোবাইলে মগ্ন রয়েছেন। এমন সেবাগ্রহীতাদের কথা চিন্তা করে এবার লক্ষ্মীপুরের ৩৬টি ইউনিয়ন পরিষদে স্থাপন করা হলো গণপাঠাগার। এতে করে যেমন প্রান্তিক পর্যায়ে জ্ঞানের পরিধি বাড়ছে তেমনই সেবাগ্রহীতারা অলস সময়টিকে কাজে লাগাতে পারছেন। তৃণমূল পর্যায়ে এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন পাঠকরা। তবে শুধু বশিকপুর নয়, লক্ষ্মীপুর জেলার ৫টি উপজেলার ৩৬টি ইউপি কার্যালয়ে গণগ্রন্থাগার স্থাপন করা হয়েছে। লক্ষ্মীপুর জেলা ও উপজেলা প্রশাসন উদ্যোগী হয়ে প্রতিষ্ঠা করেছেন গণগ্রন্থাগারগুলো। এতে যুক্ত হয়েছেন শিক্ষকসহ নানা পেশার মানুষ।
ইউনিয়ন পরিষদের সেবা নিতে আসা কলেজ ছাত্রী বিথী জানান, একটি সনদপত্রের কাজে এসে সার্ভারের সমস্যার কারণে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। তবে লাইব্রেরী থাকায় এখানে বই পড়তে পড়তে সময় কেটে গেলো। সুন্দর ও ব্যতিক্রমী উদ্যোগের জন্য তিনি জেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান।
প্রতিদিন ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে অনেক মানুষ আসে। অনেক সময় লম্বা সারি বা সার্ভার জটিলতার কারণে কাজ বিলম্বিত হয়। এতে করে অনেকে সময় কাটানোর জন্য মোবাইল বা বসে সময় কাটাতো। কিন্তু লাইব্রেরী হওয়ার পর এখানে বসেই তারা বই পড়ে সময় কাটাতে পারেন। তাছাড়া গ্রাম পর্যায়ে পাঠাগার তেমন একটা দেখা যায়না। এই গণপাঠাগার ইতিহাস ঐতিহ্যের সঙ্গে বর্তমানের সেতুবন্ধন করে দিতে পারবে।
জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার জানান, পাঠাগারগুলোকে ঘিরে গ্রামের শিক্ষা, সামাজিকতায় পরিবর্তন হবে। আলোকিত মানুষ হতে হলে বই পড়তে হবে। বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে আমরা এর অভাব বোধ করি। এই পাঠাগার আমাদের নতুন প্রজন্মকে আলো দেবে, আলোকিত করবে। এই চিন্তা থেকে এটিকে স্থায়ী রূপ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি আমরা।
জেলা প্রশাসন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলার ৩৬টি ইউপি কার্যালয়ে পাঠাগার স্থাপন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রতিটি পাঠাগার স্থাপনে প্রায় দুই লাখ টাকা করে ব্যয় ধরা হয়েছে। গত ২১ শে ফেব্রুয়ারি জেলার সদর উপজেলায় ৮টি, রায়পুরে ১০টি, রামগতিতে ৫টি, কমলনগরে ৪টি ও রামগঞ্জ উপজেলায় ৯টি ইউপি কার্যালয়ে পাঠাগার উদ্বোধন করা হয়েছে। বাকি ইউনিয়নগুলোতেও পাঠাগার স্থাপনের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। ইউপি কার্যালয়ে গণপাঠাগার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ লক্ষ্মীপুর জেলাতেই প্রথম।
আরটিভি/এএএ