ঢাকামঙ্গলবার, ১০ জুন ২০২৫, ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ধর্ষণ থেকে বাঁচতে মা’কে (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) চিঠি

আরটিভি অনলাইন রিপোর্ট

শুক্রবার, ১২ মে ২০১৭ , ১১:৩২ পিএম


loading/img

ধর্ষণ থেকে বাঁচতে মা’র কাছে চিঠি লিখেছেন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক ছাত্রী। আর এখানে এই মা হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করুণ এ চিঠিটি এরইমধ্যে ব্যাপক সারা ফেলেছে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে।

বিজ্ঞাপন

নিচে এর হুবহু আরটিভি অনলাইন পাঠকের জন্য দেয়া হলো-

 

বিজ্ঞাপন

 

শ্রদ্ধেয় প্রধানমন্ত্রী,

প্রিয় মা...

বিজ্ঞাপন

আমার সালাম নিবেন।

বিজ্ঞাপন

কেমন আছেন মা?

এই খোলা চিঠি কোনোদিন আপনার কাছে পৌঁছাবে কিনা আমি জানি না!

যদি কোনো দিন, কোনো সময় আপনার দৃষ্টিগোচর হয়- মনের ভেতর সেই তীব্র আশা নিয়ে লেখাটা।

সবাই আপনাকে আপা ডাকে। এটাই হয়তো নিয়ম। নিয়ম ভাঙার জন্য আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

আমি নিজস্বভাবে শুদ্ধ চিন্তায় মা ডাকলাম। মায়ের কাছেই তো মেয়েরা সব থেকে নিরাপদ। মায়ের কাছে যে কথা বলা যায়, যা চাওয়া যায়, পৃথিবীর আর কোথায়ও তা সম্ভব নয়।

মা,

আপনি বিচক্ষণ। যেভাবে আপনি ভাবতে পারেন তার ন্যূনতম কিছু বোঝার ক্ষমতা আমার নাই।

তবে রাজনীতির বাহিরে, দলীয় চিন্তার বাহিরেও তো আপনি কতকিছু করেন!

আমার মতো মেয়ে বাঁচার শেষ আশ্রয় হিসেবে আপনার কাছে সাহায্য চেয়েছে।

কতটা অসহায় হয়ে আমি আপনাকে জানাতে চেয়েছি, আপনার সাহায্য চেয়েছি আপনি অবশ্যই বুঝবেন।

আমি বাঁচতে চাই মা। সুস্থভাবে বাঁচতে চাই।

আপনি হয়তো জানেন না, আমি রোজ বাহিরে বের হবার আগে ভাবি- হলে ফিরে আমার মফস্বলে থাকা দুঃখিনী মায়ের সাথে কি আর একবার কথা বলতে পারবো?

আমার ৫ বছর বয়সের একটা ছোট্ট বোন আছে, আমি ভাবী সে সুস্থ থাকবে তো? বেঁচে থাকবে তো?

কোনো হায়নার দল তার ছোট্ট শরীরে নিজের সুখ মেটাতে তার শরীরটাকে ধারালো ব্লেড দিয়ে ছিড়ে ফেলবে না তো?

আমার ভয় হয় মা। ভীষণ ভয়।

আমি মেয়ে বলে আমার ভয় হয়। আমার একার পক্ষে তো হাজার জনের সাথে যুদ্ধ করা সম্ভব নয়।

ভাবি আমাকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে আমার বাবা আমাকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপিয়ে পড়বে না তো?

আমার মা গলায় সুতির ওড়না বেঁধে সিলিং ফ্যানে ঝুলবে নাতো!

মা,

আপনি সব পারেন। আপনার একটা সই-এ সব হয়!

আপনার মনোবলের দৃঢ়তায় পদ্মা সেতু যেখানে বিশ্বব্যাংককে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তর তর করে এগিয়ে যাচ্ছে, আপনার মনোবলে যেখানে সব যুদ্ধাপরাধীর প্রাপ্য শাস্তি হয়েছে, আপনার বিচক্ষণতায় যেখানে বিশ্বে বাংলাদেশের নাম উজ্জল হচ্ছে, সেখানে আপনার একটু চোখ ফেরানোতেই আমার মতো হাজার হাজার মেয়ে নির্ভয়ে বাঁচতে পারবে! রাতে এটা চিন্তা করে ঘুমুতে হবে না যে, কাল কি আমি কারো শিকার হয়ে যাবো?

রাতে ঘুমের আগে এটা ভাবতে পারবো… আমাদের একজন মমতাময়ী মা আছেন।

মা আছেন তো, কিচ্ছু হবে না। আমাদের মা আমাদের গায়ে ফুলের টোকা লাগতে দিবেন না।

কিছুদিন আগে একটা প্রোগ্রামের জন্য গণভবনে যাবার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। প্রচণ্ড রোদে ৪ ঘণ্টা বসে থেকে সবার কথা শুনে আপনি যখন বলেছিলেন- ‘রোদে তোমাদের খুব কষ্ট হলো। এরপর থেকে শামিয়ানার ব্যবস্থা করা হবে। আজকে তোমরা এখানে খেয়ে যাবে। নিজের বাড়ি মনে করে খাবে’

আপনার এই এক কথায় সব কষ্ট কোথায় চলে গিয়েছিল, খাবারের সময় নিজের বাড়ি মনে করে এক পিস্ রোস্ট বেশি নিয়েছিলাম।

মা বলেছেন নিজের বাড়ি মনে করতে, চোখ ভর্তি পানি নিয়ে আমি অবাক হয়ে আপনার দিকে তাকিয়েছিলাম।

মা গো, সেই আপনার মেয়দের জন্য একটা বার আপনি দৃঢ় হোন। প্লিজ মা...

আপনি দৃঢ় কণ্ঠে একটা ধর্ষককে প্রকাশ্যে শাস্তি দিলে আরো দশটা ধর্ষকের মনোকামনা উড়ে যাবে।

কারণ আপনার কথাই একটা শক্ত আইন।

তারা যেন এটা না ভাবে যে, কোনো শাস্তি নাই, বিচার নাই, যা ইচ্ছা তা করার দেশে ধর্ষণ আমার জৈবিক অধিকার।

বরং তারা যেন এটা ভাবে যে, এসব পেয়েছির দেশে এই অসহায় মেয়েগুলোর একজন চমৎকার মা আছেন। যিনি তার মেয়েদের আগলে রাখেন। এখানে অসংগতিপূর্ণ চিন্তা মস্তিস্কে আনাও বিরাট ভুল!!!

অসম্ভব আশা নিয়ে আমি আপনার কাছে কিছু চেয়েছি, মা আমাদের সুস্থভাবে বাঁচার ব্যবস্থা করে দিন।

আমাকে নির্ভয় করুন।

অনেক কিছু লিখেছি, কোন শব্দের পর কোন শব্দ বসালে আপনার অসম্মান হতে পারে এটা ভেবে শুদ্ধ লিখতে গিয়ে আরো জট পাকিয়ে ফেলেছি। আপনার মনোকষ্টের কারণ হলে আমাকে ক্ষমা করবেন।

মা বলে ডেকেছি, মায়ের কাছে বাঁচতে চেয়েছি। আমি সত্যিই জানি না কোনোদিন আপনি এই চিঠি দেখবেন কিনা। তবে এটা জানি যদি কোনোভাবে আপনি এই চিঠির ব্যাপারে অবগত হতে পারেন, তাহলে অবশ্যই কিছু করবেন।

অসহায় মেয়েকে বাঁচাতে যা লাগে আপনি ব্যবস্থা নিবেন এটাই বিশ্বাস।

ভালো থাকবেন।

 

শুভ কামনা।

ফারহানা লিজা।

রোকেয়া হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

 

সি/

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |