বাংলাদেশে ‘পাঠানে’র মুক্তি নিয়ে ঢাকাই চলচ্চিত্রের তারকাদের প্রতিক্রিয়া
শাহরুখ অভিনীত বলিউডের আলোচিত-সমালোচিত ‘পাঠান’ সিনেমা মুক্তির ব্যাপারে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। দেশীয় হলগুলোতে সাফটা চুক্তির আওতায় বাংলাদেশে মুক্তি দিতে চেয়েছিল ‘অ্যাকশন কাট এন্টারটেইনমেন্ট’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান।
ইতোমধ্যে এই বিষয়ে একটি চিঠিও দেওয়া হয়েছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে। খবরটি প্রকাশ্যে আসতেই শোবিজ তারকাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) ছবিটি মুক্তির বিষয়ে একটি বৈঠকও হয়েছে তথ্য মন্ত্রণালয়ে। তবে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি যে, বাংলাদেশে আদৌ ‘পাঠান’ মুক্তি দেওয়া হবে কি না।
এ প্রসঙ্গে শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক চিত্রনায়িকা নিপুণ বলেন, বাংলাদেশে বলিউডের ছবি 'পাঠান' আসুক। তবে, যারা ছবিটি আনবেন তাদের লাভের ১০ শতাংশ শিল্পী সমিতির ফান্ডে দিতে হবে। আর এই অর্থ শিল্পীদের স্বার্থে তাদের প্রয়োজনে ব্যয় করা হবে।
অভিনেত্রী নিপুণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে, বলিউডের ছবি দেশে আমদানি করলে যদি লাভ হয়, সেক্ষেত্রে মানবিক দিক বিবেচনা করে ১০ শতাংশ দিতে রাজি আছেন বলে জানিয়েছেন প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাশ।
নির্মাতা এস এ হক অলিক জানান, বাংলাদেশে সাফটা চুক্তি অনুযায়ী উপমহাদেশের ছবি মুক্তি দিতে পারে। তবে আগে এটা দেখতে হবে, আমাদের দেশীয় হলগুলো প্রদর্শনের জন্য এখন প্রস্তুত কি না। কারণ, আমাদের হলগুলোতে পেনড্রাইভ দিয়ে ছবি চালায়। আর বলিউডের সিনেমাগুলো বর্তমানে সার্ভারে চলে। তাই আমি মনে করি, আগে দেশীয় হলগুলো আধুনিক হোক, তারপরে উপমহাদেশের ছবিগুলো মুক্তি পাক। এই মুহূর্তে দেশীয় ছবিগুলোর দিকে হল মালিকদের নজর দিলে আশা করছি ভালো কিছু হবে।
ছবিটি মুক্তির বিষয়ে পরিচালক সমিতির সভাপতি ও জনপ্রিয় নির্মাতা কাজী হায়াৎ জানান, বর্তমানে আমাদের দেশীয় ছবিগুলো সারাবিশ্বে মুক্তি পাচ্ছে। যদি আইন অনুযায়ী ‘পাঠান’ মুক্তি দেওয়া যায় তাহলে তো কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না। উপমহাদেশের ছবিগুলো দেশে মুক্তি পেতে পারে। আর এই প্রক্রিয়াটা আমার কাছে খুব স্বাভাবিক বলে মনে হয়।
এদিকে বুধবার (২৫ জানুয়ারি) দেশে ‘পাঠান’ মুক্তি প্রসঙ্গে চিত্রনায়ক জায়েদ খান বলেন, বাংলাদেশে কোনো হিন্দি ছবি মুক্তি দিতে চাইলে ভারতে আমার ছবি, আমাদের সংস্কৃতির ছবি মুক্তি দিতে হবে। আর সেটা না হলে এ দেশে কোনোভাবেই হিন্দি ছবি মুক্তি দেওয়ার পক্ষে না আমি। প্রথম থেকেই দেশে হিন্দি ছবি মুক্তি দেওয়ার পক্ষে ছিলাম না, এখনও নেই। দেশে হিন্দি ছবি আমদানির ফলে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি নেপালের মতো হবে বলে মনে করছেন এই অভিনেতা।
ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় নায়ক ওমর সানী জানান, আমি অভিনয় জগতে আসার পর সিনিয়রদের কাছ থেকে শুনেছি যে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রহমান বাংলাদেশে পাকিস্তানি ও হিন্দি ছবিগুলো প্রদর্শন নিষিদ্ধ করেছেন। সে অনুযায়ী তার কন্যা দেশরত্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তো এই দেশে কোনোভাবে উপমহাদেশের ছবি মুক্তির অনুমতি দিতে পারেন না বলেই আমি মনে করছি।
অভিনয় শিল্পী সংঘের সভাপতি ও অভিনেতা আহসান হাবিব নাসিম জানান, নতুন করে চলতি বছরে দেশে ভালো ভালো ছবি মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। আগে দেশীয় ছবিগুলোকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। সেই সঙ্গে উপমহাদেশের ভালো সিনেমাগুলো মুক্তি দেওয়ারও প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছি আমি। তবে অবশ্যই কোনো অশ্লীল ছবি মুক্তি দেওয়া হোক, সেটা আমি কখনই চাই না। কারণ, এতে আমরা আবারও আমাদের দর্শক হারাবো।
এদিকে নতুন শিল্পীদের ভবিষ্যৎ এর কথা ভেবে রুবেল জানান, আমাদের বাজেট আর মুম্বাইয়ের বাজেট অনেক পার্থক্য। স্বাভাবিকভাবে দর্শক ভালোটা দেখলে সেটাই দেখতে চাইবে। এতে ধীরে ধীরে আমাদের ছবিগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। এ ছাড়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কখনও চাননি উপমহাদেশের ছবিগুলো দেশে চলুক। বঙ্গবন্ধুর সেই কথা উপেক্ষা করে কীভাবে মুম্বাইয়ের সিনেমা মুক্তির কথা ভাবি আমরা! এটা ভেবে খুবই অবাক লাগছে। তাহলে কি বঙ্গবন্ধুর কথাগুলো ভুলে যাচ্ছি আমরা ? আমি এর বিরোধীতা আগেও করেছি, এখনও করছি।
মন্তব্য করুন