এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে ব্যান্ডের নাম, যা বললেন ব্যান্ড সদস্যরা
এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়েছে রোববার (১জুলাই)। বাংলা (আবশ্যিক) প্রথমপত্রের মধ্যদিয়ে শুরু হয় ২০২৪ সালের পরীক্ষা। এবার লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র নিয়ে নেটদুনিয়ায় চলতে তুমুল আলোচনা! কারণ, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্রগুলো সাজানো হয়েছে বাংলা ব্যান্ডের নামে, যা এখন রীতিমত ভাইরাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
ভাইরাল হওয়া ছবিগুলোতে দেখা যায়, এইচএসসির ঢাকা বোর্ডের প্রশ্ন কোড ছিল ক্যাকটাস, রাজশাহী বোর্ডে লালন, চট্টগ্রাম বোর্ডে মাইলস, ময়মনসিংহ বোর্ডে পরশপাথর, কুমিল্লা বোর্ডে পেন্টাগন, বরিশাল বোর্ডে অবসকিউর, যশোর বোর্ডে প্রমিথিউস ও দিনাজপুর বোর্ডের প্রশ্নে মেঘদল ব্যান্ডের নাম!
এ ছাড়াও বিভিন্ন বোর্ডের লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নেপত্রে ওয়ারফেজ, অ্যাশেস, আভাস, চিরকুট ও ফিডব্যাক ব্যান্ডের নামও দেখা গেছে, যা নজরে এসেছে সংশ্লিষ্ট ব্যান্ডগুলোর সদস্যদেরও। এসব প্রশ্নপত্র শেয়ারও করছেন তারা।
এর মধ্যে মেঘদল ব্যান্ডের দলনেতা ও ভোকাল শিবু কুমার শীল প্রশ্নপত্রগুলো শেয়ার করে লিখেছেন, ২০২৪ এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন কোডে ‘মেঘদল’! বেশ মজা পেলাম ব্যাপারটায়। আরো অনেক ব্যান্ডের নাম ব্যবহৃত হয়েছে প্রশ্নকোডে।
অ্যাশেজ ব্যান্ডের দলনেতা ও ভোকাল জুনায়েদ ইভান লিখেছেন, ২০২৪ এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন কোড সাজানো হয়েছে বাংলা ব্যান্ডের নামকরণ দিয়ে। এবার প্রশ্নের সেট সাজানো হয়েছে অ্যাশেজ, মাইলস, ওয়ারফেজ, চিরকুট, লালন, আভাস, অবসকিউর ব্যান্ডের নাম দিয়ে। নিশ্চয়ই বাংলা ব্যান্ডের জন্য এ উদ্যোগ মাইলফলক হয়ে থাকবে।
এদিকে মাইলস ব্যান্ডের সদস্য হামিন আহমেদ ফেসবুকে প্রশ্নপত্র পোস্ট করে বিষয়টিকে চমৎকার বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি দেশের একটি গণমাধ্যমকে বলেন, আমি তো জানতাম না। ভক্তরা পোস্ট করে ট্যাগ করেছে। কেউ কেউ জানতেও চেয়েছে, হামিন ভাই, দেখছেন এটা? আমি দেখে প্রথমে ভাবলাম, কেউ হয়তো বানিয়ে করছে। অনেকে আবার এমনও মন্তব্য করছে, আমি মাইলস সেটের প্রশ্নপত্র দিয়ে পরীক্ষা দিয়ে এলাম!
হামিন আহমেদ বলেন, ব্যান্ডের একটা দারুণ বিপ্লব ঘটেছে। ব্যান্ড থেকে যে গানগুলো হয়েছে, সারা পৃথিবীতে ব্যান্ডদল যে পারফর্ম করে বেড়াচ্ছে, এটার একটাই কারণ মানুষের জীবনের সঙ্গে ব্যান্ডের এই গানগুলো মিশে আছে। গানগুলো সত্যিই ভালো গান। মানুষ কখনো ব্যান্ডের এই গানগুলো ছেড়ে যাবে না। এই যে গানগুলো থেকে ব্যান্ডের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা, তা সত্যিই অতুলনীয়। বিষয়টা হচ্ছে, আমরা তো ব্যান্ডের সবাই বাংলাদেশ ও বাঙালির রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে আছি। তারুণ্যকে উদ্দীপ্ত করছি। যে ভদ্রলোক প্রশ্নপত্র তৈরিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত, তার অনুভূতি কতটা গভীর হলে যেখানে নদীর নাম বা ফুলের নাম ব্যবহার করা হতো, সেখানে ব্যান্ডের নামে প্রশ্নপত্রের সেটের নাম দিয়েছেন! তিনি কিন্তু একটা স্টেটমেন্ট দিয়েছেন, যেটা এমন—ব্যান্ডের নামটাও এভাবে উচ্চারিত হওয়া উচিত। অবশ্যই এটা প্রশংসার দাবিদার।
এমন ঘটনায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের রক মিউজিক গবেষক গৌতম কে শুভ। দীর্ঘ এক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, যেই দেশে আগে সরাসরি ব্যান্ডসংগীতকে অপসংস্কৃতি বলা হতো। এখনো মুরুব্বীরা বাঁকা চোখেই দেখেন এই ব্যান্ড মিউজিক কালচারকে। স্বাধীনতার পর গুরু আজম খান যখন পাড়া-মহল্লা কাঁপায়ে টিভিতে সবে ঢুকেছে তখন রটিয়ে দেওয়া হলো তিনি নাকি পোলাপানদের নষ্ট বানাচ্ছেন। আশির দশকেও অনেক টিপন্নি শুনতে হয়েছে ব্যান্ড মিউজিককে। আর উত্তাল নব্বইয়েও কম কথা শুনতে হয়নি তথাকথিত সুশীল সমাজের। এখন সেই দেশের এইচএসসি পরীক্ষার মত গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের কোডনাম।
তিনি আরও বলেন, সবচেয়ে অবাক হয়েছি পশ্চিমবাংলার পরশপাথর, দোহার, ক্যাকটাস, নিওন এর নাম দেখে! যিনি এই নামকরণ প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিলেন তিনি কলকাতার ‘পরশপাথর’ ব্যান্ডও শুনেছেন। এক সময়ের কলকাতায় মোটামুটি জনপ্রিয় এই ব্যান্ডের গান শুনেছেন এমন লোক তো বাংলাদেশে খুবই কম। আমাদের এই প্রজন্ম তো এই ব্যান্ডটার নামই জানে না, এমনকি পশ্চিমবাংলার এই প্রজন্মও। সবচেয়ে সবচেয়ে সবচেয়ে ভয়ংকর চমৎকার ব্যাপারে ‘নিওন’ নামে একটি কলকাতার ব্যান্ডের নামও লিখেছে এরা। এই ব্যান্ডের কোনো রিলিজড গান নেই যতদূর জানি। লাইভ কনসার্টে ছিল। এই ব্যান্ডও শুনেছে! কীভাবে! অনুমান করছি, বোর্ডের প্রশ্নপত্রের নামকরণ করা লোকটি নব্বই দশকে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছিলেন; ছিলেন বাংলা ব্যান্ডের ফ্যান। এখনও যিনি ব্যান্ড শোনেন।
মন্তব্য করুন